ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মমুখর মানুষের কোলাহলে জমে উঠেছে রামনাবাদের পাড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ জানুয়ারি ২০১৭

কর্মমুখর মানুষের কোলাহলে জমে উঠেছে রামনাবাদের পাড়

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ নতুন ধান উঠার সঙ্গে জমে উঠেছে রামনাবাদপাড়ের কুইট্টালপাড়া। দিনরাত মানুষের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে গোটা পল্লী। ধান কেনা, ঝাড়পোছ, সিদ্ধ, শুকানো, ভানা। চলছে হাজারও কাজ। নারী-পুরুষ, শিশু কেউ নেই বসে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ ধানের চাল তৈরি হচ্ছে এখানে। যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চালের চাহিদার একটা বড় অংশের যোগান দিতে গিয়ে দম ফেলার ফুরসত মিলছে না মানুষের। ধান ঘিরে যেন এখানে লেগেছে উৎসবের আমেজ। রামনাবাদ পটুয়াখালীর বৃহত্তম নদ-নদীগুলোর একটি। পটুয়াখালীর দক্ষিণ প্রান্ত ছুঁয়ে গলাচিপা ঘেঁষে কলাপাড়ায় গিয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার কর্মজীবী একদল মানুষ রামনাবাদ নদীর তীর ঘেঁষে গলাচিপার পশ্চিম প্রান্তে কুইট্টালপাড়ার গোড়াপত্তন করে। ধান থেকে চাল তৈরি করাই এদের পেশা। আগেও এ পেশার মানুষ এলাকায় ছিল। তবে সংখ্যা ছিল কম। সময়ের বিবর্তনে কুইট্টালপাড়ায় লোকসংখ্যা বেড়েছে। কুইট্টালপাড়ার বাসিন্দাদের মতে-গলাচিপায় দু’টি পাড়ায় বর্তমানে তিন-চার শ’ পরিবারের হাজার দেড়েক নারী-পুরুষ এ পেশার সঙ্গে রয়েছে। কয়েকটি রাইস মিল ঘিরে ছোট ছোট ঘরে এদের বসবাস। ধান ভানার এ কাজ যারা করে তারা মূলত স্থানীয়দের কাছে কুইট্টাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ধান সিদ্ধ-শুকানো করার চলছে ভর মৌসুম। পাড়ায় ঢুকলেই চোখে পড়ে নারী-পুরুষের ব্যস্ততা। কোথাও ধান সিদ্ধ হচ্ছে। কোথাও সিদ্ধ ধান শুকানো হচ্ছে। আবার কোথাও চাল বেচাকেনা চলছে। কুইট্টালপাড়ার প্রবীণ সাহেব আলী জানান, ধান সিদ্ধ, শুকানো এবং ভানার কাজটি যথেষ্ট পরিশ্রমের। রাত জেগে ধান সিদ্ধ করতে হয়। দিনে সিদ্ধ ধান শুকাতে হয়। আবার বিভিন্ন মোকামে কিংবা মহাজনদের কাছে চাল পৌঁছাতে হয়। প্রতিদিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত তাই ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে ধানের মৌসুমের চার-পাঁচ মাস কারও বিশ্রামের সুযোগ মেলে না। এ সময় শিশুরাও ব্যস্ত থাকে। মরিজন বেগম জানান, প্রতি মণ ধানে ২৬ থেকে ২৮ কেজি চাল হয়। এতে দেড় থেকে দুই শ’ টাকা মুনাফা থাকে। কোন কোন বড় পরিবার সপ্তাহে তিন-চার শ’ মণ ধান সিদ্ধ শুকানো ও চাল ভানতে পারে। মোটামুটি এ সময়ে মাসে ২০-২২ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। কয়েকজন কুইট্টাল জানান, আগে এ পেশায় লাভের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। অটো রাইস মিল হওয়ায় ব্যবসা কমে গেছে। তারপরও হাতে তৈরির কারণে সারাদেশেই এ চালের কমবেশি চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চাল এখান থেকে দেশের নানান প্রান্তে পাঠানো হয়। ধান-চালের কর্মযজ্ঞ ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠা কুইট্টালপাড়ার মানুষের রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। বিশেষ করে অনেকেরই নিজস্ব পুঁজি নেই। ব্যাংক থেকে এদের কোন ঋণ দেয়া হয় না। তাই মহাজনদের কৃপার ওপর নির্ভর করতে হয়। লাভের একটা বড় অংশ মহাজনরা গ্রাস করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদের নিরাপদ আশ্রয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। এমন নানান সমস্যা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ এ পেশা ঘিরে সন্তুষ্ট। অনেকেই এ কাজ করে নিজেদের অবস্থা পাল্টে ফেলেছে। তাইতো ধান ওঠার শুরু থেকে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে রামনাবাদ তীরের কুইট্টালপাড়া।
×