ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রহিম শেখ

অর্থনীতির ‘স্বস্তির বছরে’ রিজার্ভ চুরির ধাক্কা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১ জানুয়ারি ২০১৭

অর্থনীতির ‘স্বস্তির বছরে’ রিজার্ভ চুরির ধাক্কা

চলে গেল আরও একটি বছর। বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ধাক্কায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিছুটা নড়বড়ে হলেও অর্থনীতির ভিত ছিল বেশ শক্ত। বছরজুড়েই বৈদেশিক ভা-ারের ‘সামান্য’ অর্থ উদ্ধার ও তদন্ত অনুসন্ধান এবং প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। তারপরও বছর শেষে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গেলে বাংলাদেশ ছিল উচ্চ আসনের প্রবৃদ্ধির ঘরে। নিম্নমুখী ধারায় ছিল মূল্যস্ফীতি, যা স্বস্তি দিয়েছে সরকারকে। অর্থনীতির প্রায় অধিকাংশ সূচকেই ছিল উর্ধমুখী। এগিয়ে চলছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। সেই লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার আশা করছে, এই ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তত এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে উপকূলীয় দুর্যোগ ব?্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এগুলোকে এ বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, উন্নতির সঙ্গে অপ্রাপ্তিও আছে খানিকটা। অবকাঠামো দুর্বলতা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। শিল্প-কারখানায় ছিল গ্যাস-বিদ্যুত সংকট। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, যে কোন মূল্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে সবকিছুর ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ২০১৭ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ॥ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বিদায়ী বছরেও। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। যদিও বছরের শুরুতে তা অসম্ভব বলে মনে করে বিভিন্ন দাতা সংস্থা। তবে সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ শতাংশ। আগে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম আসত না। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে বড় ৫০ অর্থনীতির তালিকায় উঠে এসেছে। জিডিপির চলতি মূল্য হিসাবে ৪৩তম দেশ। আর ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির এ চাকাকে আরও সচল করার চেষ্টা করছে সরকার। অর্থবছরটিতে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে জানান, চলতি অর্থবছর (২০১৬-১৭) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতির চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। ২০০ কোটি ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। এটা ভাল দিক। বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে ভাল স্থান। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টিম ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। সব পর্যায়ের মানুষ উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য কাজ করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। গত অর্থবছরের অর্জনে চাষী, জেলে এবং সব পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষের অবদান রয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ॥ সরকারের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে দেশে মাথাপিছু আয় ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে। ফলে এক বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫০ মার্কিন ডলার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ॥ বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগস্টে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ? সেপ্টেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাবে নবেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যমতে, গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট হারে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে। গ্রামের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। পাশাপাশি শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট হারে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের কাজ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৯ শতাংশ। নদীশাসন কাজের ভৌত অগ্রগতি ২৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণে ভৌত অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ এবং জাজিরা সংযোগ সড়কের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। এছাড়া সার্ভিস এরিয়া-২-এর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৬ শতাংশ। এছাড়া ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প’ নামের আলাদা একটি প্রকল্পের কাজ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ৩৫ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে চার কোটি তিন লাখ টাকা। এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি সাড়ে ৫ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপির মাধ্যমেই মূলত সরকারী বিনিয়োগ হয়ে থাকে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার প্রায় ২০ শতাংশ, যা আগের একই সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-নবেম্বর) পাঁচ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ২৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকার বা ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭ হাজার ১১ কোটি টাকা বা ১০ শতাংশ। এর মধ্যে মোট ১ হাজার ৩৬৫টি প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। বাকিটা অন্য উন্নয়ন খাতে। বিগত পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় চলতি সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ভাল হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের হার অনেক ভাল। এভাবে চলতে থাকলে আশা করছি, এ হার শতভাগ করতে পারব। ফলে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ॥ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি একদিকে যেমন সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্বস্তি দিয়েছে, অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা আগরে অর্থবছরের (২০১৪-১৫) চেয়ে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মোট ৬৯ হাজার ৫৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এই সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এনবিআরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেয়া, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের কর আদায়ে সম্পৃক্ত করা এবং রাজস্ব আদায়ে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। রিজার্ভে রেকর্ড ॥ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ধাক্কায় শ্লথ গতিতে ছিল গোটা ব্যাংকিং খাত। কমে আসে রিজার্ভের পরিমাণ। ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার। সেই রিজার্ভের মজুদ এখন আগের যে কোন সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। সব রেকর্ড ভেঙ্গে গত নবেম্বর শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বেড়েছে বিদেশী বিনিয়োগ ॥ দেশী বিনিয়োগের নিবন্ধন কমলেও বিদেশী বিনিয়োগ আগের তুলনায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশী বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে ৩৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে বিদেশী বিনিয়োগের নিবন্ধন বেড়েছে ১৭৬ শতাংশ। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর (তৃতীয় প্রান্তিক) সময়ে মোট ৩০৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ হাজার ২৫১ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থানীয় ও বিদেশী উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে প্রকৌশল শিল্প খাত থেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ)’র সদস্য নাভাস চন্দ্র ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিককালে বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। দেশী ও বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আগ্রহও বেড়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিসংখ্যানে। সংস্থা হিসেবে আমরাও নিবন্ধন প্রক্রিয়াগুলোকে অনেক সহজ ও আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে উলম্ফন ॥ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদোক্তারা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলার; যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। একই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, এ সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে রেকর্ড ২০৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত জনকণ্ঠকে বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়লে তা নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। আর বেসরকারী খাতে ঋণের যোগান বাড়লে বুঝতে হবে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে দেশে সার্বিক বিনিয়োগ খুব যে চাঙ্গা হয়েছে, এমনটি মনে হয় না। এজন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সাধারণত দেশে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য মেয়াদী ঋণের চাহিদা করেন উদোক্তারা। আর মেয়াদী শিল্প ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধিকে মূল নিয়ামক হিসেবে গণ্য করা হয়। রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ॥ সাম্প্রতিককালে পোশাক শিল্পে বড় বড় দুর্ঘটনার পরও এ খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিদেশী ক্রেতারা আবারও ফিরছেন বাংলাদেশে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি আয়ের তুলনায় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৩ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীল থাকায় রফতানি বাণিজ্যে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আশানুরূপ আসেনি রেমিটেন্স ॥ সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ উপায়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আসার কারণে রেমিটেন্সের প্রবাহ কিছুটা কমেছে। পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর এই পাঁচ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৬১৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ১০৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বাড়বে। মজবুত ছিল কৃষির চাকা ॥ বরাবরের মতো অর্থনীতিতে সুখকর অবস্থা তৈরির ভিত মজবুত করে চলেছে কৃষি। ফসল উৎপাদন এবং কৃষির বিভিন্ন খাত-উপখাত সবখানেই ভাল করেছে বাংলাদেশ। মাছ উৎপাদনে সামগ্রিকভাবে চতুর্থ স্থান অর্জনের সুখবর এসেছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও থেকে। এফএও বলছে, চাল-গম মিলে উৎপাদন হতে পারে ৫ কোটি ৬ কোটি টন। গত মৌসুমে বোরো চাল উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন দেশের কৃষক। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, জমির ব্যবহার কমলেও প্রযুক্তির ব্যবহারে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। তার প্রমাণ আমরা এক সময় ১ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন করতাম। এখন ৩ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদন করছি। শীঘ্রই ৪ কোটি টন চাল উৎপাদন করব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মৌসুমে সারাদেশে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৫৬ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ৫৩ লাখ ৮০ হেক্টর জমিতে। বোনা আমনের আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। চক্রে আবদ্ধ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ॥ ভৌত অবকাঠামো বিশেষত সড়ক, সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি এসেছে তুলনামূলক কম। পদ্মা সেতু প্রকল্প ছাড়া অধিকাংশই বাস্তবায়নের কাজ শুধু জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, আলোচনা এবং চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যেই আটকে আছে। দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি সই ছাড়া কার্যত তেমন কোন অগ্রগতি নেই। মেট্রো রেল প্রকল্পের ডিপো এলাকার (সিপি-০২) ভূমি উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত ১০ অক্টোবর। তাতে মোট তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বর্তমানে প্রস্তাব তিনটি মূল্যায়নের কাজ চলছে। একই সঙ্গে চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ। সব দরপত্র যাচাই ও কার্যাদেশ চলতি বছর এ প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছে সরকার। