ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ জানুয়ারি ২০১৭

নতুন বছরে বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, নতুন বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। তিনি বলেন, আমরা ২০১৬ সালে একটা ভাল বছর পার করেছি। আশা করছি, ২০১৭ সালও একইভাবে ভাল কাটবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য যেসব হিসাব করা হয়েছে, সেটা পেরিয়ে আমরা অনেক দূর যেতে পারব। তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে সরকার। নতুন বছরে গ্রামীণ ব্যাংক আরও পুনরুজ্জীবিত হবে। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমানের নেতৃত্বে বিভাগের কর্মকর্তারা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে খ্রিস্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। মন্ত্রী কর্মকর্তাদের আনা দুটি কেকও কাটেন। এক সাংবাদিক নতুন বছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ? হ্যাঁ সেটা তো বিনিয়োগ। প্রসঙ্গত বছরজুড়ে দারিদ্র্যবিমোচন, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি থাকলেও ২০১৬ সালে বেসরকারী খাতে আশানুরূপ বিনিয়োগ টানতে পারেনি সরকার। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারী বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারী খাতেও বিনিয়োগে গতি আসে। কিন্তু গত পাঁচ বছর সরকারী বিনিয়োগ ব্যাপক বাড়লেও বেসরকারী বিনিয়োগ জিডিপির ২২ শতাংশের ঘরেই আটকে আছে। বাড়ছে না বিদেশী বিনিয়োগও। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগে বাধার কারণে অনেকে বিনিয়োগ প্রকল্প হাতে নিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছেন। তার সঙ্গে রয়েছে অনুন্নত অবকাঠামো ও ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা প্রস্তুতি আছে, তাতে আমরা এগিয়ে যাব। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য যেসব হিসাব করেছি, সেটা পেরিয়ে আমরা অনেক দূর যেতে পারব। বেসরকারী খাতে পিছিয়ে থাকলেও সরকারী খাতে বেশ কিছু বড় বিনিয়োগ রয়েছে ২০১৬ সালে। বছর শেষে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে অর্ধেক শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে আশা করছে সরকার। এছাড়া আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। মূল ধারায় ফিরে আসবে গ্রামীণ ব্যাংক ॥ ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে পুনরুজ্জীবিত করে ব্যাংকিং সিস্টেমের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের নামে চলা মামলাগুলোর যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি যখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেই তখন গ্রামীণ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৪০ শতাংশ। এখন এই হার ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সহনীয়। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হলো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ দেয়া এবং তাদের ঋণ ফেরত দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এখন এটি শতভাগ সফল। মানুষ ঋণ নেয় এবং তা ফেরতও দেয়। তাই গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি নতুন করে ভূমিকা সৃষ্টি করতে চাই। বছর শেষ ও নতুন বছর উদ্যাপন করতে না পারার হতাশা প্রকাশ করে মুহিত বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা ইয়ার এন্ডিং উদ্যাপন করতে পারি না। গত রাত (শনিবার) সাড়ে আটটার দিকে মনে হয়েছে শহর যেন মৃত। মানুষ ঘরে চলে গেছে। গাড়ি ঘোড়া চলছে না। নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু সেটিকে কাটিয়ে উঠে আমরা যদি সফলভাবে বছর উদ্যাপন করতে পারতাম তবে ভাল হতো। বর্ষবরণ প্রথা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইংরেজী বছরকে আমরা তেমন গুরুত্ব দেই না। অর্থনীতিতে আমরা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ফলো করি। এটা খারাপ না। তবে, আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারও অনেক ভাল। নতুন বই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন বইয়ের গন্ধই আলাদা, উফ! অসাধারণ। কোমলমতি শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার পর ওদের যে আনন্দ উচ্ছ্বাস তা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। বিনামূল্যে বই বিতরণ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে আমরা যখন বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেছিলাম তখন একটি আর্থিক চাপ ছিল। কিন্তু এখন বই উৎসবের যে আনন্দ তার কাছে ওই চাপ কিছুই না।
×