ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছরের ভুয়ো খবরগুলো যা অনেকে বিশ্বাস করেছিলো

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

চলতি বছরের ভুয়ো খবরগুলো যা অনেকে বিশ্বাস করেছিলো

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’-কে নাকি ইউনেস্কো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বছর ছ’য়েক আগে এই খবরটি প্রবল ভাবে প্রচারিত হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার এত দাপাদাপি তখন না থাকলেও খবরটি ছড়াতে বিশেষ সময় নেয়নি। কয়েকটি সংবাদপত্র ফলাও করে তা ছাপিয়েও দিয়েছিল। পরে জানা যায় খবরটি ভুয়ো। এমন কোনও ‘প্রতিযোগিতা’র খবর অস্বীকার করেছে খোদ ইউনেস্কো। বিষয়টি কয়েক বছর ধামাচাপা পড়ে যায়। আবছা হয়ে যায় সাধারণ মানুষের স্মৃতি থেকেও। চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে ফের হাজির হয় খবরটি। এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। শুধু জাতীয় সঙ্গীতের বিষয়টি নয়, এরকম একাধিক ভুয়ো খবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চলতি বছর ছড়িয়েছিল, যা আমরা প্রায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। হাল ধরতে কখনও ইউনেস্কো, তো কখনও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আসরে নামতে হয়েছিল। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, ভুয়ো খবর রুখতে গত মাসে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ফেসবুক এবং গুগল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি ভুয়ো খবর যা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চলতি বছর ভাইরাল হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীকে বিশ্বের সেরা প্রধানমন্ত্রী বেছে নিল ইউনেস্কো। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই মেসেজ ঘুরতে থাকে। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক এবং টুইটারে। মোদীকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ। আসরে নেমে ইউনেস্কো জানায়, এমন কোনও ঘোষণা তারা করেনি। ‘জন গণ মন’কে বিশ্বের সেরা জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো। ছ’বছর আগের সেই খবর সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ফের ছড়িয়ে পড়ে। ইউনেস্কোর তরফে অবশ্য আগেই খবরটিকে ভুয়ো বলে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসের সময় থেকে ফের এই খবর ছড়াতে শুরু করে। ২০০০ টাকার নোটকে বিশ্বের সেরা নোটের তকমা দিল ইউনেস্কো। নোট বাতিল কাণ্ডে জর্জরিত দেশে এই মেসেজ ছড়াতে একেবারেই সময় লাগেনি। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় মেসেজটি। দিন কয়েকের মধ্যেই অবশ্য জানা যায় খবরটি ভুয়ো। কালো টাকা রুখতে নতুন নোটে জিপিএস চিপ লাগানো আছে। নভেম্বরের ৮ তারিখ নোট বাতিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে যায় এই মেসেজ। মেসেজে দাবি করা হয়, এই জিপিএস চিপ নাকি এতটাই উন্নত যে, নোট যেখানেই লুকনো থাক না কেন, সেখান থেকে উপগ্রহে নিজের সঠিক অবস্থান জানিয়ে দেবে সে। চিপ থাকার বিষয়টি অবশ্য একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। রেডিওঅ্যাক্টিভ কালি দিয়ে ছাপা হচ্ছে নতুন ২০০০ এবং ৫০০র নোট। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চিপ থাকার খবর বাতিল করার পর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে, চিপ নয়, আসলে রেডিওঅ্যাক্টিভ কালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নোট। কালো টাকার খোঁজ পেতে তা নাকি অব্যর্থ। এই তথ্যেরও কোনও স্বীকৃতি মেলেনি আরবিআইয়ের তরফে। নতুন নোটে কিছু লিখলেই তা বাতিল হবে। খবরটি ছড়ানোর জন্য এ ক্ষেত্রে আবার অভিনব একটি উপায় নেওয়া হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে অকাট্য প্রমাণ হিসাবে যোগ করা হয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা। এ ক্ষেত্রেও খবরটির সত্যতা স্বীকার করেনি শীর্ষ ব্যাঙ্ক। জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য আপনার হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলের ছবি ব্যবহার করছে ইসলামিক স্টেট। এই মেসেজের ‘ভিত’ মজবুত করতে ব্যবহার করা হয় দিল্লি পুলিশের ‘কমিশনার’ এ কে মিত্তলের নাম। পাশাপাশি জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষও কাজ করছে এবং ২০-২৫ দিনের মধ্যে সমাধানও বেরিয়ে আসবে। পরে জানা যায়, দিল্লি পুলিশের কমিশনারের নাম এ কে মিত্তল নয়। এমনকী যে মোবাইল নম্বরটি মেসেজের সঙ্গে দেওয়া ছিল তা-ও একটি কালো তালিকাভুক্ত নম্বর। ১০ টাকার কয়েন বাতিল ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নোট বাতিল হওয়ার মেস কয়েক আগে এই মেসেজটি ভাইরাল হয়ে যায়। অবস্থা আরও খারাপ হয় নোট বাতিল ঘোষণার পরে। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। জানানো হয়, ১০ টাকার সব কয়েনই বৈধ। কেউ তা নিতে অস্বিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নির্দেশও দেওয়া হয়। আমেরিকায় থাকেন জয়ললিতার মেয়ে। আম্মার মৃত্যুর পর এক মহিলার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। দাবি করা হয়, ইনি জয়ললিতার মেয়ে এবং আমেরিকার বাসিন্দা। পরে জানা যায় খবরটি ভুয়ো। ছবির মহিলা বিখ্যাত সুরকার ত্রিভান্দ্রাম বালাজির শ্যালিকা এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। দেশে নুনের আকাল আসতে চলেছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই ভুয়ো খবরে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু জায়গায় নুনের দাম চার গুণ বেড়ে যায়। মানুষ গভীর রাতে দোকানে দোকানে লাইন দিয়ে ঘরে নুন জমিয়ে রাখতে শুরু করে। পরে কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশে নুনের ভাণ্ডার কমে আসার খবর উড়িয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ভুয়ো খবরের জেরে পারমাণবিক হামলার হুমকি। সাধারণ মানুষের গণ্ডি পেরিয়ে ভুয়ো খবরের শিকার এ বারে খোদ রাষ্ট্র। সিরিয়ায় পাক বাহিনী পাঠালে ফল খারাপ হবে, ইজরায়েলের এই ভুয়ো হুমকিকে সত্যি ধরে নিয়ে পাল্টা পারমাণবিক হামলার হুমকি দেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। করোনা বিয়ার সংস্থার মালিকের মৃত্যুর পর জানা যায়, তিনি তাঁর গ্রামের প্রত্যেককে ২০ লক্ষ ইউরো দিয়ে গিয়েছেন। পরে জানা যায়, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। উনি প্রচুর টাকা গ্রামে দিয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা নেহাতই গির্জা এবং কয়েকটি সংস্থাকে। গ্রামবাসীদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×