ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নব্য জেএমবি নেতা মুসার উত্থান কাহিনী

অনুতপ্ত পরিবার, বিচার চান শ্বশুর

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

অনুতপ্ত পরিবার, বিচার চান শ্বশুর

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ হালের নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েন রাজশাহীর বাগমারায় সেই সময়ের জঙ্গী নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের হাত ধরেই। ২০০৪ সালেই জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। ওই সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের অপারেশন শুরু হলে তার হাত ধরেই সে জেএমবিতে যোগ দেয়। তবে বয়সে ছোট হওয়ায় সে সময় প্রশাসনের নজরে আসেনি মুসা। সে সময় মুসা বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজের একাদশের ছাত্র ছিল। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বজ্রকোলা গ্রামে। তার বাবা মারা গেছেন। মা সুফিয়া বেগম এখন গ্রামেই থাকেন। তিনি জানান, ৮ মাস আগে মুসা বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বজ্রকোলা গ্রামে এসেছিল। সৌদি আরব যাবে বলে ৩ লাখ টাকার জমি বিক্রি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর সে আর বাড়ির সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখেনি। সুফিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মুসা ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনের ৬ তলায় থাকত। সেখানে কয়েকবার গেছেন তিনি। তিনি বলেন, ওই ভবনে মেজর জাহিদ নামের একজন থাকত। মেজর জাহিদ ছিল ২ তলায়। মুসার সঙ্গে মেজর জাহিদের ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। মাঝে মধ্যে কিছু লোকজনও আসত সেই বাড়িতে। ওই ভবনের ছাদে তারা মিটিংও করত মাঝে মধ্যেই বলে জানান সুফিয়া বেগম। নব্য জেএমবির প্রধান মুসা। এটি তার সাংগঠনিক নাম। তার আসল নাম মঈনুল ইসলাম। তার পিতার নাম আবুল কালাম মোল্লা। তিনি স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ সেশনে সে বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চল তথা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় অভিযান শুরু করলে মুসা জেএমবিতে যোগদান করে। ওই সময় বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হওয়ার সুবাদে এলাকায় দাপট দেখাত এবং লোকজনকে জেএমবিতে যোগদানের উৎসাহ দিত। যারা তার বিরোধিতা করত তাদের ধরে এনে নির্যাতন করাও ছিল তার কাজ। পরবর্তীতে বাংলা ভাইয়ের আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর মুসাও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। এরপর সে আবার এলাকায় ফিরে আসে। এইচএসসি পাস করার পর সে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা কলেজে চলে যায়। এরপর সেখান থেকে পাস করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। এরই মধ্যে আড়াই বছর আগে সে বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণা মনিকে বিয়েও করে। বিয়ের পর সে স্ত্রী নিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা ওই বাড়িতে থাকত। আর এখানেই থাকত নব্য জেএমবির আরেক নেতা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদ। মেজর জাহিদের মেয়ে লাইফ স্কুলে পড়ত। আর এখানেই আরেক নেতা তানভির কাদিরসহ নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী ও জিয়াসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ওই বাসার ছাদে মিটিং করত। মঈনুল ওরফে মুসার মা সুফিয়া বেগম জানান, টেলিভিশনে দেখে তিনি ছেলের জঙ্গী হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলের ঘটনায় লজ্জিত, অনুতপ্ত। এক সময় আমার ছেলে ভাল ছাত্রও ছিল। শুক্রবার থেকে আমি আর বাড়ির বাইরে বের হতে পারছি না। সবাই আমার ছেলের কথাও জিজ্ঞাসা করছে। এদিকে মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা মনির পিতা আব্দুস সামদ জানান, ৮ মাস থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে আমার মোবাইল ফোনে মিসড কল আসে। বাসার বাইরে থাকায় আমি চিন্তা করি বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে কি না। পরে বাসায় গিয়ে দেখি কোন সমস্যা নেই। আমি ওই নম্বরে ফোন করি। তখন আমার মেয়ে বলে বাবা আমি। আমার মেয়ে জানায় আমার বিপদ, পুলিশ আমাদের বাসা ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি তাকে বলি তুমি পুলিশের কাছে যাও। এরপর আর কোন কথা হয়নি। তিনি বলেন, ওই সময় আমি বুঝিনি। তার আচরণেও কখনও এমন প্রকাশ পায়নি। আর যদি জানতাম তাহলে আমি কি আর আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতাম। তিনি বলেন, আমি এখন অনুতপ্ত। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি। আমার মেয়েও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু কি করে তাকে এমন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিল আমরা কল্পনা করতে পারিনি। মুসার গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম বলেন, বাংলা ভাইয়ের আমলেও মঈনুল জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সময় তার সঙ্গে বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকজন আসত। তবে যারা আসত দু’তিনদিন থাকলেও তারা বাড়ির বাহিরে বের হতো না। এলাকায় মুসা নামে তাকে কেউ চিনে না। এলাকায় সে মঈনুল নামেই পরিচিত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
×