ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেলা পরিষদ নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

জেলা পরিষদ নির্বাচন

দেশে প্রথমবারের মতো ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার। বাদ ছিল পার্বত্য তিন জেলা। ভোট চলে বিকেল ২টা পর্যন্ত। ৬১ জেলার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন ২১ চেয়ারম্যান। তাই ২১ জেলায় চেয়ারম্যান বাদে অন্য পদে ভোটগ্রহণ চলে যথানিয়মে। বগুড়ায় চেয়ারম্যান পদসহ তিনটি ওয়ার্ডের সাধারণ পদে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় হাইকোর্টের নির্দেশে। জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে অবসান হলো জেলা পরিষদের প্রশাসক যুগের। আর প্রশাসক নয়, এবার দেশের সকল জেলা পরিষদ দায়িত্ব পেলেন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। ভোটগ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ৯১৫টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনটি ছিল পরোক্ষ ভোটের। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। এবার বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি অংশ না নেয়ায় এই নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নির্বাচন চলাকালে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে মিডিয়াকে বলেছেন। জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে না হলেও জনগণেরই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নির্বাচিত করেছেন। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সারাদেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এটাই সম্ভবত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে শেষ এ নির্বাচন। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। কমিশন সংসদ সদস্যদের এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছিল। বিষয়টি স্পীকারকেও অবহিত করা হয়। তারপরও কোন কোন জেলায় আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধ করা যায়নি। একটি জেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থসহ একজন ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়। নির্বাচনে বহু প্রার্থী নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে অর্থশক্তি ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোট ম্যানেজ করতে টাকা লেনদেনের কথাও উঠছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগুলোই প্রার্থীদের প্রধান টার্গেট ছিল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোটদান নিশ্চিত করতে ওই প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা ব্যালটের ছবি মোবাইলে তুলে আনার শর্তে টাকা লেনদেন হয়েছে। তাই বহু স্থানে টাকাওয়ালা প্রভাবশালী পার্থীদের কাছে হেরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা এমন অভিযোগ উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই অভিযোগ সত্য হলে তা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হবে না। এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়তে বাধ্য। তাই এখনই এসব বিষয় খতিয়ে দেখা জরুরী। ভবিষ্যতে যাতে জেলা পরিষদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যেহেতু স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করাই এ নির্বাচনের লক্ষ্য। তাই নির্বাচন কমিশনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে আরও কাজ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় সরকারের স্বাধীনতা। জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে শক্তিশালী ও স্বাধীন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা আরও একধাপ অগ্রগতি হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×