ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃঢ় নেতৃত্বের অভাবে হুমকি মোকাবেলায় নাজুক ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২ জানুয়ারি ২০১৭

দৃঢ় নেতৃত্বের অভাবে হুমকি  মোকাবেলায় নাজুক ইউরোপ

ইউরোপ সন্ত্রাসী হামলার হুমকি মোকাবেলা নিয়ে খুবই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের দোরগোড়া থেকে ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক বিভাজন, জনগণের হতাশা, অর্থনৈতিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের অভাব ও তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতার মিলিতভাবে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে স্বতন্ত্র অরক্ষিত করে তুলেছে। আর ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। তারা জানে যে, সময়োপযোগী হামলায় রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করা এবং মানুষের ভয়কে কাজে লাগানো যায়। খবর গার্ডিয়ানের। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে হামলার হুমকি রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। ফ্রান্সের নিস শহরে জুলাই মাসে বাস্তিল দিবসে ট্রাক হামলার মতো ‘একাকী হামলা’ এ সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। আর এটি এখনও পরিষ্কার নয়, বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে লরি হামলার চালক কি একাই এ কাজ করেছে এবং তার উদ্দেশ্য কি ছিল। বার্লিন হামলার মতো হামলা যে কোন স্থানে হতে পারে এবং বলতে গেলে হয়েছিলও। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমের লুদউইগশাফেন শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে ১২ বছর বয়সী জার্মান-ইরাকী বালককে দিয়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয় পুলিশ। এছাড়া গত মাসে ফরাসী পুলিশ প্যারিসের এক ক্রিসমাস মার্কেটে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। সন্ত্রাসী হামলার কারণে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলও রাজনৈতিক সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি। উন্মুক্ত অভিবাসন নীতির গ্রহণের কারণে তার ক্ষমতাসীন জোটের ভিতর ভিন্নমত এবং জার্মানির বর্ণবাদী ও উগ্রস্বাদেশিকতাবাদী ছোট দলগুলোর ক্ষোভ মেরকেলকে রাজনৈতিকভাবে ডানপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে তাহলে আগামী শরতে তার পুনর্নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। আগামী বসন্তে অনুষ্ঠেয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ চরম ডানপন্থী ফ্রন্ট ন্যাশনাল পার্টির নেতা মেরি লা পেন অনেক ভাল করবেন বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছ। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ফান্সে যদি নতুন কোন হামলা হয়, তাহলে নির্বাচনে সমর্থন লা পেনের দিকেই যাবে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে নেদারল্যান্ডসেও। দেশটিতে মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামবিদ্বেষী চরমপন্থী গির্ট ওয়াইল্ডার্স বর্তমান জরিপগুলোতে এগিয়ে রয়েছেন। সন্ত্রাসীদের কৌশল বোঝা জটিল কোন বিষয় নয়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও তাদের ইউরোপভিত্তিক সমর্থকরা মানুষের ভয় ও তাদের রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর অক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সময়বুঝে হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত রয়েছে। মেরকেলকে ছাড়া, শক্তিশালী ও নির্ভরশীল নেতার অভাব ইউরোপকে আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ অন্তত ভাল একজন প্রেসিডেন্ট। ইতালির সংস্কারপন্থী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। কে নেতৃত্ব দেবে এ বিষয়ে সম্মত হতে স্পেনকে অসমর্থ মনে হয় এবং ব্রিটেনের তেরেসা মে কোন ভোট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সিরিয়া ও ইরাকে চাপে থাকা আইএস প্রকাশ্যে ইউরোপের মূল ভূখ-ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে। আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেও বেশি সহায়তা আশা করতে পারে না ইউরোপ। তাই এটি অনিশ্চিত যে, এ সমস্যা মোকাবেলায় ইউরোপ পেরে উঠবে কিনা।
×