ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে দশ নোবেলজয়ীসহ ২৩ বিশষ্টি ব্যক্তির খোলা চিঠি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন গণহত্যা তুল্য

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন গণহত্যা তুল্য

দ্য রিপোর্ট ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে চিঠি দিয়েছেন ১০ নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত দুই মাস ধরে সে দেশের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। তাতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনারা অবগত আছেন যে, জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধতুল্য একটি মানবীয় বিপর্যয় মিয়ানমারে বিস্তৃৃতি লাভ করছে। গত দুই মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে তাতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছে।’ এর ফলে ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আরও ভয়ের ব্যাপার, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে আগে থেকেই চরম দরিদ্র এই এলাকাটিতে (রাখাইন রাজ্যে) মানবীয় সঙ্কট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে; যেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাটিকে গণহত্যাতুল্য বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিকট অতীতে রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া ও কসোভোয় সংঘটিত গণহত্যাগুলোর সকল বৈশিষ্ট্য এখানে দৃশ্যমান বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ রিফিউজি হাইকমিশনের বাংলাদেশ কার্যালয় প্রধান জন ম্যাককিসিক মিয়ানমার সরকারকে জাতিগত নিধন পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিযোগ করেছেন। চিঠিতে ২৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি আরও উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান আং সান সুচিকে বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও সম-নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। সুচি মিয়ানমারের নেত্রী এবং দেশটিকে সাহস, মানবিকতা ও সমবেদনার সঙ্গে পরিচালনা করার দায়িত্ব তারই। চিঠিতে বলা হয়, একই সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরী এজেন্ডা হিসেবে সঙ্কটটিকে উপস্থাপনের জন্য আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। জাতিসংঘ মহাসচিবকে জরুরী ভিত্তিতে সামনের সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমার পরিদর্শন করতে অনুরোধ করছি। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা হলেন- প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, হোসে রামোস-হরতা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়াম্স, অসকার এ্যারিয়াস, জোডি উইলিয়াম্স, শিরিন এবাদী, তাওয়াক্কল কারমান, লেইমাহ বোয়ি, মালালা ইউসাফজাই, স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন, এমা বোনিনো, রিচার্ড কার্টিস, আলা মুরাবিত, এ্যারিয়ানা হাফিংটন, স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, পল পোলম্যান, মোঃ ইব্রাহীম, জোকেন জাইট্জ, কেরী কেনেডী, রোমানো প্রদি প্রমুখ।
×