ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাইসুল সৌরভ

হেমন্তের শীত বিকেলে মৈনট ঘাটে

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

হেমন্তের শীত বিকেলে মৈনট ঘাটে

গেল কয়েক বছরে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ভ্রমণের আগ্রহ বাঁধ ভেঙ্গেছে এ কথা এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। ভ্রমণের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি ও নিত্যনতুন জায়গা আবিষ্কারের নেশা থেকে হয়ত আমাদের ভ্রমণের জায়গার তালিকায় যোগ হচ্ছে নুতন নুতন নাম। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে মৈনট ঘাট তেমনই এক নবতর সংযোজন। ভরা বরষায় প্রমত্তা পদ্মার রূপ দেখে যারা অভ্যস্ত কিংবা পদ্মার পাড়ে যাদের বাস তাদের জন্য উথাল-পাথাল ঢেউ নিয়ে হাজির হওয়া এ রূপ হয়ত নতুন কিছুই নয়; কিন্তু যাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদী থেকে শত মাইল ফারাকে বা বুড়িগঙ্গার মতো নির্জীব-মৃত্যু কোন নদীর পাড়ে। তাদের কাছে মৈনট ঘাট বিশাল সমুদ্র সৈকত তুল্য। এক বুক আক্ষেপ নিয়ে তীব্র বেগে বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া বিশাল সব ঢেউয়ের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ দেখে আনন্দ নেবার উপলক্ষ। কিন্তু বাস্তবে পদ্মার বিনাশী রূপের কাছে পরান্ত মানুষদের কাছে এ ঢেউ হাহাকারের নামান্তর মাত্র। বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে যাদের সমুদ্রের গর্জন শোনা হয়ে উঠেনি কিংবা ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে যারা আকাশের মতোই অসীম প্রশস্ত ও দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশিতে পা ভিজিয়ে ক্লান্তি দূর করার ফুসরত করে উঠতে পারেন না; তারা ঢাকা থেকে নাতিদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে মৈনট ঘাটে চলে যেতে পারেন। লোকমুখে ইতোমধ্যে মৈনট ঘাট তাই মিনি কক্সবাজার নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কক্সবাজারের মতো তীব্র গর্জনের অগণিত আওয়াজ না পাওয়া গেলেও ফুলে ফেঁপে ওঠা পদ্মার ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে চাইলে বর্ষাকালই উত্তম সময়। হেমন্তে ক্ষণে পদ্মা যে বর্ষার মতো দুর্বার তারুণ্য নিয়ে হাজির হবে না তাতো স্বাভাবিক। কক্সবাজার বা সাগরের সামান্য স্বাদ পেতে তাই মৈনট ঘাটে এখন যাওয়াটা বোকামি হবে। তবে হেমন্তে পড়ন্ত কোন মিষ্টি বিকেলে মৈনট ঘাট ভিন্ন এক মহিমায় হাজির হবে। আপনাকে বিমোহিত করবে একেবারে ভিন্নভাবে । পড়ন্ত বিকেলে পদ্মার বুকে হৈমন্তিক মৃদু হিম হাওয়াকে সঙ্গী করে সে রূপ দেখতে আপনাকে পদ্মাকে আলিঙ্গন করে নিতে হবে। নদীর বুকে ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম আকশে হেলে পড়া সূর্যের মিঠে রোদ নদীর ঢেউয়ে আলতো পরশ বুলিয়ে কমলা রঙের যে চিকিমিকি আবহ তৈরি করবে তা-ই দেখা যাবে মনের কুঠুরিতে। অববাহিকা ধরে যেতে যেতে মনে হবে শেষ বিকেলের মিহি ঢেউ নদীতে বইছে না, বইছে যেন আপন অন্তপুরে। ঢেউয়ের বিস্তার রূপও অবলোকন করা যাবে এই সুযোগে। মানবজীবন যেমন উত্থান-পতনে ভরপুর; ঢেউও বুঝি জীবনের মতোই! কোথাও নীরব-মসৃণ আবার কোথাও ঘূর্ণিতে প্যাঁচানো। নৌকা বা ট্রলারে করে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা কোন চরে যেতে পারলে ভ্রমণ যাত্রা সার্থক হবে। চরে নেমে দেখে নেয়া যাবে প্রকৃতির আপন খেয়ালে তৈরি হওয়া বালুময় হরেক কারুকার্য। সফেদ বালুর রাজ্যে গোধূলির আগুন রাঙা হলুদাভ কমলা আলো দারুণ আবহ তৈরি করবে। সাদা কাশফুলের চিরল পাতায় ঈষৎ করে পরশ বুলিয়ে যাবে আগাম শীতের বার্তা। চরে দাঁড়িয়ে চমৎকারভাবে উপভোগ করা যাবে ধীরলয়ে পদ্মার হৃদয়ে একটু একটু করে বিলীন হতে থাকা লাল গোল সূর্যটাকে। জীবনে হয়তো অসংখ্যবার সূর্যাস্ত দেখা হয়েছে, কিন্তু সূর্যটা এভাবে আকাশের বুকে অদ্ভুত সুন্দর টকটকে লাল রঙে হয়তে কখনো দেখনি! দেখে মনে হবে যেন পদ্মার শরীরে একটু একটু করে গলে গলে বিলীন হচ্ছে অরুণ। যেভাবে যাবেন : রাজধানী থেকে মৈনট ঘাট যেতে চাইলে চলে যেতে হবে ফুলবাড়ি। সেখান থেকে প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর দোহার পেরিয়ে কলাকোপা হয়ে বান্দুরা পাড়ের মৈনট ঘাটে যমুনা ডিলাক্স পরিবহন পৌঁছে যাবে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে। ভাড়া পড়বে ৯০ টাকা। রাস্তা শেষে বাস থেকে নেমে আচমকা ঘাটের উপস্থিতি চোখে পড়বে। বাস থেকে নেমে নদীর পাড়ের স্থানীয় হোটেলে বসে মুখে পুরে নিতে পারেন গরম গরম ইলিশ ভাজা আর তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে পারবেন ইলিশের পরতে পরতে ভিড়ে থাকা মোহাবিষ্ট করার মতো অপূর্ব স্বাদ। ঘাট থেকে নদীতে ঘুরে চরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে ঘণ্টা হিসাবে হাতে বা ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় নৌযান ভাড়া পাবেন ২শ’ থেকে হাজার টাকায়। যাবেন নাকি পদ্মার ঢেউয়ে জীবনের সামান্য শ্রান্তি মিশিয়ে দিতে মৈনট ঘাটে? ৎধরংঁষ.ংড়ঁৎধা@ড়ঁঃষড়ড়শ.পড়স
×