ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌর প্যানেলে ইনভারটার, বিদ্যুত বিক্রি করতে পারবেন গ্রাহক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

সৌর প্যানেলে ইনভারটার, বিদ্যুত বিক্রি করতে পারবেন গ্রাহক

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত সংযোগের জন্য বাসাবাড়ির ছাদে বসানো সোলার প্যানেলকে অফগ্রিড থেকে অনগ্রিডে রূপান্তর করতে যাচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। কোম্পানি এ জন্য জরিপ শুরু করেছে। গ্রাহককে ব্যাটারির পরিবর্তে ইনভারটার লাগিয়ে দেয়া হবে। গ্রাহক যত সময় সূর্যের আলো থাকবে তত সময় গ্রিডের বিদ্যুতের সঙ্গে সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারবেন। নিজস্ব প্রয়োজন না থাকলে সৌর বিদ্যুত গ্রিডে গিয়ে যোগ হবে। এতে গ্রাহক উল্টো ডিপিডিসির কাছ থেকে বিদ্যুত বিক্রি করে অর্থ পাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটে ২০০৭ সাল থেকে একই প্রক্রিয়ায় সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউটের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অতিরিক্ত গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। বিতরণ কোম্পানিটি বলছে, বিদ্যুত সংযোগের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকায় গ্রাহক সোলার প্যানেল বসিয়েছে। যদিও সংযোগ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহক সৌর প্যানেলের আর খোঁজ রাখছে না। আদৌ সেখান থেকে বিদ্যুত উৎপাদন হলো না হলো সে বিষয়েও কোন আগ্রহ নেই গ্রাহকের। ডিপিডিসির প্রাথমিক জরিপে বেরিয়ে এসেছে বাসাবাড়ির ছাদে বিদ্যুত সংযোগের জন্য বসানো সোলার প্যানেলের ৭০ শতাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহকের অবহেলাকেই দায়ী করছেন তারা। ডিপিডিসি বলছে গ্রাহকের আঙ্গিনায় ইনভারটার বসিয়ে দেয়া হবে। এতে সৌর প্যানেলের বিদ্যুত গ্রিডের বিদ্যুতের সঙ্গে একই সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী হবে। এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহের অব্যবহৃত বিদ্যুত গ্রিডে যোগ করাও সম্ভব। এটি একটি অতি পরিচিত প্রযুক্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশের অনেক গ্রাহক এই প্রক্রিয়ায় নিজের বিদ্যুত বিলের পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন। সম্প্রতি আমেরিকার একটি শহরের বাসিন্দাদের উপর পরিচালিত জরিপ বলছে, গ্রাহকের আঙ্গিনায় অনগ্রিড সোলার প্যানেল বসানোতে অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের বিল কমে এসেছে তাদের। মনে করা হচ্ছে শুধু বিদ্যুত সংযোগের জন্য সৌর প্যানেল স্থাপনের বাধ্যবাধতার চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ প্যানেল বসাতে উৎসাহী হবেন গ্রাহক। পদ্ধতিটি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডিপিডিসির সৌর বিদ্যুতের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ রাজ্জাক বলছেন, তারা দেখেছেন ডিপিডিসির বিদ্যুত সংযোগের জন্য অন্তত পাঁচ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল বসিয়েছে গ্রাহকের। তবে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে আসছে না। এই সৌর প্যানেলের ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। ডিপিডিসির একজন কর্মকর্তা জানান, তারা গ্রাহকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। শুরুতে ডিপিডিসি নিজস্ব অর্থে গ্রাহককে ইনভারটার লাগিয়ে দেবে। গ্রাহক প্রতিমাসের বিলের সঙ্গে ডিপিডিসিকে ইনভারটারের অর্থ ফেরত দেবেন। যেহেতু গ্রাহক নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবহার করবে তাই তার বিলও কম আসবে। ফলে ইনভারটারের অর্থ ফেরত দিতে তার বাড়তি ব্যয় হবে না। ভাল মানের সৌর প্যানেল সাধারণত একটানা ২৫ বছর পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে। দেশে সাধারণত এক মেগাওয়াটের প্যানেল থেকে দৈনিক ৪ হাজার ৮০০ কিলোওয়াট/আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে। সরকার এখন সৌর চালিত আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট ১৫ থকে ১৬ টাকায় বিদ্যুত কিনছে। অর্থাৎ ডিপিডিসির অকেজো সোলার প্যানেল থেকে দৈনিক আড়াই লাখ টাকার বিদ্যুত উৎপাদন বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যাটারি না ব্যবহার করলে সোলার প্যানেলে আর কোন খরচও নেই। গ্রাহক নিজের ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে দিয়ে যাতে অর্থ পায় এজন্য একটি আইন করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। ফিড ইন ট্যারিফ নামের এই আইনটি হলে গ্রাহক বিদ্যুত বিক্রির অর্থ পাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনিস্টিটিউট এশিয়া ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আইনটি তৈরি করেছে। কমিশন আইনের উপর সর্বসাধারণের মতামত নিতে তাদের ওয়েব সাইটে দিয়েছে। ঢাবির শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, এই প্রযুক্তি অনেক দিন থেকেই সকলের কাছে পরিচিত। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। তা না হলে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
×