ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ওবামা ও ট্রাম্পের পরস্পর বিরোধী এজেন্ডায় ফের উত্তেজনা

বিশৃঙ্খলায় ক্ষমতা হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ জানুয়ারি ২০১৭

বিশৃঙ্খলায় ক্ষমতা হস্তান্তর

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার উত্তরাধিকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডার বিরোধ হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার হস্তান্তরে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এ প্রক্রিয়া বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন থেকেই ওবামা তার আট বছরের শাসনামলের মধ্যে অন্যতম সুদূরপ্রসারী কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর প্রভাব ট্রাম্পকেই মোকাবেলা করতে হবে এবং তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর তার কাজ করার বিকল্প পথও সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। ওবামা ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগে সপ্তাহে এক শেষ বড় ধরনের ভাষণ দেয়ারও পরিকল্পনা করছেন। ভাষণের সঙ্গে পরিচিত লোকজন একথা জানান। এ ভাষণের দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী হতে পারে। চলতি সপ্তাহে ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মস্কো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টায় সাইবার হামলাকে কাজে লাগিয়েছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে ওইসব পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত সপ্তাহে কয়েক দশকের মার্কিন নীতি ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে ওবামা বসতি নির্মাণের দায়ে ইসরাইলের নিন্দা করে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হওয়ার সুযোগ দেন। ২০ জুন দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তুতিতে ট্রাম্প কয়েকটি পাল্টা-উদ্যোগ নেন। তার টিম জাতিসংঘের ভোট নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার বিষয়ে ইসরাইলী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তিনি ভোটের ফলকে প্রভাবিত করতে সামজিক মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করার জন্য মার্কিন ভেটো ক্ষমতাকে কজে লাগাতে ওবামার প্রতি আহ্বান জানান। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন না। তিনি মস্কোর হস্তক্ষেপের প্রমাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেন, তিনি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া স্থগিত রাখবেন এবং ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় সম্পর্ক কেমন দাঁড়ায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন। ট্রাম্প শুক্রবার টুইটে ওই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন; বিলম্বের বিষয়ে (ভি পুতিনের) বড় পদক্ষেপ তিনি যে খুবই স্মাট তা সব সময়েই আমার জানা আছে। অতীতে মূলত জাতীয় ইস্যু নিয়ে অনেক কম সংঘাত ছাড়াই ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে। ক্ষমতার হাতবদল শুভ লক্ষণ দিয়েই সূচিত হয়েছিল। নির্বাচনের পরই ওবামা ও ট্রাম্প ওভাল অফিসে ৯০ মিনিট ধরে কথা বলেন। সেই সময় থেকে প্রতি সপ্তাহেই তারা ফোনে কথা বলছেন। কিন্তু আন্তরিক কথোপকথনের নিচে নীতিগত গুরুতর বিরোধ বিরাজ করে। ট্রাম্প ওবামার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ কাজ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার রদ করতে চান। যাদের বীমা করা নেই এমন লাখ লাখ আমেরিকানের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এ সংস্কারের লক্ষ্য। আগামী সপ্তাহে ওবামা ওউ এ্যাফোডেবল কেয়ার এ্যাক্ট রক্ষা করার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাপিটল হিলে যাবেন। তিনি স্বাস্থ্য আইনটি পাল্টে দিতে ট্রাম্পের চেষ্টা মুখে ডেমোক্র্যাটদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করার আশা করছেন। ওবামা এমন অন্যান্য পদক্ষেপও নিচ্ছেন যা ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার পর তার কাজের সুযোগ সঙ্কুচিত করে দিয়ে পারে। গত সপ্তাহে ওবামা প্রশাসন আর্কটিক ও আটলান্টিক মহাসাগরের বড় বড় ক্ষেত্রে তেল উত্তোলন অনির্দিষ্টকালের নিষিদ্ধ করবে বলে জানায়। সম্ভবত এটি হবে পরিবেশ রক্ষায় ওবামার অবদান তুলে ধরা এবং আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের তেল উত্তোলন কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার উদ্যোগকে বিপর্যস্ত করে দেয়ার চেষ্টা। ট্রাম্প বুধবার তার টুইটে সম্ভবত এসব পদক্ষেপের প্রতিই ইঙ্গত করেন বলে মনে হয়। তিনি তখন বলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের অনেক উস্কানিমূলক বিবৃতি ও প্রতিবন্ধকতা অগ্রাহ্য করে যেতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, মনে করেছিলাম, এটি এক সুষ্ঠু ক্ষমতা-হস্তান্তর হবে না!
×