ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বহুজাতিক কোম্পানিকে আগ্রহী করতে এই উদ্যোগ

বিদেশী পরামর্শক দিয়ে এবার পিএসসি তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদেশী পরামর্শক দিয়ে এবার পিএসসি তৈরি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশী পরামর্শক দিয়ে এবার উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) তৈরি করা হচ্ছে। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় তেল- গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করতে সরকার উদ্যোগটি নিয়েছে। এর আগে গত কয়েক দফা দরপত্র ডেকেও পেট্রোবাংলা সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনে তেমন সাড়া পায়নি। পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, কাজটি জ্বালানি বিভাগের করার কথা থাকলেও পরামর্শক নিয়োগের কাজটি করে দিচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। সাধারণত পেট্রোবাংলা অথবা হাইড্রো কার্বন ইউনিট এ ধরনের কাজ করে থাকে। কিন্তু এখন বিদ্যুত বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার সেল পরামর্শক নিয়োগের কাজটি করে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মডেল পিএসসির আর্থিক এবং কারিগরি শর্তকে যুগ উপযোগী করা হবে। ১৯১০ সাল থেকে এই অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়। ষাটের দশকে খানিকটা গতি পায়। যদিও চাহিদা না থাকায় ওই সময় কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি কাজ করতে এসেও ফিরে যায়। সরকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরুর ৮৩ বছর পরে এসে আন্তর্জাতির দরপত্র আহ্বান করে ১৯৯৩ সালে। পরে এসে ১৯৯৭ সালে আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে এই দুটি দরপত্রই স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আহ্বান করা হয়। জানা গেছে গত ২৮ ডিসেম্বর পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৬টি কোম্পানির আগ্রহের প্রেক্ষিতে যাচাইবাছাই করে ৬ টি কোম্পানিকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি গুস্টাভসন এ্যাসোসিয়েটস ও পিলসবারি উইনথর্প শোপিটনাম, সিঙ্গাপুরের উড ম্যাকেঞ্জি এশিয়া প্যাসিফিক, গাফিন ক্লাইনন্ড এ্যাসোসিয়েটস, যুক্তরাজ্যের নেজান্ট এবং নিউজিল্যান্ডের রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট। জানা গেছে পরামর্শক নিয়োগের আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র চেয়ে গত জুনে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। এর পর ১৬টি কোম্পানি আগ্রহ প্রস্তাব জমা দেয়। বিশ^ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকে সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠানো হলে ২৭ ডিসেম্বর সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা কোম্পানির কাছে আর্থিক প্রস্তাব চাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে। গত সরকারের শেষভাগে এসে পিএসসি পরিবর্তন করে গভীর এবং অগভীর সমুদ্রে পিএসসির দর পরিবর্তন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, মডেল পিএসসির দর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। যদিও এর পরে দুই দফা দরপত্র ডাকলেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যথেষ্ট সাড়া দেয়নি। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের দর কমে যাওয়াতে সারা বিশ্বেই জ্বালানি অনুসন্ধানে বিনিয়োগ মন্দা চলছে। কোন কোন বহুজাতিক কোম্পনি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম খুব বেশিদিন শুরু করেনি সরকার। মডেল পিএসসি-২০০৮’র আওতায় বঙ্গোপসাগরের ২৮টি ব্লক ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০০৮ সালে আহ্বান করা দরপত্রে ওই সময় ১২টি ব্লক কেউ ইজারা নিতেই চায়নি। শুরুতে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি দরপত্র কিনলেও শেষে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস সরকারের সঙ্গে দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চুক্তি করে। পরে পিএসসির বাইরে গিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য চাপ দেয় মার্কিন কোম্পানিটি। সরকার রাজি না হলে কনোকো কূপ খনন করার আগেই বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে পিএসসি ২০১২’র আওতায় ২০১৩ সালে অগভীর সমুদ্রে ৯টি ও গভীর সমুদ্রে ৩টি ব্লকের জন্য চতুর্থ দফা দরপত্র ডাকা হয়। এ দরপত্রে চার ব্লকে তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। এর আওতায় দুটি চুক্তি হয়। এর বাইরে সরকার একটি বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে বিশেষ আইনে ব্লক ইজারা দেয়ার চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে।
×