ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২ জানুয়ারি ২০১৭

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজমনস্ক সব্যসাচী লেখক শওকত ওসমান। তাঁর সাহিত্য রচনায় বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের নানা মাধ্যমে বলেছেন সম্প্রীতির কথা। ধিক্কার জানিয়েছেন মৌলবাদকে। কলমকে হাতিয়ার করে শোষকের বিপক্ষে আর শোষিতের পক্ষে লিখে গেছেন আমৃত্যু। আজ সোমবার স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ বরেণ্য এই কথাশিল্পীর জন্মশতবর্ষ। ১৯১৭ সলের ২ জানুয়ারি তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার খানকুল থানার সবলসিংহপুর গ্রামে জন্ম নেন। শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হবে এই বহুমাত্রিক লেখককে। শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট লেখক, রবীন্দ্র গবেষক ও প্রবন্ধকার আহমদ রফিক। উদ্বোধনী পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আন্দালিব রাশদী। আলোচনায় অংশ নেবেন ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, হায়দার আকবর খান রনো, শিল্পী রফিকুন নবী ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এরপর বিকেল ৪টায় শুরু হবে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে শওকত ওসমানের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং এ্যাপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। সন্ধ্যায় থাকবে সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা করবেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক এমিরেটাস ড. আনিসুজ্জামান, উদীচীর সাবেক সভাপতি ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, শিল্পী হাসেম খান এবং সেলিনা হোসেন। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায়ও থাকবে সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন জাতীয় কমিটি। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বিশেষ অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী। আলোচনা করবেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর প্রমুখ। পিতৃস্মৃতিচারণ করবেন অধ্যাপক বুলবন ওসমান। শওকত ওসমান স্মরণে নিবেদিত কবিতা পাঠ করবেন কবি কাজী রোজী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, অসীম সাহা আসলাম সানী প্রমুখ। বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালীদের একজন। মূলত উপন্যাস ও গল্পের মাধ্যমে পাঠকের মনে বোধ সৃষ্টির পাশাপাশি সমৃদ্ধ করেছেন এদেশের সাহিত্য ভুবনকে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী এই মানুষটি আজন্ম শোষকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন শোষিতের কথা। শুধু তাই নয়, আজীবন সংগ্রাম করেছেন দেশদ্রোহী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে। তাঁর রচিত উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি আজও যে কোন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণজাগরণের দিশারী। তাঁর বহুল আলোচিত ও সমাদৃত জননী উপন্যাসটি ইংরেজী ভাষায় অনূদিত হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যে। শওকত ওসমান প্রধানত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতি কুড়ান। তবে এর বাইরেও প্রবন্ধ, নাটক, রম্য রচনা, স্মৃতিকথা ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনায়ও রেখেছেন মুনশিয়ানার ছাপ। অনুবাদেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য উপন্যাস, গল্প ও নাটক অনুবাদ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলোÑ জননী, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, চৌরসন্ধি, রাজা উপাখ্যান, জাহান্নাম হইতে বিদায়, রাজপুরুষ, নেকড়ে অরণ্য, আর্তনাদ ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, মনিব ও তাহার কুকুর, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি। লিখেছেন স্মৃতিকথা। এগুলো হলোÑ স্বজন সংগ্রাম, কালরাত্রির খ-চিত্র, অনেক কথন, গুডবাই জাস্টিস-মাসুদ, উত্তর পূর্ব ও মুজিবনগর। নাটকের মধ্যে রয়েছে আমলার মামলা ও পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা। সৃষ্টিশীলতার নেশায় সব সময় নিজেকে বিভোর রেখেছিলেন শওকত ওসমান। সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরমেন্স পদক, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। পারিবারিকভাবে শেখ আজিজুর রহমান নাম রাখা হলেও পরবর্তীতে সাহিত্য ভুবনে শওকত ওসমান নামে পরিচিত হন তিনি। বাবা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও মা গুলজান বেগম। ১৯৩৮ সালে সালেহা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁর পাঁচ ছেলে হলেন বুলবন ওসমান, আশফাক ওসমান, ইয়াফেস ওসমান, তুরহান ওসমান (প্রয়াত), জাঁ-নেসার ওসমান ও এক মেয়ে আনফিসা আসগর। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের প্রভাষক ও ঢাকা কলেজে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত কথিকা পাঠ করেছেন। ১৯৮৮ সালের ১৪ মে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন শওকত ওসমান। জীবন ও মৃত্যুর মাঝের দীর্ঘ সময় বিচরণ করেছেন সাহিত্যে আঙিনায়। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ভা-ারকে।
×