ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দশ প্রকাশনীর আয়োজনে নববর্ষের বই উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ জানুয়ারি ২০১৭

দশ প্রকাশনীর আয়োজনে নববর্ষের বই উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন বছর ২০১৭ সালের প্রথম দিন ছিল রবিবার। এদিন বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিটি হয়ে ওঠে ছোট্ট একটা বইমেলার আঙ্গিনা। প্রশস্ত প্রদর্শনালয়টির চারপাশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিচিত্র সব বিষয়ের বই। টেবিলে টেবিলে শোভা পাচ্ছে পাঠকের মনকাড়া গল্প-উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গুণীজনদের আত্মজীবনী কিংবা মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের গ্রন্থ। আর এমন গ্রন্থসম্ভারে নতুন বছরের প্রথম দিনে দশ প্রকাশনীর সম্মিলিত আয়োজনে শুরু হলো নববর্ষের বই উৎসব। পৌষের বিকেলে ১২ দিনব্যাপী এ বই উৎসবের সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট কূটনীতিক ও লেখক মোহাম্মদ জমির, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহসান সাইয়েদ, লেখক আন্দালিব রাশদী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ জাকির হোসাইন। উদ্বোধনী বক্তব্যে দেশব্যাপী বই পড়া আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতি জেলার গণগ্রন্থাগারগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এর মাধ্যমে বই পড়া আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশব্যাপী। নববর্ষের এ বইয়ের উৎসব প্রসঙ্গে বলেন, দশটি প্রকাশনীর সম্মিলিত প্রয়াসে এ ধরনের গ্রন্থমেলার আয়োজন আমাদের জন্য ইতিবাচক। অমর একুশের গ্রন্থমেলার পাশাপাশি এ রকম বইমেলার আয়োজনের ফলে সহজেই পাঠকের হাতে পৌঁছে যাবে বই। বাড়বে বইয়ের চাহিদা। দেশের মানুষের মধ্যে বাড়বে বইয়ের সমাদর। উৎসবে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থাগুলো হলো ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), এ্যাডর্ন পাবলিকেশন, কথাপ্রকাশ, জাগৃতি প্রকাশনী, নিমফিয়া পাবলিকেশন্স, পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, প্রথমা প্রকাশন ও ডেইলি স্টার বুকস। উৎসবের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে বই সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা। ১২ দিনের এ বই উৎসব চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবেন। বুলবুল চৌধুরীর জন্মদিন উদযাপন ॥ দেশের নৃত্যশিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নৃত্যগুরু বুলবুল চৌধুরীর নামটি। এদেশের নৃত্যশিল্পকে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে দিয়েছেন আপন প্রয়াসে। বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শাস্ত্রীয় নাচকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার গুরুদায়িত্বও পালন করেছিলেন নিবেদত প্রাণ এই নৃত্যজন। রবিবার ছিল বুলবুল চৌধুরীর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। আলোচনাসভা, সম্মাননা প্রদান ও নৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নৃত্যগুরুর জন্মদিন উদ্্যাপন করেছে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নৃত্যব্যক্তিত্ব আব্দুল মতিনকে বুলবুল চৌধুরী সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে জন্মজয়ন্তীর এ আয়োজনে বুলবুল চৌধুরী জীবনাদর্শ ও নাচ নিয়ে তার ভালবাসা ও ভাললাগার কথা তুলে ধরেন বিশিষ্টজনরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক ও সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। জন্মজয়ন্তীর এ আয়োজনে বুলবুল চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার উপদেষ্টা রাহিজা খানম ঝুনু, লায়লা হাসান, সংস্থার সহ-সভাপতি দীপা খন্দকার, নির্বাহী সদস্য সাজু আহমেদ। সম্মিলিতভাবে অতিথিদের মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়েই এই আয়োজনের সূচনা ঘটে। শুভেচ্ছা বাণীতে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি দেশের স্বনামধন্য একটি সাংস্কৃতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রক্ষণশীল সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই একাডেমি থেকেই এদেশের সব প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীরা প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। নৃত্যশিল্পীরাই যে, দেশের নৃত্যচর্চার পথ প্রদর্শককে স্মরণ করছে এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। পথ প্রদর্শককে ভুলতে নেই। কারণ গুরুর প্রদর্শিত পথেই এগিয়ে চলচে আমাদের নৃত্যাঙ্গন। জাতীয় এই নৃত্যশিল্পীকে স্মরণ করাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান শেষে নৃত্যশিল্পী সংস্থার অধিভুক্ত বিভিন্ন নাচের সংগঠন মুদ্রার তালে, লয়ে, ছন্দে নৃত্যগুরু বুলবুল চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়। ‘লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন’ ॥ অপ্রত্যাশিত ভ্রƒণের অস্তিত্বে আলোড়িত এক মাতৃসত্তা। ধীরে ধীরে প্রাণের মাঝে আরেক প্রাণ অনুভূত হয়। বৈধ অবৈধতার প্রশ্নে সমাজ কাঠামো কিংবা সভ্যতা তখন বড় বেশি অসভ্যরূপে দৃশ্যমান হয়। এমন গল্প নিয়ে বুয়েট ড্রামা সোসাইটি মঞ্চায়ন করেছে তাদের ১৪তম নতুন প্রযোজনা ‘লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন’। ইতালিয়ান লেখক ওরিয়ানা ফালাচ্চির গল্প অবলম্বনে শাহেদ ইকবাল অনুদিত নাট্যরূপে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন বাকার বকুল। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকী মঞ্চস্থ হয়। নিয়মের লৌহ ছাঁচের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক অনাগত ভ্রƒণের সঙ্গে কথা হয় মায়ের। মায়ের উপর মনুষ্যাকৃতি নিতে থাকে ভ্রƒণটি। একজন মা বড় বেশি একা হতে থাকে। অনাগত প্রাণটিকে পৃথিবীতে প্রকাশ করতে দৃঢ় চিত্তে অঙ্গীকারাবদ্ধ সে। কিন্তু ক্রমেই নিঃসঙ্গ থেকে নিঃসঙ্গ হতে থাকে। একাকীত্বের লড়াইয়ে ক্লান্ত হতে হতে উদরশূন্য মায়ের আহাজারি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আসমান-জমিনে। সম্পর্কের বেড়াজালের টানাপোড়েন ও সমাজ-সভ্যতার নানা নিয়ম অনিয়মের বেড়াজালেই আবদ্ধ ছিল ‘লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন’ নাটকটির কাহিনী। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোমা রায়, আনিকা অনিন্দিতা আলমগীর, নুসরাত জাহান নিশাত, মাসুদ জাভেদ জিমি, ইশতিয়াক হোসেন, দিব্যাঙ্গনাকর মৌ, পার্থ সারথি সরকার, ফাহিম ফয়সাল খান, প্রেম, অভিষেক, তুরাগ প্রমুখ।
×