ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরে আলোড়িত শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরে আলোড়িত শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরে সুরে স্নিগ্ধ হয়ে উঠল ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগী শ্রোতারা মুগ্ধতায় অবগাহন করল সেই সুরধারা। উচ্চাঙ্গের কণ্ঠসঙ্গীতের সঙ্গে পরিবেশিত হলো সরোদের সুরমূর্ছনা ছড়ানো যন্ত্রসঙ্গীত। আয়োজনটি যেন মনে করিয়ে দিল এদেশের ধ্রুপদী গানের হারানো গৌরব ফিরে আসছে আবার। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তন সে কথার ইঙ্গিত দিল। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। রাজধানী দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাজানো হয়েছে এ সঙ্গীতায়োজন। পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। আমার সোনার বাংলার ... গানের সুরটি থেমে গেলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। এরপর উৎসব উদ্বোধন করেন দিনাজপুর থেকে আসা ওস্তাদ সাইমুদ আলী খান। উদ্বোধনী কথন শেষে ওই বর্ষীয়ান শিল্পী পরিবেশন করেন রাগ ঝিঝিট। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাগ-রাগিনীর আশ্রয়ে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। অসিত কুমার দে’র পরিচালনায় প্রথমেই সম্মেলক কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানটের শিল্পীরা। কণ্ঠের মাধুর্যে উপস্থাপিত হয় রাগ দেশ। ঢাকার শিল্পী মোঃ ইয়াকুব আলী খানের পরিবেশনায় উঠে আসে রাগ মধুবন্তী। রাগ ছায়ানটের আশ্রয়ে আপন কণ্ঠটি মেলে ধরেন লতিফুন জুলিও। তিনটি কণ্ঠসঙ্গীতের পরিবেশনা শেষে সরোদের মিষ্টি সুরে শ্রোতার মননে প্রশান্তির পরশ ছড়িয়েছেন রাজরূপা চৌধুরী। সরোদের বাদন শেষে রাগ যোগের আশ্রয়ে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন সালাউদ্দিন আহ্মেদ। সতীন্দ্রনাথ হালদারের পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের অধিবেশন। রাগ মধুকোষের আশ্রয়ে এই শিল্পী পরিবেশন করেন কণ্ঠসঙ্গীত। প্রথম দিনের আয়োজনটি সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়ে চলবে রাতব্যাপী। স্থাপনাশিল্পী প্রদর্শনী ‘স্বাধীনতা ও ইত্তেফাক’ ॥ পথচলার ৬৪ বছরে পর্দাপণ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক। এ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে শুরু হলো ‘স্বাধীনতা ও ইত্তেফাক’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পী প্রদর্শনী। তিন দিনের এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের সাক্ষী এই সংবাদপত্রটির প্রতিটি পদক্ষেপে কিংবা ভাবনায় যে মানুষ ও দেশ মিশে রয়েছে তাই ফুটে উঠেছে তরুণ শিল্পীদের উপস্থাপনায়। সংবাদপত্রের পাতাকে অবলম্বন করে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন ইত্তেফাকের ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ। ফুটে উঠেছে ঐতিহাসিক সব হেডিং। সেসব হেডিং-এ মিশে রয়েছে দেশের একেকটি ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সব শেষে স্বাধীনতা উপস্থাপিত হয়েছে শিল্পের মাধ্যমে। সহজাতভাবে উচ্চারিত হয়েছে পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার কথা। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। সভাপতিত্ব করেন ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নারীনেত্রী ও জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানিক মিয়ার কনিষ্ঠপুত্র পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম থেকে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’কে আলাদা করা যাবে না। পত্রিকাটি আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গী হয়ে আছে। তিনি বলেন, যে কোন সংগ্রামের জন্য অসি ও মসি দু-ই দরকার হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অসি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর মসি ছিলেন ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। শুধু মুক্তিযুদ্ধেই নয় স্বাধীন বাংলাদেশেও অদ্যাবধি স্বশাসনের আন্দোলন, বাংলা ভাষা ও বাঙালী সংস্কৃতি চর্চায় ইত্তেফাক ভূমিকা রেখে চলেছে। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সাংবাদিকরা যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, তাদের নীতি ও নৈতিকতা থাকতে হয় উল্লেখ করে ইনু বলেন, দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে মানিক মিয়া তার নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে দেশ ও জাতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এ জন্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী প্রথমেই তার পত্রিকা ইত্তেফাক ও এর অফিস পুড়িয়ে দেয়। শিল্পী হাশেম খান বলেন, ইত্তেফাকের মাধ্যমে এমন অভিনব প্রদশর্নী প্রশংসার দাবিদার। ইত্তেফাক শুরু থেকে আজ অবধি অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করে চলেছে। প্রদর্শনীতে তরুণ শিল্পীরা ইত্তেফাকের দীর্ঘ প্রকাশনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছেন। একদিকে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন অপরদিকে সে আন্দোলনে সংবাদপত্রের ভূমিকা। এসব বিষয়কে ভাবনায় রেখে স্থাপনাশিল্পে বেশ কয়েকটি পর্বে শিল্পীরা তুলে ধরেছেন তাদের শিল্প-ভাবনা। ‘ভ্রুণ’, ‘অপরাজেয়’, ‘রাজারবাগের সংবাদ’, ‘পদক্ষেপ’, ‘চরমপত্র (একাত্তরের অস্ত্রহীন যুদ্ধ)’, ‘ক্ষুদে বার্তা’, ‘পটচিত্র’, ‘বিনোদিনী’, ‘সংবাদের রাজ্য’, ‘সম্পাদকের কক্ষ’ ও ‘আদর্শলিপি’। এসব পর্বে তারা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বিভিন্ন পর্ব এবং ইত্তেফাকের ভূমিকার কথা। প্রদর্শনীর কিউরেটর ছিলেন শিল্পী অভিজিত চৌধুরী। প্রদর্শনী চলবে শনিবার পর্যন্ত। আজ শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। কাল শনিবার সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে।
×