ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছরে সাড়ে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

চলতি বছরে সাড়ে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। তবে শ্রম অভিবাসন বাড়লেও ১১ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। চলতি বছর ৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে গেছেন। গত বছরের তুলনায় এই হার ৩৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছর এক লাখ ৮ হাজার ৭৬৯ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। বুধবার শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি-২০১৬ সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’- শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রামরু। এতে বক্তব্য রাখেন রামরু চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশী কর্র্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসনের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন করেছে। আর ২০১৪ সালে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গেছেন। সেক্ষেত্রে ৭ লাখেরও বেশি কর্মীর অভিবাসন সত্যিই বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যাপক সাফল্য। এছাড়া বেশকিছু শ্রম গ্রহণকারী দেশ যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত তাদের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এনেছে, যা বাংলাদেশসহ সকল অভিবাসী প্রেরণকারী দেশের জন্য ভাল ফল তৈরি করবে। রামরুর গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নারী অভিবাসন গত কয়েক বছর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৮ হাজার ৭৬৯ জন নারী চাকরি করার জন্য বিদেশ গেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি পুরুষ অভিবাসন বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট অভিবাসীদের মাঝে নারী অভিবাসীদের আনুপাতিক হার কমে এসেছে। এ বছর নারী অভিবাসীর সংখ্যা সর্বমোট অভিবাসীর ১৬ শতাংশ। এটিও একটি ইতিবাচক দিক। ২০১৫ সালে নারী অভিবাসী ছিল মোট অভিবাসীর ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী অভিবাসন করেছেন ওমানে। এ বছরের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে এক লাখ ৮১ হাজার ৮০৬ জন কর্মী গেছেন। বাংলাদেশ থেকে এটাই এ বছরের প্রেরিত কর্মীর ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৫ সালেও ওমান ছিল সর্বোচ্চ অবস্থানে। দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবের শ্রমবাজারে যে স্থবিরতা বিরাজ করছিল, তা গত বছর থেকে কাটতে শুরু করেছে। এ বছরে কাতারকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৫৮ জন শ্রমিক অভিবাসন করেছে সৌদি আরব, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কাতার। চলতি বছর কাতারে এক লাখ ১৫ হাজার ২১২ জন শ্রমিক গেছেন কাতারে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েকটি দেশে অভিবাসন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইরাক ও লিবিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় বলা হয়েছেÑ ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক অভিবাসন হয়েছে কুমিল্লা জেলা থেকে। মোট অভিবাসনের প্রায় ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কুমিল্লা জেলা থেকে ঘটেছে। আর চট্টগ্রামের অবস্থান দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম থেকে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কর্মী বিদেশে গেছেন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। পর্যায়ক্রমে রয়েছেÑ চাঁদপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ জেলা। সংবাদ সম্মেলনে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০১৬ সালে বিদেশ হতে প্রাপ্ত রেমিটেন্সের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর নবেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স হিসেবে অর্জন করেছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ কম। রেমিটেন্সের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ বৈশ্বিক তালিকায় ৭ম থেকে ১০ স্থানে নেমে আসতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে ড. শাহদীন মালিক বলেন, এখন বিদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অভিবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। বিকাশের মতো কোন চ্যানেলও ব্যবহার করে হয়ত তারা টাকা পাঠাতে পারেন, তাই সব টাকার হিসাব সরকারের কাছে নাও থাকতে পারে। সে কারণে রেমিটেন্স কম প্রদর্শিত হচ্ছে।
×