ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের মাটিতে কী দুর্বার বাংলাদেশ দলকে দেখার মিলেছে। বিদেশের মাটিতে দুইবছর পর খেলতে নেমেই সেই পুরনো চিত্রই ফুটে উঠল। বেহাল দশায় পড়ে গেল মাশরাফিবাহিনী। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৬৭ রানে হেরেছে। তাতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হার হয়ে গেছে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হার হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে তাও একটু ভাল খেলেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো যাচ্ছেতাই অবস্থা। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে বেহাল দশার দেখা মিলেছে। বোলিংটা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুর্দান্ত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে ৫০ ওভারে ২৫১ রানেই বেঁধে রাখা গেছে। তিন উইকেট নেয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা, দুই উইকেট করে নেয়া সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন। প্রায় সাতবছর পর খেলতে নেমে দ্বিতীয় ম্যাচেই নেইল ব্রুম দেখিয়ে দিলেন ঝলক। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকও তুলে নিলেন। ১০৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ১০৯ রান করেছেন আর কোন কিউই ব্যাটসম্যানই চমক দেখাতে পারেননি। ব্রুমের শতকে আড়াই শ’ রান করতে পারে নিউজিল্যান্ড। কিউইদের ইনিংস শেষে মনে হয়েছে, জয়টি বাংলাদেশের হাতেই ধরা দিতে যাচ্ছে। কিন্তু তা আর হলো না। দুই শ’ রানও করতে পারল না বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরা এমনই ব্যর্থ হলেন যে দল ৪২.৪ ওভারে ১৮৪ রানেই অলআউট হয়ে গেল। বাংলাদেশের ইনিংসে একটি মাত্র অর্ধশতক হলো। সেটি করলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস (৫৯)। কেন উইলিয়ামসন নিয়মিত বোলার নন অথচ তিনিই কিনা স্পিন বিষ ছড়িয়ে তিন উইকেট তুলে নিলেন। ত্রিশ রানের সময় তামিম ইকবাল (১৬) আউট হয়ে গেলেন। এরপর ইমরুল ও সাব্বির রহমান রুম্মন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়লেন। এক উইকেট হারিয়েই দল শত রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলল। এমনকি ১০৫ রানও করে ফেলে। সবাই তখন ধরেই নিয়েছিল, ঘুরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে হারের স্মৃতি দূর করে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চলেছে। সিরিজে সমতাও আনতে চলেছে। কিন্তু সব গোলমাল বেধে গেল। ভুল বোঝাবুঝিতে সাব্বির (৩৮) রান আউট হয়ে গেলেন। ২৩তম ওভারে সান্টনারের করা শেষ বলটি শর্ট কাভারে ঠেলে দিয়ে এক রান নেয়ার জন্য দৌড় শুরু করেন ইমরুল। তাতে সাড়া দেন সাব্বির। একটু এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারেন রান হবে না। তখন আবার ফিরতে চান। কিন্তু ততক্ষণে ইমরুল অনেকটা পথ এসে আর ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। ননস্ট্রাইকে এসে পৌঁছান আর সাব্বির ফিরতে চাইলেও লাভ হয়নি। ইমরুলের আগে পৌঁছাতে পারেননি। পৌঁছাতে পারেননি বিধায় রান আউটও হয়ে যান। এমনই অবস্থা হয়, এ আউটেই সব ওলট-পালট হয়ে যায়। দেখতে দেখতে ৭৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। যেখানে এক উইকেটে ছিল ১০৫ রান। সেখানে ১৮৪ রান করতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে চরম দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে। সেই সঙ্গে যেন একটি ভাল জুটি ভাঙ্গার পর যে আগে তড়তড় করে বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিতেন, সেই চিত্রও ফুটে উঠল। মুহূর্তেই