ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে নতুন করে চেনাতে নীরবে নিভৃতে কাজ করছে ওরা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশকে নতুন করে চেনাতে নীরবে নিভৃতে কাজ করছে ওরা

সমুদ্র হক ॥ পর্যটক আগমনে খ্রিস্ট্রীয় নববর্ষ অনেক আশা জাগিয়েছে। গত বছরকে ‘পর্যটন বর্ষ’ ঘোষণার পরও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। নতুন বছরে আশা করা হচ্ছে সার্ক রাজধানী মহাস্থানসহ দেশের প্রতিটি স্থান পর্যটকমুখর হয়ে থাকবে। দেশের দর্শনীয় ও প্রতœসম্পদ সমৃদ্ধ প্রতিটি এলাকায় পর্যটক আগমনে উদ্বুব্ধ করতে দেশের তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলবেঁধে নেমেছে। তারা দেশের প্রতিটি কোনায় গিয়ে ভ্রমণ উপযোগী নতুন নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজে বের করে সোস্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে ছবি ও বর্ণনাসহ আপলোড করছে। তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা আসছেন। ‘ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপ ফেসবুকে এখানে ভ্রমণের ছবি, বর্ণনা, কিভাবে ওই স্থানে যেতে হবে তার সার্বিক স্ট্যাটাস দিচ্ছে। কথা ছিল আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরতে ডকুমেন্টারি সহ বিষয়ভিত্তিক প্রচার কার্যক্রম চলবে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো পর্যটক আকর্ষণে নানামুখী প্রচার চালাবে। কার্যত তা হয়নি। একটি সূত্র জানায়, পর্যটক আকর্ষণে তিন বছর মেয়াদী যে কর্মসূচী নেয়া হয় প্রয়োজনীয় বাজেটের অভাবে তা বাস্তবায়নে অনেকটাই ভাটা পড়ে। তবে আশাবাদী-নতুন এই বছরে পর্যটক আকর্ষণে প্রচার কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় বাজেট মিলবে। পর্যটক আকর্ষণে এই প্রচারে নিজ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এগিয়ে এসেছে তরুণরা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের (বিপিসি) এক তথ্যে বলা হয়েছে, ’১৬ সালে পর্যটন বছর ঘোষণায় আশা করা হয়েছিল পর্যটক আগমন বাড়বে। টার্গেট ধরা হয় ৭ লাখ। তবে বিদায়ী বছরে কত পর্যটক দেশে এসেছে তার হিসাব মেলেনি। তবে হলি আটির্জানে জঙ্গী হামলার পর জঙ্গী দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপে বিদেশীরা নিশ্চিন্তে আসতে শুরু করেন। আশা করা হচ্ছে নতুন বছরে দেশে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। বিপিসি আশা করছে এ বছর অন্তত ৮ লাখ পর্যটক এবং পরবর্তী বছর (২০১৮) সালে এই সংখ্যা বেড় ১০ লাখে পৌঁছবে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর ও বিপিসি সূত্র জানায়, দেশের অন্তত ৮শ’ জায়গাকে পর্যটন এলাকা হিসবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪শ’ প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। বাকি ৪শ’ প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এর সঙ্গে তরুণরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা খুঁজে বের করছে। যেগুলো পর্যটন স্থান হিসাবে তালিকার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের নানা দর্শনীয় স্থান যোগ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের দর্শনীয় স্থানগুলো যোগ হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার যমুনা তীরের প্রেম যমুনার ঘাট, সিরাজগঞ্জের হার্ডপয়েন্ট, পাবনার চাটমোহরের ঐতিহ্যের স্থাপনা, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও পার্বত্য জেলা, সিলেটের দর্শনীয় স্থান ছাড়াও রাঙামাটির বিলাইছড়ি, ধূপপানিঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, মীর সরাইয়ের খইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়াঝর্ণা, বড়কমলদহ, ছাগলবান্ধা ঝর্ণা, খাগড়াছড়ির হাজাছড়া, দীঘিনালার তৈদুছড়া, শ্রীমঙ্গলের হামহামঝর্ণা, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়, জাদুকাঠা নদী, দোয়ারাবাজরের সোশলীচেলা, টেকেরহাটের লাইমস্টোন লেক, খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি, বান্দরবানের বগালেক, নীলগিরির থানাচির, নাফাকুম, ঢাকার কাছে দোহারের মৈনাকঘাট, সিলেটের জাফলংয়ের সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দি, বাতারগুল, মায়াবন, বরিশালের শাপলাবিল শাতলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির ভাসমান পেয়েরাবাজার, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরসহ দেশের প্রায় প্রতিটি স্থানে নতুন পর্যটন এলাকা খুঁজে বের করছে তরুণরা। অনেক স্থানে এই তরুণরা তাঁবু খাটিয়ে রাতযাপন করে। ট্যুরিজম বোর্ড ও ট্যুর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছর দেশের অন্তত ২০ লাখ লোক দেশের বাইরে বেড়াতে যায়। ভারতে যায় প্রায় ৬ লাখ, মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় লাখ, থাইল্যান্ডে ১ লাখ, সিঙ্গাপুরে প্রায় ৪০ হাজার। বিচ্ছিন্নভাবে পর্যটক যাচ্ছে চীন, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডে। এ ছাড়াও নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ায় পর্যটক যাচ্ছে সেসব দেশে অন এ্যারইভ্যাল ভিসার কারণে। বাংলাদেশ থেকে যত পর্যটক বিদেশে যাচ্ছে সেই তুলনায় এই দেশে পর্যটক আগমনের সংখ্যা কম। নতুন বছরে দেশে পর্যটক সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, গত বছর বিচ কার্নিভাল আন্তর্জাতিক বুড্ডিস্ট সম্মেলনসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। এ বছরও ওআইসি পর্যটন সম্মেলন, ইউএনডব্লিউটিও সম্মেলনসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানীকে ঘিরে বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ সারাদেশেই সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের নানা অনুষ্ঠান থাকায় পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাবে, এমনটি আশা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মহাস্থানগড়কে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। নওগাঁর পাহাড়পুর দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ঐতিহাসিক স্থানগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নতুন বছরে পর্যটক আগমনের ধারা পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা অবকাঠামো শক্তিশালী করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের জনবল বাড়ানো হয়েছে। দেশে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা খুবই কম। এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে দেশের প্রতিটি স্থানে স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারে এ জন্য পুলিশ বাহিনীর অর্গানোগ্রাম তৈরি হয়েছে। বর্তমানে প্রতি দুই থানার জন্য একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা সহকারী পুলিশ সুপার দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন বছরকে পর্যটকদের স্বাগতম জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
×