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদুতকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল জাপানিদের। তবে গুলশানে জঙ্গী হামলার পর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত হয়ে যায়। ওই চুক্তি কবে নাগাদ সই হবে, তা বলতে পারছে না বিদ্যুত বিভাগ। সরকার আশা করছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাস নাগাদ এ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হতে পারে। আলোচিত রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নেও ধীরগতি দেখা গেছে। ১৪ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ২৯২ কোটি টাকা। তবে রামপাল প্রকল্পের জন্য ৪২০ একর ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল বিদ্যুতকেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। সেøাপ প্রটেকশনের কাজও সমাপ্ত হয়েছে ৯০ শতাংশ। বর্তমানে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে সরকার ও ইউনেসকোর মধ্যে এখন চলছে চিঠি চালাচালি আর যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। এদিকে ভারত, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগত কারণে সরকার আপাতত সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রকল্পটি এখনও ফার্স্ট ট্র্যাকের আওতায় রয়েছে। তবে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজে কিছুটা অগ্রগতি আছে। পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। সিঙ্গেল ডিজিটের পথে ব্যাংক ঋণের সুদহার ॥ বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। সেই বাধা ক্রমেই শিথিল হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনার দাবি এবং বিদেশী ঋণ সহজলভ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো সুদহার কমাতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর শেষে ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই সুদহার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে আমানতের চেয়ে ঋণের সুদ তুলনামূলক কম কমেছে। এ সময়ে দেশের ৫৬টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদ কমায় অক্টোবরে গড় স্প্রেড কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা আগস্টে ছিল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে অবস্থান করলেও বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড এখনও ৬ শতাংশীয় পয়েন্টর ওপরে রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে গলার কাঁটা খেলাপী ঋণ ॥ সহজ শর্তে পুনঃতফসিলসহ নানান সুবিধা দেয়ার পরও ব্যাংক খাতের খেলাপী ঋণ কমানো যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে শেষ তিন মাসেই বেড়েছে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপী ঋণ বেশি হলে ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সুদের হারও বাড়ে। বাংলাদেশে আমানতের সুদের হার কমিয়ে এসব সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খেলাপীদের বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার ফলে ভাল গ্রাহকদের কাছে খারাপ সংকেত যাচ্ছে। আর অবলোপন করা হচ্ছে জনগণের আমানতের অর্থ দিয়ে। এর প্রভাব পড়েছে গ্রাহকদের ওপর। এতে ভাল গ্রাহক, সৃজনশীল উদ্যোক্তারা ঋণ পেতে সমস্যায় ভোগেন। বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজার ॥ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ধস নামার সাড়ে পাঁচ বছর পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে দেশের শেয়ারবাজার। চলতি বছরে গুটিকয়েক শেয়ার ছাড়া তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দরে উল্লেখযোগ্য উত্থান ছিল না। আবার বড় ধরনের পতনও ছিল না। ফলে নতুন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে এসেছেন অনেকে। দরপতনের ভীতি না থাকায় ক্রমে শেয়ার চাহিদা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বাজার সূচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নবেম্বর) বিদেশী বিনিয়োগ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা বা ৭৯৬ শতাংশ । দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) সাম্প্রতিক লেনদেন পর্যালোচনায়ও বাজারের গতি স্বাভাবিক হয়ে আসার ইঙ্গিত মিলছে। ২০১৫ সালের শুরুতে যেখানে দৈনিক গড়ে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ২০০ কোটি টাকার, ২০১৬ সালের শুরুতেই তা ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে রিজার্ভ চুরির ধাক্কা ॥ বছরের শুরুতে ব্যাংকিং খাতে ঘটে এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ডেবিট কার্ডের গোপন তথ্য চুরির ঘটনা। এরপরে ঘটে ব্যাংকিং ইতিহাসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকাররা ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করে। এ ঘটনার পরই চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ১০ মাস পার হয়েছে। আর চুরির বিষয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে ছয় মাস আগে। তবে বারবার তারিখ নির্ধারণ করেও শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেনি সরকার। তাই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও শিরোনাম হয় বারবার। জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি করা প্রায় ১০ কোটি ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ফিলিপিন্সের ব্যাংক রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) একটি শাখা হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়। তার মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ প্রদানে কোন দায় নিতে নারাজ ব্যাংকটি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত নবেম্বরে চুরির অর্থ উদ্ধারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে ফিলিপিন্স যায় একটি প্রতিনিধি দল। তাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের করা প্রতিবেদনের কপি চায় আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবেদনটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই তাদের প্রতিবেদন দেয়া হবে না।
×