ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীষ্মে রিক্সাই ভরসা ॥ ঠাকুরগাঁও তাঁতপল্লী

শীতে কম্বল বুনে সচ্ছল তাঁতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

শীতে কম্বল বুনে সচ্ছল তাঁতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৭ ডিসেম্বর ॥ সদর উপজেলার কিসমত কেশুরবাড়ি গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায় তাঁতের খটখট শব্দ। বিভিন্ন বাড়িতে উঁকি দিলে দেখা যায়, আঙ্গিনায় কারিগর নিপুণ হাতে বুনে চলেছেন কম্বল। এ তাঁতশিল্প এখানকার মানুষকে আর্থিক সচ্ছলতা দিয়েছিল। এখন সেই দিন অতীত। পুঁজির অভাবে তাঁতিরা এ ব্যবসায় আগের মতো আর বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বেশিরভাগ তাঁতিই পুঁজি যোগাতে মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে তাঁতির পুঁজির বড় অংশ। কিসমত কেশুরবাড়ি গ্রামের তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এখানে শুরু হয় তাঁতযন্ত্রের মাধ্যমে কম্বল তৈরির কাজ। গ্রামে প্রায় ৫শ’ পরিবারের বসবাস। তাদের অধিকাংশই কম্বল বুননের কাজে জড়িত। তারা বলসুতা, পুরনো সোয়েটারের উল দিয়ে কম্বল, গায়ের চাদর, মাফলারসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করেন। কম্বল কিনতে ইতোমধ্যে গ্রামটিতে ভিড় জমাচ্ছেন পাইকাররা। সরেজমিন জানা যায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় ১২শ’ মানুষ বংশানুক্রমে এখনও তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত তাঁত রয়েছে। এর কোনোটা চাকাওয়ালা, আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। সকাল থেকেই বাড়ির নারী-পুরুষসহ সবাই লেগে পড়েন কম্বল তৈরির কাজে। তাঁত কারিগর ধনেশ দুঃখ নিয়ে বলেন, শীত এলে আমরা এ কম্বল তৈরি করে বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাই। কিন্তু গরমের সময় কম্বল তৈরি করার কাজ থাকে না। তখন শহরে গিয়ে রিক্সা চালাতে হয় বা ইটভাঁটিতে কাজ করতে হয়। কম্বল বিক্রির টাকায় কিছুদিন ভালভাবে চলা যায়, তারপর আবার কষ্ট শুরু। সরকার যদি কোন সহযোগিতা দিত তাহলে সারাবছর আমরা তাঁতের কাজ করতে পারতাম। তাঁত কারিগর পরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ছোট থেকেই এ কাজ করি। এখন তার ছেলেমেয়েরা করছে। বংশের সবাই এ কাজের সঙ্গে জড়িত। কষ্ট হলেও আমাদের ধরে রাখতে হবে বংশের চিহ্ন এ তাঁতের কাজ। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের কোন পুঁজি নেই। অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এখনও সচ্ছল নই। ঋণ নিয়ে সুতা কিনে কম্বল তৈরি করছি। সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। কম্বল কিনতে আসা কয়েকজন পাইকার বলেন, স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলে এ পুরনো দিনের শিল্পকে বাঁচানো যাবে। তাঁত কারিগরদের পুঁজি না থাকায় তারা বেশি সুদে ঋণ নিয়ে কম্বল তৈরি করে লাভবান হতে পারছেন না। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তৈমুর রহমান বলেন, এখন তাঁতিদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দরকার। সরকারী তরফ থেকে যদি সহযোগিতা দেয়া হয় তাহলে এ তাঁতি পরিবারগুলো তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।
×