ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে, শেষ ম্যাচে স্বাগতিকরা জয়ী ৮ উইকেটে

আড়াই বছর পর হোয়াইটওয়াশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ জানুয়ারি ২০১৭

আড়াই বছর পর হোয়াইটওয়াশ

মিথুন আশরাফ ॥ দিন দিন উন্নত হওয়ার পথে হাঁটে সবাই। বাংলাদেশ দল বিদেশের মাটিতে সিরিজ খেলতে গিয়ে যেন অবনতির পথে হাঁটছে! বাজেভাবে হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে আছে। কোথায় দুই ম্যাচ হারের পর তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে এসে উন্নতির রেখার দেখা মিলবে। উল্টো, অবনতির চিত্রই ফুটে উঠল। বিবর্ণই থাকল বাংলাদেশ দল। শনিবার নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ‘কিউই ওয়াশ’ হলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে আড়াই বছর পর হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা পেল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ২৩৬ রানের বেশি করতে পারল না বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল সর্বোচ্চ ৫৯ রান করতে সক্ষম হন। ৪১.২ ওভারে ২৩৯ রান করে সহজ জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। নেইল ব্রুম ৯৭ ও কেন উইলিয়ামসন অপরাজিত ৯৫ রান করেন। এ দুইজন মিলে ১৭৯ রানের জুটি গড়েই নিউজিল্যান্ডের জয় সহজ করে দেন। বাংলাদেশ দলকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল। অন্তত না জিতলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়বে, সেই রকম আশা সবার ভেতরই ছিল। দেশে দুর্দান্ত খেলা দলটি তো গতবছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভাল খেলেছিল। তাই আশাও ছিল। কিন্তু হতাশই হতে হলো। দীর্ঘ দুইবছর পর বিদেশের মাটিতে খেলতে নেমে, ২০১০ সালের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলতে নেমে দীর্ঘশ্বাসই উপহার দিল দল। সেটি আবার বছরের শেষ দিনেই মিলল। বছরের শুরুটা তাই হারের বোঝা মাথায় নিয়েই চলতে হবে। এমন হারের কোন ব্যাখ্যা বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছেও নেই। নেলসনে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর বলেছেন, ‘ব্যাখ্যা দেয়াটা আসলে খুব কঠিন। এমন শুরুর পর আমরা আশা করছিলাম যে, রানটা অনেক বড় হবে। বিশেষ করে ৭/৮ জন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে থাকায় আশা করছিলাম যে, আরও বড় রান হবে। ১ উইকেটে ১০০ রান, এমন শুরুর তো আমরা সব সময় করতে পারি না। ধসের ব্যাপারটা আমাদের সঙ্গে বারবার হচ্ছে, হয়তো আমরা মানসিকভাবে ততটা দৃঢ় ছিলাম না।’ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৫ রানে ১ উইকেট ছিল বাংলাদেশের। এরপর ৭৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে। তৃতীয় ওয়ানডেতে গিয়ে উদ্বোধনী জুটিই ১০২ রান যোগ করে। এরপর আবার ধস শুরু হয়। তাতে করে দল আবারও হারের স্বাদই পায়। মাশরাফি তাই বলেছেন, ‘পরপর হওয়ার কারণে হয়তো, এক-দুইটা উইকেটে পড়ে যাওয়ার পরে মানসিকভাবে থিতু হয়ে যে ব্যাট করতে হবে, সেটা করতে পারিনি। ওরা যে মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করেছে, আমরা সেই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে পারিনি।’ সুযোগ তৈরি হওয়ার পরও যে হারতে হয়েছে, মাশরাফি তা মানতেও পারছেন না, ‘আমার মনে হয় স্কিলের চেয়ে মানসিকভাবে আমরা ওই জায়গায় যেতে পারিনি। আমি মনে করি, স্কিলের দিক থেকে আমরা ওদের মতোই। