ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার জন্য সুচির বিশেষ দূত আসছেন এ মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২ জানুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার জন্য সুচির বিশেষ দূত আসছেন এ মাসেই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আলোচনার লক্ষ্যে চলতি মাসেই মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি একজন বিশেষ দূত ঢাকায় পাঠাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও মিয়ানমারের বিশেষ দূত এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান এক বৈঠকে এসব আলোচনা করেছেন। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিমের সঙ্গে এক বৈঠক করেন মিয়ানমারের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আলোচনার জন্য খুব শীঘ্রই মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি একজন বিশেষ দূত ঢাকায় পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ দূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। সেজন্য তিনি সফরের দিন তারিখ নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আলোচনার পর তারিখ নির্ধারণ করে মিয়ানমারকে জানানো হবে। সে অনুযায়ী এই সফর চূড়ান্ত হবে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আলোচনার লক্ষ্যে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি বাংলাদেশে একজন বিশেষ দূত পাঠাতে আগ্রহী। তখন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে তলবের পর দুটি প্রতিবাদ পত্র তুলে দেয়া হয়। গত ৯ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে বলে তাকে জানানো হয়। এসব নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলেও জানানো হয়। সে সময় মিউ মিন্ট থান জানান মিয়ানমারের নেত্রী সুচি এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে একজন বিশেষ দূত পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত বছর ২৯ জুন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিল আউং সান সুচির কাছে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক মিয়ানমারে আউং সান সুচির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠিও হস্তান্তর করেন এম শহীদুল হক। তিনি সে সময় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লায়েং ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি ইউ অং লেইলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বার্তা পৌঁছে দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা নোবেলজয়ী সুচির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই তার দল এ বছরের শুরুতে ক্ষমতায় আসে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচির সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও উঠেছে। এর আগে ২০১২ সালেও রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। সেবার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায় রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে বসবাস করে আসছিল। মিয়ানমার সীমান্তে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেরই ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বসতভিটা ছেড়ে সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। এখনও অনেকেই বাংলাদেশে আসার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছেন। এ অবস্থার মধ্যেই ঢাকায় বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন আউং সান সুচি।
×