জয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানরা ভাল করলেন। বোলার আর ফিল্ডারদের ভুলে দল হারল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উল্টো হলো। ব্যাটসম্যানরা এবার ডুবিয়ে দিলেন। তিন ক্রিকেটারের অভিষেক হলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। মুশফিকুর রহীম খেলতে না পারায় নুরুল হাসান সোহানের অভিষেক হলো। মুস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রামে রাখায় শুভাশিষ রায়েরও ওয়ানডে অভিষেক হলো। সেই সঙ্গে সৌম্য সরকারকে একাদশ থেকে ছেঁটে ফেলে অভিষেক করানো হলো তানভির হায়দারকেও। কিন্তু কেউই নিজেকে অভিষেক ওয়ানডেতে মেলে ধরতে পারলেন না। ব্যাট হাতে সোহান ২৪ রান করতে পারলেন। তবে তানভির ২ রানের বেশি করতে পারেননি। বল হাতে পেসার শুভাশিষ ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ৪৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। লেগ স্পিনার তানভির ৮ ওভার বল করে দেন ৪৭ রান। কোন উইকেটই নিতে পারেননি। এ তিনজনের অভিষেক হয়েছে। তাই তাদের কাছ থেকে বিশেষ কিছুর চাহিদাও ছিল না। তবে সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১) ও সাকিব আল হাসানের (৭) ব্যর্থতা চোখে পড়েছে। দৃষ্টিকটুও লেগেছে। এমন একটি ম্যাচে, যেখানে জয়ের সম্ভাবনা ছিল; সেখানে তারা কিছুই করতে পারলেন না। প্রথম ওয়ানডেতে অর্ধশতক করা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও (৩) চাপে খেই হারিয়ে ফেললেন। সাব্বির যখন রান আউট হন, তখন ইমরুলের স্কোর ছিল ৪৩। তিনিও ব্যাটিংয়ে পরে আর খুব বেশি দ্যুতি ধরে রাখতে পারেননি। এমন দশা হলো ব্যাটসম্যানদের, তাতে একটি জয়ই হাতছাড়া হলো। খুব ভাল একটি সুযোগও হাত থেকে ফসকে গেল অথচ নিউজিল্যান্ডেরও ব্যাটিংয়ে খারাপ দশা হয়েছিল। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল। সেখান থেকে ব্রুম ও লুক রনকি মিলে যে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৪ রানের জুটি গড়লেন, সেটিই নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে গেল। ১৭১ রানে রনকি (৩৫) আউট হওয়ার পর কিউইরা আবারও বিপাকে পড়ল। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ব্রুম ঠিকই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। হাল ছাড়লেন না। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের পর ঘুরে দাঁড়াল নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা অথচ সেই কাজটিই করতে পারলেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। তাতে আরেকটি ওয়ানডেতে হার হলো আর সেই হার সিরিজ হারই করে দিল। হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদেরই দুষলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আরও ধৈর্য ধরা উচিত ছিল বলেই মনে করেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য বেশি তাড়াহুড়া করেছে। ইমরুল ও সাব্বির যেমন উইকেটে থেকে তার পরে ভাল খেলছিল। এখানে ১০-১৫টা বল দেখে তার পর স্বাভাবিক খেলা খেললে ভাল হতো। আরেকটু ধৈর্য ধরে থিতু হয়ে তার পর স্বাভাবিক ব্যাটিং করা উচিত ছিল।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘যারা পরে এসেছে ব্যাটিংয়ে, সবাইকে প্রথম থেকে শুরু করতে হয়েছে। রিয়াদ দারুণ একটি বলে আউট হয়েছে। আমাদের ইমরুল বা সাব্বিরের একটা বড় ইনিংস খেলা উচিত ছিল। কারণ ওরা থিতু হয়ে গিয়েছিল। নতুনদের জন্য কাজটা কঠিন। শূন্য থেকে শুরু করতে হতো। সেট ব্যাটসম্যানদের কেউ কাজটা করলে ভাল হতো।’ ব্যাটসম্যানরা তাড়াহুড়ো করেছেন। উইকেটে থিতু না হয়ে দ্রুত রান তোলার তাগিদ দেখিয়েছেন। আর তাতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার হয়ে গেল বাংলাদেশের।
×