ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

নারী নির্যাতন

জয়পুরহাটের কালাইয়ে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত নবম শ্র্রেণীর ছাত্রীর জ্ঞান ফেরেনি ঘটনার পাঁচদিন পরও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে তাকে রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। পরিবারের ধারণা, ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে দেয়াল টপকে এসে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত। তবে কে বা কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা জানে না পরিবার। অতঃপর শেষ ভরসা ছাত্রীটির যদি জ্ঞান ফিরে আসে এবং তার স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে শেষ পর্যন্ত, তবে তার ভাগ্য। এটিকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আর ঘটনাটি কেবল ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে অথবা ধর্ষিতা পরিবার, সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করছে। তদুপরি তথাকথিত সামাজিক বিচারের রায়ে ধর্ষকের পরিবর্তে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ধর্ষিতাকে। উৎপীড়িত পরিবারটিকে করা হচ্ছে একঘরে। কোথাও যদি ধর্ষকের শাস্তি হয়ও তবে তা নামমাত্র। অথচ অসহায় ধর্ষিত মেয়েটিকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় কলঙ্কের বোঝা। আরও যা ট্র্যাজেডি তা হলো, ধর্ষণ, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা অনেক সময় আসে না গণমাধ্যমে। পরিবারের মানসম্মান, মেয়েটির সম্ভ্রম, সামাজিকতা ও লোকলজ্জার ভয়ে চেপে যাওয়া হয় অথবা দেয়া হয় ধামাচাপা। শেষ পর্যন্ত সামাজিক বাধাবিঘœ পেরিয়ে যেসব ঘটনা ঠাঁই পায় গণমাধ্যমে তাতে দেখা যায়, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর শিশুসহ সব ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। এ বছর সর্বাধিক আলোচিত ছিল সোহাগী জাহান তনুর ঘটনা। ২৩ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায় তনুর লাশ। দুই দফা ময়নাতদন্তে শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় যে, হত্যার আগে তনুকে অন্তত তিনজন ধর্ষণ করেছিল। তবে এত মাস পরও তনু হত্যা মামলার অগ্রগতির কোন খবর নেই। যদিও তনু হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে সারাদেশের মানুষ। অবশ্য এর বাইরেও সার্বিকভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন-নিপীড়ন। এমনকি যৌতুক না পেয়ে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর জিহ্বা ও পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে সিলেটে। নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে বাংলাদেশের নারী সমাজ বিশ্বে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে এদিক থেকে। অবশ্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ সীমিত ও সীমাবদ্ধ। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আছে বিস্তর। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। আর সেজন্য শুধু আইন থাকলেই হবে না, এর পাশাপাশি সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বিষয়টি সমাজে এখনও অগ্রহণযোগ্য। সে অবস্থায় সহিংসতার শিকার নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অভিগম্যতা বাড়ানো না গেলে সেটার বাস্তবায়ন কঠিন। সরকার ও আদালত সেক্ষেত্রে নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।
×