ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিশেষত আয়হীন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে গৃহবধূ, পেশাজীবীরাও এর ওপর নির্ভরশীল। মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যেই তিল তিল করে জমা হয় কিছু সঞ্চয়। কখনও সম্পদ বিক্রির টাকা, কখনও বা পেনশন, এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া তো সহজ কাজ নয়। পদে পদে তার ঝক্কিঝামেলা। থাকে লোকসান এবং প্রতারণার ঝুঁকি। অনেকেই চায় না এই ঝুঁকি নিতে। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খোঁজেন। তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র হচ্ছে আদর্শ বিকল্প। সুদের হার ভাল থাকায় এবং ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি হওয়ায় মানুষ তাই এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে আসছে। স্থায়ী আমানতের বিপরীতে বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গড়ে ছয় থেকে সাত শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে। যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাওয়ার কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে। সরকারের অর্থ ভা-ার সমৃদ্ধিশালী হওয়া প্রয়োজন। সেই অর্থই বিনিয়োজিত হয় উন্নয়নে। সঞ্চয়পত্র ও বন্ড চালুর মাধ্যমে সরকারের উপার্জন বাড়ানো হচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল পনেরো হাজার কোটি টাকা। সুদের হার কমানোর পরও বিক্রি না কমায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে আটাশ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার তেত্রিশ হাজার ছয়শ’ অষ্টাশি কোটি ষাট লাখ টাকা ধার করেছিল। এই সময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধে প্রায় কুড়ি হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। সরকার এ খাতে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া। তবে সুদ পরিশোধের কারণে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে থাকেনি। শেয়ার বাজারের দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমেছে। বর্তমানে গড়ে দৈনিক দুইশ’ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। মানুষের অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে এসেছে। আর এ কারণে মধ্যবিত্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র। সরকার বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘সভরেন বন্ড’ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই বন্ড চালু হলে মানুষ এ খাতে অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবে। দেশে তারল্য সঙ্কট না থাকায় এই বন্ড চালু যথাযথ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে সুদের হার বেশি ধরা হলে মানুষ তাতে ঝুঁকবেই। এক সময় ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ছিল, তা আর সচল নেই। অপরদিকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিতে অর্থ বিনিয়োগ জটিলতাপূর্ণ হওয়ার কারণে মানুষ এ খাতে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী নয়। একে সহজলভ্য করা হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ত এবং মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হতো। নিরাপদে অর্থ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্র যদি সরকার উন্মোচিত করে, তবে মানুষ টাকাকে অলস পর্যায়ে না রেখে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। আর মধ্যবিত্ত জীবনে সচ্ছলতার মাত্রাও বাড়বে। মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্র ছাড়া আর কোন লাভজনক বিকল্প পাচ্ছে না। সুতরাং সরকারের দায়িত্ব জনগণের এই অর্থকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা এবং আর্থিক অবস্থান উন্নত করা।
×