ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে ১২ মামলার রায়, ১৫টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন

ট্রাইব্যুনালে ২৫ মামলায় শতাধিক রাজাকারের বিচার চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

ট্রাইব্যুনালে ২৫ মামলায় শতাধিক রাজাকারের বিচার চলছে

বিকাশ দত্ত ॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৫টি মামলায় শতাধিক রাজাকারের বিচারিক কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে, নতুন বছরে ট্রাইব্যুনাল থেকে ডজনখানেক মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। অন্যদিকে তদন্ত সংস্থাও নতুন বছরে ১০ থেকে ১৫টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে এখন জেলা পর্যায়ের রাজাকারদের বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২৫টি মামলায় ১১৬ জনের বিচার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। নতুন বছরে প্রায় ডজনখানেক মামলার রায় প্রদান করা হতে পারে। এরই মধ্যে তিনটি মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। একই সঙ্গে তদন্ত সংস্থা এ পর্যন্ত ৪৬টি মামলায় ২০২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে। আরও নতুন মামলা তদন্তে হাত দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে নতুন বছরে আরও ১০ থেকে ১৫টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। নতুন বছরে তদন্ত সংস্থার তদন্তে চমক থাকবে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসামির মামলার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে ৪৬টি মামলায় ২০২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছি। আগামী বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব বলে আশা করছি। নতুন বছরে তদন্ত রিপোর্টে চমক থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মামলার রিপোর্ট দেয়া হবে বলে আমি আশা করছি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করাটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের এখানে নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন প্রায় তিন হাজার আসামির বিরুদ্ধে ৬ শতাধিক অভিযোগ এসেছে। এ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে ৪৬টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আরও নতুন মামলা তদন্তে হাত দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ বিভাগকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, তদন্ত সংস্থা মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে তদন্ত শেষে প্রসিকিউশনে পাঠায়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে একের পর এক নতুন মামলা আসছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২৭টি মামলা রায় ঘোষণা করা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষে দ- কার্যকর করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি ট্রাইব্যুনালে যে সমস্ত মামলা আসছে তা সাক্ষী প্রমাণ শেষে দ্রুত শেষ করা হবে। প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর মোঃ জাহিদ ইমাম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ২৫টি মামলার বিচার কাজ চলছে। এর মধ্যে তিনটি মামলার বিচার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। তিনি আরও আশা করছেন নতুন বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রায় ডজনখানেক মামলার রায় হবে বলে আশা করছি। যে তিনটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো হলো, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধান, গাইবান্ধার জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ রাজাকার, নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার আমীর আলীসহ ৫ রাজাকার। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে ২৫টি মামলা রয়েছে তার মধ্যে নেত্রকোনার শেখ মজিদ মৌলানাসহ ৬ রাজাকার। কক্সবাজারের সালামত উল্লাহসহ ১৯ রাজাকার, কিশোরগঞ্জের সৈয়দ হুসেনসহ দুই রাজাকার, সাতক্ষীরার আব্দুল খালেক ম-ল, পটুয়াখালীর মোঃ ইসহাক সিকদারসহ ৮ রাজাকার, নোয়াখালীর আমীর আহম্মেদসহ ৪ রাজাকার, মৌলবীবাজারের সামসুল হোসেন তরফদারসহ ৫ রাজাকার, হবিগঞ্জের মোঃ লিয়াকত আলীসহ ২ রাজাকার, গাইবান্ধার আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজসহ ৬ রাজাকার, মৌলবীবাজারের মোঃ আকমল আলী তালুকদারসহ ৪ রাজাকার, ময়মনসিংহের রেজাউল করিমসহ ৮ রাজাকার, নেত্রকোনার মোঃ খলিলুর রহমানসহ ৫ রাজাকার, নেত্রকোনার হেদায়েত উল্লা অঞ্জুসহ ২ রাজাকার, বাগেরহাটের খান আশরাফ আলীসহ ১৩ রাজাকার, শেরপুরের এস এম আমিনুজ্জামান ফারুক, কুমিল্লার মোঃ শহিদুল্লাহ, নেত্রকোনার মোঃ খলিলুর রহমানসহ ৫ রাজাকার, ময়মনসিংহের আব্দুস সালামসহ ৬ রাজাকার, গাইবান্ধার আব্দুল জব্বার ম-লসহ ৬ রাজাকার, ময়মনসিংহের রিয়াজ উদ্দিন ফকিরসহ দুই রাজাকার, মৌলবীবাজারের আব্দুল আজিজসহ ৩ রাজাকার, টাঙ্গাইলের মোঃ মহিবুর রহমান, যশোরের মোঃ সিদ্দিকুর রহমান গাজী। এর মধ্যে অনেকে পলাতক রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রায় শতাধিক আসামি পলাতক রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দ-প্রাপ্ত ও বিচার চলছে এমন পলাতক আসামিরা হলো- আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আশরাফুজ্জামান খান, চৌধুরী মঈনুদ্দিন, জাহিদ হোসেন খোকন, হাসান আলী, ফোরকান মল্লিক, আশরাফ হোসেন, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া, নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক শরীফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, হারুন ও আবুল হাশেম, গাজী মোঃ আব্দুল মান্না, হাফিজ উদ্দিন ও আযহারুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবুর, আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইমসলাম, আব্দুল খালেক মোড়ল ও মশিয়ার রহমান, আবুল কালাম, মোঃ ইউসুফ, আব্দুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোঃ হুসাইন ও জয়নাল আবেদীন, কক্সবাজারের মৌলবী জকারিয়া সিকদার, অলি আহমদ, জালাল উদ্দিন প্রকাশ, সাইফুল প্রকাশ সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আব্দুল মজিদ প্রকাশ, আঃ শুক্কুর, জাকারিয়া, মৌলভী জালাল, আব্দুল আজিজ ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও অনেকে।
×