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশা করি। বল যখন নতুন থাকে তখন সুইং করে। ওই সময়টা যখন পার হয়ে যাবে তখন যে কেউ আশা করবে যে ওরা বড় ইনিংস খেলবে। টপ অর্ডারে রান করার পর মিডলঅর্ডারের একটা বড় দায়িত্ব থাকে সেটাকে টেনে সামনে নিয়ে যাওয়ার। তারপর হয়তো বা সাত/আট নম্বর ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে রানটাকে আরেকটু বড় করার। তামিম-ইমরুল যেভাবে খেলছিল তাতে ক্ষেত্রটা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিডলঅর্ডার যেভাবে ধসে পড়েছে কেউ ভাবেনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলে তা যে কোনভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না।’ মাশরাফি সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকেও তাকান। তামিম ইকবাল তৃতীয় ওয়ানডেতে ভাল করলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ভাল করতে পারেননি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও প্রথম ওয়ানডের পর আর ঝলক দেখাতে পারেননি। তানভির হায়দারকে খেলানো হয়েছে। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তানভির। নুরুল হাসান সোহান সেই তুলনায় অনেক ভাল করেছেন। সুযোগ পেলে যে ভাল করার সামর্থ্য আছে, তা ৪৪ রান করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মাশরাফি সিনিয়র ক্রিকেটারদের বেলাতে বলেন, ‘যেটা হয়েছে, ব্যক্তিগত কিছু পারফর্মেন্স হয়েছে। হয়তো প্রথম ম্যাচে সাকিব ভাল খেলেছে। তামিম তৃতীয় ওয়ানডেতে রান করল। ইমরুল আগের ম্যাচটায় রান পেয়েছে, তৃতীয় ওয়ানডেতেও ভাল করল। যেটা হলে দলের জন্য কার্যকর হতে পারত বা ওদের দলকে ভোগাতে পারত, তেমন পারফর্মেন্স হয়নি। যেটা হয়ত আমরা আমাদের ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশা করি। তামিম-ইমরুল বা গত ম্যাচে সাব্বির-ইমরুল যখন ব্যাট করছিল, তখন কিন্তু ভাল অবস্থায় ছিল দল। সেখান থেকে এভাবে ধস নামা অবশ্যই হতাশার। বিশেষ করে মুশফিককে হারানোর পর আরও বেশি একতাবদ্ধ পারফর্মেন্স দরকার ছিল।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে। এবার নিউজিল্যান্ডের হাতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ মিলেছে। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছিল কিউইরা। তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশও করল। আঘাত যেন ফিরিয়ে দিল। নিউজিল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য পেসার টিম সাউদি বলেছিলেন, ‘যদিও সিরিজ ইতোমধ্যেই শেষ এবং আমরা জিতে গেছি। কিন্তু আমরা কোনভাবেই দায়সারা হতে পারি না। কারণ তারা খুবই গুণসম্পন্ন একটি দল এবং সে কারণে আমাদের সেরা খেলাটাই উপহার দিতে হবে।’ বছরের শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হওয়ার আগে সাউদি জানিয়েছিলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে খেলাটা তেমন সহজ নয়। সুতরাং আমরাও এটাকে যতটা সম্ভব পারি কঠিন করে তুলতে চাই। আমাদের দলের অনেকেই জানে বাংলাদেশে সময়টা কত কঠিন গেছে আমাদের। নিজেদের কন্ডিশনে তারা বিরাট মাপের একেকজন ক্রিকেটার আর বিদেশের মাটিতেও তারা ম্যাচের পর ম্যাচ উন্নতি করতেই থাকে। তাই আত্মতৃপ্তির কোন সুযোগ নেই এখানে। কোন শিথিলতার সুযোগ নেই। আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম সেটারই সমুচিত জবাব দিতে চাই এবার।’ নিউজিল্যান্ড জবাব দিয়েও দিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজ শেষ। এখন মঙ্গলবার টি২০ ম্যাচে খেলা দিয়ে নতুন বছর শুরু করবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজে এখন ভাল করলেই হয়। নয়ত ‘কিউই ওয়াশ’ নিয়তিতে আটকেই পড়ে থাকবে!
×