এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বর্ষ বিদায় ও নববর্ষ বরণকে ঘিরে পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কার্নিভ্যাল ইভেন্টের যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজন নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলেছে লুকোচুরি খেলা। গানের কনসার্ট ছাড়া আর তেমন কোন আয়োজন চোখে পড়েনি এ পর্যন্ত। এমনকি বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনে সমন্বয় নেই জেলা প্রশাসন, পর্যটন কর্পোরেশন ও আয়োজক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এবং পর্যটনকে তুলে ধরতে বীচ কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হলেও তেমনটা প্রচার হয়নি। সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো ছাড়া কার্নিভ্যালের তেমন কোন প্রচার করেনি আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এমনকি কার্নিভ্যাল কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হবে এবং আয়োজন সম্পর্কেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানেন না স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রচার ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা না থাকায় পর্যটকদের অধিকাংশও জানেন না কক্সবাজারে বীচ কার্নিভ্যালের মতো বিশাল আয়োজন নিয়ে।
এদিকে কার্নিভ্যাল অর্থে ব্যাপক আয়োজনের কথা থাকলেও এবার তিন দিনব্যাপী গানের কনসার্ট ছাড়া আর কোন অনুষ্ঠানসূচী নেই। বিভিন্ন দেশে পর্যটক আনাগোনা কম। এমন সময়ে কার্নিভ্যাল আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও কক্সবাজারের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের জন্য সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গানের কনসার্টের জন্য সুরম্য বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া কার্নিভ্যালের মতো বিশাল আয়োজনে অন্য কোন ধরনের অনুষ্ঠানমালার ইভেন্ট চোখে পড়েনি। ফলে বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা মহলে।
তিন দিনব্যাপী বীচ কার্নিভ্যাল-২০১৬ শুক্রবার বিকেলে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে উদ্বোধন হয়েছে। চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘কার্নিভ্যাল ইভেন্ট’ যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বীচ কার্নিভ্যাল। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্নিভ্যালে ৩ দিনব্যাপী গানের কনসার্ট ছাড়া অন্য কোন ধরনের অনুষ্ঠানমালা থাকছে না। বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের ব্যাপারে বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে কয়েকটি প্রচার সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে। অন্যবার বীচ কার্নিভ্যালের মাসখানেক আগে থেকে পর্যটন সংশ্লিষ্টসহ ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজনের নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করা হতো। কিন্তু এবারে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আয়োজক কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কোন তৎপরতা ছিল না।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজন করা হয় মূলত পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এবং পর্যটন শিল্প তুলে ধরার লক্ষ্যে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আয়োজনে নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকে। কিন্তু এবার বিচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের ক্ষেত্রে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কোন ধরনের অংশগ্রহণ নেই। এ ক্ষেত্রে গত বছর মেগা বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নানাভাবে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সাখাওয়াত আরও বলেন, গত বছর মেগা বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের সঙ্গে হোটেল-মোটলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নানা আয়োজন রেখেছিল। কিন্তু এবার কার্নিভ্যাল আয়োজনের সঙ্গে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করা তো দূরের কথা, আমাদের অবহিতও করা হয়নি।
তিনি বলেন, গত বছর মেগা কার্নিভ্যালের সময় পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বর্ণাঢ্য সাজ-সজ্জা, আগত পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ, উপহারের ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেল কক্ষে ছাড়সহ বৈচিত্র্য আয়োজন রেখেছিল। এসব আয়োজনকে ঘিরে বলতে গেলে, সেই সময় কার্নিভ্যালকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের কারণে কক্সবাজার আনন্দের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কক্সবাজারে বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজন নিয়ে তেমন কোন প্রচার না থাকায় এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করায় আয়োজকদের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাখাওয়াত।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান বলেন, কার্নিভ্যাল আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। অনুষ্ঠানের আয়োজক পর্যটন কর্পোরেশন। তারা কয়েকদিন আগে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছে। এরপরও কার্নিভ্যাল আয়োজনে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন সহযোগিতার প্রস্তুতি নিয়েছে।