ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব শর্মা

বিদায় ২০১৬ সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১ জানুয়ারি ২০১৭

বিদায় ২০১৬ সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

কালকের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিল ২০১৬ সাল। মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। গতকাল গত হয়ে যাওয়া বছরটি বিভিন্ন কারণে ছিল আলোচিত। নানা ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হওয়া সালটি প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির বিচারে যতটা না অমলীন থাকবে কালের ক্যানভাসে তার চেয়ে অধিক থাকবে অকাল বিয়োগান্তের ঘটনা প্রবাহে। ভালো আর মন্দ, সাফল্য আর ব্যর্থতা যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে ২০১৬ সালে। কখনও সাফল্যের খবরে উদ্ভাসিত হয়েছি আমরা কখনওবা বেদনাগাথায় হয়েছি নীল। আনন্দ সংবাদে যতটা না আত্মহারা হয়েছি, তার চেয়ে বেশি হতবাক হয়েছি নৃশংসতায়। দেশজুড়ে ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার পর সংগঠিত হলি আর্টিজানের ঘটনা যখন হতাশার চোরাবালিতে প্রায় নিমজ্জিত করে ফেলতে চেয়েছিল আমাদের, ঠিক তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃঢ়তায় একের পর এক পরিচালিত অভিযানে কেটে যেতে থাকে অমানিশার সেই কালো আধার। সব সংশয়ের কালো মেঘ উড়িয়ে দিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আবারও জয়ী হই আমরা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দেশের মানুষ। তবে, উদ্বেগ-আতঙ্ক সত্ত্বেও উন্নয়নের চাকা ঠিকই গতিশীল ছিল বছরজুড়ে। ভিশন ২০২১ অর্জনের পথেই অগ্রসর হয়েছি আমরা। ২০১৬ সালের সবচেয়ে বড় অর্জন চীনের সঙ্গে চুক্তি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘অভূতপূর্ব’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সফরে প্রত্যাশার চেয়েও প্রাপ্তি ছিল বেশি। সরকারী- বেসরকারী অর্ধশত চুক্তি, ঋণ চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সফরে মোট ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। যাকে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ঋণের ‘রেকর্ড’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই ঋণের বেশিরভাগই ব্যয় হবে অবকাঠামো খাতে। এর মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথ প্রশস্ত হয়েছে। যা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে গত বছর অর্জিত হয়েছে যুগান্তকারী সাফল্য। ২ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন মহাসড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। যার ফলে এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছা যায় মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায়। আর জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পৌঁছতে লাগে এক ঘণ্টা। ১৯২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। চারলেনের পর আটলেন সড়কের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ১১ আগস্ট যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেনের জাতীয় মহাসড়কে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর আটলেন মহাসড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এবং ঢাকা সিলেট জাতীয় মহাসড়কটি প্রবেশ-বর্হিগমনের প্রধান করিডর। আগে এখানে দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় হতো ঢাকামুখী ও ঢাকা ফেরত মানুষদের। এখন আর সেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় না যাতায়াতকারীদের। যোগাযোগ খাতে আরও দুটি বড় প্রকল্প নির্মাণের যাত্রা শুরু করেছে ২৬ জুন। যানজটে জ্বলে-পুড়ে যাওয়া নগর জীবনে স্বস্তি দিতে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন পাড়ি দিয়ে উত্তরা হতে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি রুটে স্টেশন থাকবে ১৫টি। নির্দিষ্ট লেনে চলবে ১২০টি আর্টিকুলেটেড বাস। বাগেরহাটের রামপালে ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতার ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুতকেন্দ্র’ নির্মাণের লক্ষ্যে ১২ জুলাই ২০১৬ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়া কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (ইওঋচঈখ) এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (ইঐঊখ)। এই প্রকল্পের মালিকানায় রয়েছে যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারত ৫০ : ৫০। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুতখাতে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। গার্মেন্টসের পরিবেশ নিয়ে যখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তখন দেশের পোশাক খাতে রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ গড়ে উঠেছে বিশ্বমানের বেশকিছু কারখানা। মান সনদে ইতোমধ্যে আমেরিকা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (টঝএইঈ) পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল ডিজাইন (খঊঊউ) এর সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘প্লাটিনাম’ লাভ করে দেশের কয়েকটি কারখানা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ মান পেয়ে বিশ্বসেরা কারখানার মর্যাদা লাভ করে রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড। পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বে রেকর্ড করে ‘বিটপি’ গ্রুপের এ কারখানা। নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার তাজপুর গ্রামে দেশের বৃহত্তম চুনাপাথর খনির সন্ধান আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানটির ২,২১৪ ফুট মাটির নিচে ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটির তলদেশে এ খনিজ সম্পদের সন্ধান পায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (এঝই)। ২১ এপ্রিল বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বদলগাছির তাজপুরে দেশের সর্ববৃহৎ চুনাপাথর খনির সন্ধান লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। গত বছরের ২২ জুন দেশব্যাপী বিশেষায়িত এ ব্যাংকের ১০০ শাখার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেয়া বিশেষ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের অধীনে ৩১ আগস্ট ২০১৪ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠন করা হয়। পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঞ্চয় এবং অর্জিত অর্থ লেনদেন সংরক্ষণ, ঋণ ও অগ্রিম প্রদান এবং বিনিয়োগের জন্য এ ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অন্যদিকে দেশের ৫৭তম তফসিলি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড’ (ঝযরসধহঃড় ইধহশ খরসরঃবফ)। