ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেপাল-ভুটানে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ

সই হতে যাচ্ছে নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুত সমঝোতা স্মারক

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২ জানুয়ারি ২০১৭

সই হতে যাচ্ছে নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুত সমঝোতা স্মারক

রশিদ মামুন ॥ জলবিদ্যুত উৎপাদনে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেই নেপাল সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের এমওইউটি সই হবে। এজন্য সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের জানুয়ারির শেষ দিকে নেপাল যাওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত মাসের শুরুর দিকে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্ধন শর্মা ঢাকা সফরে আসেন। ওই বৈঠকে নেপাল-বাংলাদেশ জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এর পর দুই দেশের বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগ এমওইউটি চূড়ান্ত করে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ভারতকেও এ এমওইউতে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু নেপাল বলেছে এমওইউটি এককভাবে তাদের সঙ্গেই করতে হবে। ভারতের সঙ্গে নেপালের পৃথক এমওইউ রয়েছে। নেপাল দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করছে বলে জানান তিনি। দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। জলবিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণপ্রাপ্তিও সহজ। সরকার এক বিলিয়ন ডলার নিজেদের মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করলে অন্তত সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, নেপালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রে নেপাল এবং বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা থাকবে। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে একই পদ্ধতি নেপালের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের আগামী ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি নেপাল সফরের কথা রয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নেপালের জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, এর মধ্য দিয়ে আমরা নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও বিদ্যুত আমাদনির চেষ্টা করছে। ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এসব দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। এজন্য ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ দেশটির ওপর দিয়েই বিদ্যুত আনতে হবে। ভারত এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজি আছে বলে জানান তিনি। এমওইউ সই হওয়ার পর ভারতের মতো নেপালের সঙ্গে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। ফলে দেশটির বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। নেপালে জিএমআর নামে ভারতীয় একটি কোম্পানি জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে। তারা বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে সরকারকে। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পাানি এনভিভিএন নেপাল থেকে ৫০০ হতে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রি করতে আগ্রহী। এজন্য বাংলাদেশ সরকার অথবা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত বিক্রয় চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপাল এবং ভুটানের উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে আরও ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে, যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে। নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র করা হবে, প্রয়োজনে তৃতীয় কোন অভিজ্ঞ কোম্পানি থাকবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে। বিদ্যুতের একটি অংশ বাংলাদেশ পাবে।
×