ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুব হাসান

হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র

লিওনার্ড কোহেন গত অক্টোবর মাসেই প্রকাশ হয় তাঁর ১৪ নম্বর এ্যালবাম ‘ইউ ওয়ান্ট ইট ডার্কার’। এ্যালবামটিকে ‘মাস্টারপিস’ উপাধি দেয় দ্য টেলিগ্রাফ। কে জানত এক মাস পরই ৭ নবেম্বর ২০১৬ পরপারে চলে যাবেন ৮২ বছর বয়সী কানাডিয়ান এই কবি, গীতিকার। ১৯৩৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জন্ম কোহেনের। কৈশোরে গিটার বাজানো শিখতে শিখতেই বানিয়ে ফেলেছিলেন লোকগীতির দলÑ ‘দ্য বাকস্কিন বয়েজ’। শুধু গান নয়, কবিতা লিখতেও খুব ভালবাসতেন তিনি। অসম্ভব ভক্ত ছিলেন স্প্যানিশ কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার। কোহেনের গান তাই শুধু গান নয়। সেগুলো আদ্যন্ত কবিতা। লেখক হিসেবে অসম্ভব খুঁতখুঁতে ছিলেন তিনি। যার সব থেকে চমকদার উদাহরণ কোহেনের সব থেকে পরিচিত গান। ক্রমাগত লিখে যাচ্ছিলেন গানটা। কিন্তু কিছুতেই মনমতো হচ্ছিল না লিরিক। বারবার খসড়া বদলে শেষ পর্যন্ত ৮০টা লাইন চূড়ান্ত করেন কবি। সেই লাইন থেকে আবার কেটেকুটে তৈরি হয় সেই দুনিয়া কাঁপানো ত্রিশ লাইনÑ ‘হ্যালেলুইয়া’। ১৯৬৭ সালে কোহেনের প্রথম এ্যালবাম ‘সংগ্স অব লিওনার্ড কোহেন’। এর পর একের পর এক এ্যালবামÑ ‘সংগ্স ফ্রম আ রুম’ (১৯৬৯), ‘সংগ্স অব লাভ এ্যান্ড হেট’ (১৯৭১) এবং ‘ডেথ অব আ লেডিসম্যান’ (১৯৭৭)। প্রতিটি এ্যালবাম তাঁকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিল। মাঝখানে অনেক দিন চুপ ছিলেন চারণকবি। ফিরে আসেন এই শতকের গোড়ায়। ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় ‘টেন নিউ সংগ্স’। তারপর আরও চারটি এ্যালবাম বেরিয়েছে। তাঁর শেষ এ্যালবাম বেরিয়েছে মৃত্যুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে। ‘ইউ ওয়ান্ট ইট ডার্কার’ নামের সেই এ্যালবামে কবি ফিরে গিয়েছেন বিষাদে গাথা তাঁর শিকড়ে। জর্জ মাইকেল ৫৩ বছর কি বা এমন বয়স? অথচ এই অল্প বয়সেই পৃথিবীর মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন আশির দশকের সাড়া জাগানো ব্রিটিশ পপ তারকা জর্জ মাইকেল? গান গেয়ে মাতিয়েছেন বিশ্বকে। বিখ্যাত সব গানের অধিকারী ছিলেন তিনি। আর বিদায় নিলেন নিজের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে। গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ রোববার রাত ১১টার দিকে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে নিজের বাসভবনে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চিরতরে হারিয়ে গেলেন এ ব্রিটিশ গায়ক। ১৯৮২ সালে সঙ্গীতশিল্পী জর্জ মাইকেল ও এ্যান্ড্রু রিজলি গড়ে তুলেছিলেন ‘হোয়াম’। ১৯৮৬ সালে হোয়াম ভেঙে যাওয়ার পর তিনি একক ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। গানেই শুরুটা করেছিলেন। শেষটাও যেন গানের মতোই হলো। তার উল্লেখযোগ্য একক এ্যালবামের মধ্যে রয়েছে, ওয়েক মি আপ, ফ্রিডম, কেয়ারলেস হুইসপার, আই এ্যাম ইউর ম্যান এবং দ্য এজ অব হেভেন। বিশ্বব্যাপী তার এ্যালবামের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। কেবল স্বতন্ত্র কণ্ঠই নয়, চেহারার কারণেও মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে ৮০ দশকে তরুণীদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন ‘কেয়ারলেস হুইসপার’-এর এই গায়ক? সেই তরুণীরাই হয়ত আজ আক্ষেপ করে বলছেন ‘নেভার গনা ড্যান্স এগেইন’? ডেভিড বোওয়ি ১১ জানুয়ারি ২০৬ সোমবার আমরা হারাই প্রখ্যাত ব্রিটিশ সঙ্গীতকার ডেভিড বোওয়িকে। ৬৯ বছর বয়সী এই শিল্পী ১৮ মাস যাবত ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে চলে যান। ৮ জানুয়ারি ২০১৬, তার জন্মদিনে ডেভিড বোওয়ির শেষ এ্যালবাম ব্লাকস্টার প্রকাশিত হয়। কয়েক দশক ধরে পপ গানের জগতে জনপ্রিয় নাম ডেভিড বোওয়ি। ১৯৪৭ সালের ৮ জানুয়ারি দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটনে জন্ম নেন ডেভিড বোওয়ি। