ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য বাতায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

স্বাস্থ্য বাতায়ন

ঘরের বাতায়ন বা জানালা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা এখন পৌঁছে যাচ্ছে ঘরের ভেতরেই ফোনের মাধ্যমে। জরুরী বা যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় যে কোন স্থান থেকেই সহজে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার চাবিকাঠি হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নেয়া হচ্ছে নিত্যনতুন নানা উদ্যোগ। নানা সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়েও এক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সাফল্য এসে ধরা দিচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মহানগরীর অলিগলি পর্যন্ত সবখানেই হাতের নাগালে মিলতে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যাকে অভিহিত করছেন চিকিৎসা এখন হাতের মুঠোয়। অর্থাৎ মুঠোফোনের মাধ্যমে মুহূর্তেই স্বাস্থ্যসেবা দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন।’ এর মাধ্যমে দেশের মানুষ এখন অতি সহজেই চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে। এ সেবা গ্রহণকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারছেন। এ ছাড়া দেশের যে কোন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের তথ্য বা ফোন নম্বর পাওয়া এখন সহজতর। সেইসঙ্গে সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার এবং অভিযোগকারীকে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার অবাধ ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে জরুরী মুহূর্তে এ্যাম্বুলেন্স ডাকা ও বুকিং দেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা। যে কোন ধরনের দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণের মাধ্যমে অতি দ্রুত সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তাও রয়েছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের কল সেন্টারে প্রতিদিন মোট তিনটি শিফটের প্রতিটিতে পর্যাপ্তসংখ্যক এমবিবিএস এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তথ্য প্রদানকারী বা এজেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। যাদের দৈনিক কুড়ি হাজার কল গ্রহণ ও সেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। দেশের ষোলো কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রতি ৪ হাজার ২শ’ ৫১ জনের জন্য মাত্র একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। বাস্তব কিছু কারণে দেশে এখনও চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল সেবার যুগে গ্রামাঞ্চলে রোগীকে হাতুড়ে ডাক্তার এবং ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করতে হয়। এরপরও উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে দুরূহ। গরিবরা তাদের আয়ের বেশিরভাগই ব্যয় করেন চিকিৎসাসেবার পেছনে। মধ্যবিত্তরাও সীমিত আয়ের বড় অংশ এ খাতে ঢেলে দেন। এ অবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রকে করেছে সম্প্রসারিত। প্রযুক্তির সাহায্যে চালু হওয়া টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা, ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতির পাশাপাশি মোবাইল ফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমেও রোগীরা চিকিৎসাসেবা পেয়ে আসছেন। তবে এসব উদ্যোগের প্রচার কম থাকায় সাধারণ মানুষ এর সুফল গ্রহণে এগিয়ে আসতে পারছেন না। স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবাটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পৌঁছালেও দেখা গেছে তার ব্যবহার মানুষ করতে পারছেন না। তেরো লাখ মানুষ গত আট মাসে এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার মানুষ এই কল সেন্টার থেকে সাহায্য পেয়ে থাকেন। ষোলো কোটি মানুষের মধ্যে এ সংখ্যা অনেক কম। যদিও প্রতিদিন গড়ে পঞ্চাশ হাজার মানুষের এই সেবা পাওয়ার কথা। ১৬২৬৩ হেল্প লাইনে কল করার মাধ্যমে মুহূর্তেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার এই সুবর্ণ সুযোগটি সাধারণ মানুষ যাতে এস্তেমাল করতে পারেন সে জন্য ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বাতায়ন যেন জানালা ভেদ করে মানুষের মনে ঠাঁই নিতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশক। এক বছরের বেশি সময় আগে চালু হওয়া এ পদ্ধতি বিপুল জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় যাতে আনতে পারে সেজন্য সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। স্বাস্থ্যসেবা হাতের মুঠোয় থাকতে পারে যাতে সেজন্য সঠিক পন্থা গ্রহণ করাই হবে যথাযথ।
×