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (ইএই)-এর এই ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ১ সেপ্টেম্বর। এর পূর্বে ৮ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় পিলখানায় ব্যাংকটির অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হয়। বেসরকারী খাতকে গতিশীল করতে এবং দেশী-বিদেশীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিলুপ্ত করে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গত ১ সেপ্টেম্বর ইওউঅ গঠন করা হয়। যার সুফল ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে দেশ। পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন এখন সময়ের ব্যাপর মাত্র। সেই লক্ষ্যে ব্যান্ডউইথদের প্রসার ঘটানো ছাড়াও এর দাম প্রায় ৭০ শতাংশ কমানো হয়েছে। দেশের সকল জেলায় তৈরি করা হয়েছে জেলা তথ্য বাতায়ন এবং জেলা ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্র। যেখান থেকে কোন ধরনের কালক্ষেপণ ও হয়রানি ছাড়া প্রদান করা হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত সেবা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিদ্যুত, গ্যাস ও ফোন বিল প্রদান এবং রেলের টিকিট কেনা যায়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছেছে মোবাইল ফোন। একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, ই-এশিয়া প্রভৃতি অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার ৫০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে মাসে গড়ে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ সেবা গ্রহণ করছে। ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে এখন বিচার প্রক্রিয়ায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তি। ২ মার্চ সিলেটের ২০টি আদালতে বিচারকদের হাতে লেখা সাক্ষ্যগ্রহণের পদ্ধতির বদলে উরমরঃধষ উারফবহপব জবপড়ঁৎফরহম এর উদ্বোধন করা হয়। এ পদ্ধতি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগে পা রাখে দেশের বিচার বিভাগ। যা বিচার প্রক্রিয়াকে করবে সহজতর ও গতিশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বছর লাভ করেছেন ৩টি সম্মাননা। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁর হাতে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার তুলে দিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অসামান্য সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশন (ওঋজঈ) এর মহাসচিব আনুষ্ঠানিকভাবে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় লাভ করেন ২০১৬ সালের ‘আইনসিটি ফর ডেভেলমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’। ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গবর্র্নেন্স এ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্ল্যান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট স্টেটের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে এ পুরস্কার প্রদান করে। ঊাবৎু ডড়সধহ ঊাবৎু ঈযরষফ আন্দোলনের জন্য ২০১৬ সালে গঠিত হয় জাতিসংঘের নারী, বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (ওচট) এর প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। মাটি নিয়ে গবেষণা করে সাফল্য লাভ করেছেন কানাডাপ্রাবাসী বাংলাদেশী গবেষক ড. ইসমাত আরা। তিনি এ গবেষণায় ৪০টি ব্যাকটেরিয়ার জাত শনাক্ত করেন, যেগুলো প্রয়োগ করে কোন রকম রাসায়নিক ও কীটনাশক ছাড়াই দ্বিগুণ উৎপাদনশীল মাটি তৈরি সম্ভব। ২ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় নাগরিকদের মধ্যে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে এই স্মার্ট কার্ড তুলে দেয়া হবে। ১৪ নভেম্বর ২০১৬ বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি সাবমেটিন হস্তান্তার করে চীন। ২০১৭ সালের শুরুতে নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে সাবমেরিন দুটি। এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বাংলাদেশে নৌবাহিনীর জন্য তৈরি কনভেনশনাল সাবমেরিন দুটি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন। এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ ৭.৬ মিটার। সাবমেরিন দুটি টর্পোডো ও মাইন দ্বারা সুসজ্জিত, যা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজে আক্রমণ করতে সক্ষম। ০৩৪জি ক্লাসের সাবমেরিন দুটির নাম রাখা হয় ‘নবযাত্রা ও ‘জয়যাত্রা’। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সকল মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ, বীর-উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন, সে সকল খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৪ নবেম্বর ভাতা বৃদ্ধির গেজেট প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা ১০৮ শব্দসৈনিককে ১৫ নবেম্বর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে ৮৭ শব্দসৈনিককে একই কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দ- কার্যকর হয়েছে গত বছর। ১০ মে মতিউর রহমান নিজামী এবং ৩ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দ- কার্যকর করা হয়। ইতিবাচক ঘটনার পাশাপাশি অনেক নেতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে বছরজুড়ে। সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা হচ্ছে রিজার্ভ চুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডালের রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রাসার রিজার্ভ থেকে ১শ’ এক মিলিয়ন ডলার বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ৫ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। বাংলাদেশী টাকা যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০০শ’ কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতিতে এটি ছিল একটি বড় ধাক্কা। তবে আশার কথা, এরই মধ্যে চুরি হওয়া অর্থের একটি অংশ ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। চেষ্টা চলছে সমুদয় অর্থ ফেরত আনার। তবে ঢাকার গুলশানের কূটনীতিকপাড়ায় অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে সংঘটিত নৃশংস ঘটনা হতবাক করে দেশবাসীকে। সন্ত্রাসীরা ঐ রেস্টুরেন্টে ঢুকে বিদেশীসহ ৩৩জন জিম্মি করে রাখে। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণ হারান দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। দুর্বৃত্তদের হাতে ৯ ইতালিয়ান ৭ জাপানি ও ১ ভারতীয়সহ ২০ জন মানুষ প্রাণ হারান। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরের দিনে টহলরত পুলিশের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রাণ হারান দুই পুলিশ ও এক নারীসহ চার জন। বছরের শুরু থেকেই জঙ্গীবাদ আলোচনার শীর্ষে থাকলেও তনু হত্যা, মিতু হত্যা, এটিএম জালিয়াতি, প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি, রাবি শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা, খাদিজার ওপর হামলা, রিশা হত্যাকা-ের ঘটনা আমাদেরকে করেছে হতবাক। তবে, গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রায় অন্যতম একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে বছরের শেষদিকে। নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কায় জয় হয়েছে গণতন্ত্রের। কোনও গোলযোগ ছাড়াই অনুষ্ঠিত এই নির্বাচণের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ইচ্ছে করলে সবই সম্ভব। ঠিক তেমনি অনেক অসম্ভবকে সম্ভবের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যে অভাবনীয় সফল্য দেখিয়েছে, তা এক কথায় অভাবনীয়। দারিদ্র্য বিমোচন, সর্বজনীন শিক্ষার প্রসার, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মোট আটটি সূচকে এসেছে এই অর্জন। বাংলাদেশ যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে হাঁটছে, সেখানে এ সাফল্য নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। এমডিজির পর এসডিজি অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে সরকার দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আরও ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পাশাপাশি চলছে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ। আর এ সবই হচ্ছে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। উন্নয়নের মহাড়কে বাংলাদেশের যাত্রাকে আরও গতিশীল করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। যদিও বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন সারাবিশ্বে স্বীকৃত। সরকার বিরোধীরাও একথা স্বীকার করেন যে, অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিই বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে অধিষ্ঠিত করবে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশকিছু কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। সেই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দৃশ্যপটই বদলে যাবে বাংলাদেশের। পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুত কেন্দ্র, মেট্রো রেল, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ির ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুত কেন্দ্র এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যস্ত রেললাইন স্থাপন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হলে উন্নয়নের পালে লাগবে তীব্র হাওয়া। আর এসবই করা হচ্ছে স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একদিন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাঙ্খিত সেই বাংলাদেশ তারই সুযোগ্য কণ্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই সাফল্য অর্জনে দৃঢ় অবস্থানের কারনে ইতোমধ্যে বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম একজনে পরিণত হয়েছেন তিনি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জন পুরো জাতির জন্যই গৌরবের। কিন্তু এই সমৃদ্ধি ও অর্জনকে স্থবির করে দিতে, নস্যাৎ করতে তৎপর রয়েছে দেশ বিরোধী চক্র। তাদের ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তেমনি সজাগ থাকতে হবে সচেতন প্রত্যেক নাগরিককে, যেভাবে একাত্তরে বিজয় ছিনিয়ে আনতে আমরা একাট্টা হয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রত্যেকটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে দেশ-মাতৃকার জন্য। মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। আমরাও আশাবাদী। কারণ স্বপ্ন আর আশা আমাদের আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে ছিল আবেগ। আমাদের আবেগের কাছে অনেক কিছুই তুচ্ছ। আমরা হাসতে হাসতে প্রাণ দিতে পারি জন্মভূমির জন্য। পরাজয়ের ভয়ে আমরা ভীত হইনা কখনও। সৎ সাহসের কারণেই সম্ভাবনার দ্বার অনেকটা অবলিলায় উন্মোচিত হয়ে যায় আমাদের। আজকের ভোর আজকের সকাল আনন্দের বারতা বয়ে আনুক আমাদের জাতীয় জীবনে। অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাক আমাদের সমৃদ্ধির জন্য। নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হোক ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমার দেশ। গর্বে বুক উঁচু করে বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে থাকুক আমার মানচিত্র, আমার পতাকা। ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনে এমনটিই প্রত্যাশা।
×