ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মুক্তাঙ্গনের প্রাণচঞ্চলতা এখন নেই। এখানে হয় না কোন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা মিছিল। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৫ বছর ধরে এখানে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবি-দাওয়া, আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী এ মুক্তাঙ্গন ফের কবে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে তার কোন তথ্য নেই। আদৌ এটা উন্মুক্ত হবে কিনা তাও বলতে পারছে না কেউ। মুক্তাঙ্গন এক সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে এটি ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তবে সভা-সমাবেশ বন্ধের পাশাপাশি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পার্কটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। পার্কের বড় অংশই দীর্ঘদিন অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। আর সভা-সমাবেশ না চলার কারণে বাকি অংশও দখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে প্রায় ৮৪ শতাংশ জমির ওপর মুক্তাঙ্গন পার্কটি গড়ে ওঠে। নগরবাসীর ভ্রমণকেন্দ্র হিসাবে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জিপিওর পশ্চিম কোলঘেঁষা পার্কটি ১৯৭৯ সাল থেকে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিশেষ করে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর কমর্সূচী এখানে বেশি হতো। নব্বইয়ের দশকে মুক্তাঙ্গন পার্কে প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি এখানের সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবর বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিরোধিতা করে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পল্টন-মুক্তাঙ্গনকে ঘিরে। তবে, ওয়ান-ইলেভেনের পর মুক্তাঙ্গনের চেহারা ম্লান হতে থাকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এখানে কিছু সভা-সমাবেশ হতে দেখা গেলেও আগের মতো প্রাণ ফিরতে পারেনি। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক আদেশে মুক্তাঙ্গনে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওই সময় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কয়েকটি ইসলামী সংগঠন মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ ডাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় ডিএমপি এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন সংগঠনকে সেখানে সভার অনুমতি দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, ১৯৯০ সালের পর থেকেই পার্কটিতে দখল শুরু হয়। রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা পার্কটির একাংশ দখল করে নেয়। ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় এই গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ১৯৯৮-৯৯ সালে পার্কের জায়গায় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠনের অফিসও মুক্তাঙ্গনে খোলা হয়েছে। জানতে চাইলে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো পল্টন ময়দান। মুক্তাঙ্গন সভা- সমাবেশের জন্য উপযুক্ত কখনও ছিল না। তবে সরকার পল্টন মাঠ বন্ধ করে দেয়ার পর বিকল্প হিসেবে এই মুক্তাঙ্গন ব্যবহার করা হতো। এখন সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা সভা-সমাবেশের জন্য পল্টনের বিকল্প একটি জায়গা চাই।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন একটি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই নিষেধাজ্ঞা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। এজন্য এখানে কেউ সভা-সমাবেশ করতে চাইলেও আমরা তার অনুমতি দিচ্ছি না।’ এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডিএসসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহম্মদ বিলাল বলেন, ‘এই জায়গাটি সিটি কর্পোরেশনের নয়, এটা ঢাকা জেলা প্রশাসনের। কাজেই এটা দেখভাল বা কাউকে অনুমতি দেয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।
×