ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পানি সম্মেলনে পানি সম্পদমন্ত্রী

এসডিজি অর্জনে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

এসডিজি অর্জনে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সাফল্য পানি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করবে। আমরা এমডিজিতে সফল হয়েছি। আশাকরি, এসডিজির ক্ষেত্রে সেই সফলতাকেও আমরা ছাড়িয়ে যাব। এজন্য এসডিজির ৬ নম্বর লক্ষ্য (সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা) অর্জনে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে সরকার কাজ করছে। এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবস্থাপনার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য সরকার নদী ড্রেজিং, দূষণ রোধ, বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ, খাল খনন, হাওড় ও বিল সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও এর ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আর পানির ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী জাতীয় পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পিকেএসএফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ (বিইউপি) ও এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে টেকসই পানি শাসন ঃ প্রাপ্যতা, ব্যবস্থাপনা, প্রবেশাধিকার’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, বিইউপি নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানু এবং এনজিও ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এস এমএ রশিদ। জলবায়ু পরির্বতনের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাবে- বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অনুষ্ঠানে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডের কয়েকটি বন্দরের অবস্থান সমুদ্রসীমার ৫ মিটারের নিচে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ড ইতোমধ্যে মডেল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে তলিয়ে যাওয়ার বদলে বাংলাদেশেরও এক্ষেত্রে মডেল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রাচুর্যতার কারণে আমাদের এখানে পানি ব্যবহারে সচেতনতা কম। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে মোট পানি প্রবাহের ৮০ শতাংশ হয় চার মাসে। আর বাকি আট মাসে প্রবাহিত হয় ২০ শতাংশ। সংরক্ষণের ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রচুর পরিমাণ পানির অপচয় হচ্ছে। এজন্য বাঁধগুলোর আধুনিকায়ন, পোল্ডারগুলোর পুনঃনক্সায়ন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রয়োজন বলে মন্ত্রী মনে করেন। তিনি আরও বলেন, তিস্তার ওপর আমাদের যে অধিকার সেটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি চলছে। তবে তিস্তায় এখন যতটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে, তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম ব্যবহার করা হচ্ছে। মাত্র দেড় লাখ হেক্টর জমির সেচে এটি কাজে লাগানো হচ্ছে। অথচ এর মাধ্যমে চার থেকে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমির সেচ সম্ভব। গঙ্গায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে পানির ব্যবহার বাড়াতে গঙ্গায় বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলেও মন্ত্রী মনে করেন। সভাপতির বক্তব্যে কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, পানির সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্ক রয়েছে। পানি সংক্রান্ত সমস্যা যেমন-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা ইত্যাদি দারিদ্র্য সমস্যাকে গভীর করে। এই সমস্যা সমাধান করতে পারলে মানুষের আয় বাড়বে, বৈষম্য কমবে ও জাতীয় আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা বিশাল একটি কাজ। কোন দেশের সরকারের পক্ষে এককভাবে এটি করা সম্ভব নয়। এসডিজিতেও তাই বলা হয়েছে। এজন্য সরকারী-বেসরকারী ও নাগরিক উদ্যোগ প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে থাকলেও এ পানির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ খাওয়ার উপযোগী। এর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম (মাত্র দশমিক ৭৬ শতাংশ) পরিমাণ পানি সরাসরি ব্যবহার করা যায়। এখনই সচেতন না হলে ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পৃথিবীজুড়ে সুপেয় পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রায় শতকরা ৯৭ দশমিক ৬ ভাগ নিশ্চিত করতে পেরেছে। কিন্তু ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব থাকায় তা প্রশমনে এ পর্যন্ত নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিরাপদ পানি সরবরাহের মাত্রা শতকরা ৮৮ ভাগ নিশ্চিত করেছে। দেশের ৬১ জেলার প্রায় ৩০ শতাংশ টিউবওয়েল এখনও আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এমডিজি লক্ষ্য ‘আন্তর্জাতিক সুপেয় পানি এবং সেনিটেশন দশক’ অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন নিয়ামক এখনও বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধক। অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব এবং এর সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থানগত সমস্যা এবং অন্যান্য পরিবেশগত ঝুঁকি এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পানি দূষণ এবং সুপেয় পানি সরবরাহের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে পানি বিষয়ক মোট ১১টি টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
×