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় ডেভিড জোনস। ১৯৬৬ সালে তারকাখ্যাতির সূচনালগ্নে তিনি নাম কিছুটা পাল্টে রাখেন ডেভিড বোওয়ি। ১৯৭২ সালে ‘দ্য রাইজ এ্যান্ড ফল অব জিগি স্টারডাস্ট’ ও ‘স্পাইডার্স ফ্রম মার্স’ গানের জন্য তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে চলে আসেন। তাঁর অন্য জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লেটস ড্যান্স’, ‘স্পেস অডিটি’, ‘আন্ডার প্রেশার’ প্রভৃতি। তাঁর সর্বশেষ দুটি এ্যালবাম ‘দ্য নেক্সট ডে’ এবং ‘ব্ল্যাকস্টার’ বিক্রয় তালিকার শীর্ষে ছিল। ৭০-এর দশক থেকে শুরু করে পরের কয়েক দশক সঙ্গীত ও ফ্যাশনে ডেভিড বোওয়ি দারুণ প্রভাব রাখেন। মঞ্চে জমকালো পোশাক আর বিচিত্র ভঙ্গিমার পরিবেশনা তরুণদের কাছে তাঁকে আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। মঞ্চে জমকালো পোশাক আর বিচিত্র ভঙ্গিমার পরিবেশনা তরুণদের কাছে তাঁকে আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাঁর শেষ সরাসরি মঞ্চ পরিবেশনা ছিল ২০০৬ সালে নিউইয়র্কের একটি চ্যারিটি কনসার্টে। অভিনয়েও অনন্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন বোওয়ি। ১৯৭৬ সালে দ্য ম্যান ফেল টু আর্থ ছবিতে ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েনের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া ল্যাবিরিন্থ, ক্যাট পিপল, দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট এবং দ্য হাঙ্গার ছবিতে তাঁর অভিনয় বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। প্রিন্স রজার্স নেলসর প্রিন্স, আশির দশকের সঙ্গীতকে তিনি সংজ্ঞায়িত করেছিলেন ‘কিস’ কিংবা ‘পার্পেল রেইন’-এর মাধ্যমে, একই সঙ্গে সুরের স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায়, লড়াই করেছেন তার জন্যও। গত ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার মাত্র ৫৭ বছর বয়সে এ পপ আইকনের প্রয়াণের খবরে তাই চিরাচরিত রং পরিবর্তন করে বেগুনিতে বদলে যায় আমেরিকার খবরের কাগজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট। প্রিন্সের জন্ম ১৯৫৪ সালে। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি গান লিখতে শুরু“করেন। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করতে শুরু করেন ১৯৮০-এর দশক থেকে। প্রিন্স ছিলেন একাধারে বাদক, গায়ক, কবি ও সুরস্রষ্টা। সঙ্গীত অঙ্গনে ব্যাকরণ ও প্রযুক্তির উন্নতিতেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যদিও ১৯৭৮ সালে নিজের ‘ফর ইউ’ এ্যালবাম প্রকাশের আগে অসংখ্য অসফল গানের রেকর্ড করেছেন তিনি। ফর ইউর এক বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত ‘প্রিন্স’ এ্যালবামটি, যা কিনা প্লাটিনাম রেকর্ডের তালিকায় জায়গা করে নেয়। তুমুল জনপ্রিয় হয় এ্যালবামের ‘হোয়াই ইউ ওয়ানা ট্রিট মি সো ব্যাড?’ ও ‘আই ওয়ানা বি ইওর লাভার’ গান দুটি। প্রিন্স এ্যালবামের জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় ‘ডার্টি মাইন্ড’ (১৯৮০), ‘কনট্রোভার্সি (১৯৮১)’ ও ‘নাইনটিন হান্ড্রেড নাইটি নাইন’ (১৯৮২) এ্যালবামগুলো প্রকাশিত হয়, যা কিনা প্রিন্সের সূত্র মেনেই জনপ্রিয়। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ডদল ‘দ্য রেভলুশন’। সে বছরই প্রকাশিত হয় ‘পার্পেল রেইন’। বাকিটা ইতিহাস! ১০ কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে পার্পেল রেইনের, আর এর মাধ্যমে সর্বকালের সেরা বিক্রীত শিল্পীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। কেবল এই নয়, গ্র্যামিতে সাতটি পুরস্কারসহ গোল্ডেন গ্লোব ও অস্কার এনে দেয় এটি।
×