ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য শিক্ষার মানোন্নয়নসহ সার্বিক পরিচালনায় গতি আনা

বাস্তবায়ন শুরু ’১৭ সালে ॥ রাবি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

বাস্তবায়ন শুরু ’১৭ সালে ॥ রাবি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী/ কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ এবার আরও আধুনিকভাবে রূপ নিতে যাচ্ছে মতিহারের সবুজ চত্বর নামে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৭২৩ একরের বিশাল ক্যাম্পাসকে সুবিন্যস্ত করে শিক্ষার মানোন্নয়নসহ সার্বিক পরিচালনায় গতি আনতে নেয়া হয়েছে ৫০ বছর মেয়াদী উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া এই মহাপরিকল্পনা পেশ করা হয় সরকারের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে নেয়া ৫০ বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বস্তবায়নে গত ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় ৩৬৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথম চার বছরের জন্য এই টাকার অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী বছর থেকে শুরু হবে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। চার বছর পরপর একনেক থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ অনুমোদন দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা চলে আসে। তাই সবকিছু ঢেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাজাতে আমরা মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছি। ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ সবকিছুতে স্বচ্ছতা আনতে আমাদের হাতিয়ার হলো ডিজিটালাইজেশন। জানা গেছে, প্রথম চার বছরের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হবে ১০ তলা বিশিষ্ট দুটি আবাসিক হল (ছেলে ও মেয়ে), শিক্ষকদের জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবন, ২০ তলা বিজ্ঞান ভবন এবং শেখ রাসেল মডেল স্কুলের চার তলা ভবন। এছাড়া বর্ধিত করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন, কৃষি অনুষদ ভবন, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন, চারুকলা অনুষদ ভবন ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল। সংস্কার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোটা ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারপাশের দেয়াল, ফুট ওভারব্রিজ এবং ড্রেনেজ প্রকল্পকে নেয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানের ভেতরে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও কৃষি অনুষদের জন্য আলাদা একটি ডিন্স কমপ্লেক্স ও গবেষণার জন্য ল্যাব নির্মাণ করা হবে। মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ক কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়নেও নেয়া হয় মহাপরিকল্পনা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আটটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনায় একাডেমিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক, ইনস্টিটিউট, ছাত্র হল, ছাত্রী হল, শিক্ষক আবাসন এবং স্পোর্টস ও এ্যাথলেটিক জোন- এই আট ভাগে ক্যাম্পাসকে ভাগ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের পরিচালক মোঃ আফসার আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়নে নেয়া মহাপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ড প্রাঙ্গণকে আধুনিক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিটোল টাটার সহযোগিতায় একটি আধুনিক মানের বাসস্ট্যান্ড ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ডিজাইনে বাসস্ট্যান্ড প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণ পাকা করা হবে। প্রতি ১০ বছর অন্তর গাড়ি ও চালক সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। ২০১৫ সালের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন তেল পাম্প ছিল না। বাইরে থেকে তেল ক্রয় করে পরিবহন খাত চালানো হতো। বর্তমান প্রশাসন ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একটি নিজস্ব পাম্পের ডিলারশিপ নেয়। পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতি মাসে ৯ হাজার লিটার তেল দরকার হয়। যা বাইরে থেকে কিনতে ৯০ হাজার টাকা বেশি গুনতে হতো। বর্তমানে এই অর্থ সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাতে জমা থাকছে। সার্বিক বিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন ২০১৩ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য, অনুন্নয়ন ও ঋণের বোঝায় জর্জরিত ছিল। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে আনতে আমরা স্বচ্ছতা, যোগ্যতা এবং জবাবদিহিতার ওপর জোর দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কাজে ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োগে আমরা হাতেনাতে পেয়েছি ফল। আর এর ধারাবাহিকতায় মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছি।
×