ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষানবিস চিকিৎসক লাঞ্ছিত

রামেকে জরুরী বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ ॥ রোগীর দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

রামেকে জরুরী বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ ॥ রোগীর দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রোগীর স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে টানা কর্মবিরতিতে নেমেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সোমবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ, সমাবেশ ও আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এতে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা ও রোগীর ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এক ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষ গিয়ে তালা খুলে দেয়ার পর জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক হয় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে মঙ্গলবার দিনভর চিকিৎসা সেবা দেননি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেক রোগীকে হাসপাতাল ত্যাগ করতেও দেখা গেছে। সোমবার ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেবা দেননি। রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যাননি। ফলে অনেক রোগীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মঙ্গলবারও কর্মবিরতি থাকায় ওয়ার্ডে ফেরেনি ইন্টার্নরা। এদিকে রোগীদের ওয়ার্ডে ফেলে সকাল থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রামেক হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ইতি নামের এক নারী ভর্তি আছেন। সোমবার সন্ধ্যায় স্বজনরা ইতিকে দেখতে যান। ওই সময় আবু নাইম পরাগ নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর কাছে স্বজনদের ভিড় দেখে গালাগালি করেন। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে তার বাকবিত-া হয়। এক পর্যায়ে রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরাগকে মারপিট করেন। এতে পরাগের ডান হাতের কব্জির উপরে ভেঙ্গে যায় ও ডান চোখে আঘাত পান। পরে তাকে হাসপাতালের ডক্টরস ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সহকর্মী পরাগ লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই সময় হাসপাতালের পরিচালকের পক্ষ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেয়া হয়। ইন্টার্নদের দাবির প্রেক্ষিতে রাত ১০টার দিকে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে রোগীর দুই স্বজন শাহিন ও জিমিকে আসামি করে রাজপাড়া থানায় মামলা করা হয়। এদের মধ্যে শাহিন নগরীর ওপর ভদ্রা এলাকার মৃত আসাদের ছেলে ও জিমির বাড়ি নগরীর অলকার মোড়ে। এদিকে দোষীদের গ্রেফতার দাবিতে রাত ১০টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা জরুরী বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। এতে ভর্তি হতে আসা রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। এ ঘটনার পর জরুরী বিভাগে ছুটে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তালা খোলার ব্যবস্থা করেন। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দুই আসামিকে গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক জানায়, কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। এর সঙ্গে দোষীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দোষীরা গ্রেফতার না হলে বড় ধরনের আন্দোলনে যাবেন বলে জানান তিনি। এদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হামলাকারী রোগীর স্বজনদের গ্রেফতার ও তাদের স্বজনদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। বিকেলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘটনার সমাধানের জন্য হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হলেও তার কোন সমাধান না হওয়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসকরা সামাল দিচ্ছেন। রয়েছেন নার্সরাও। তবু ভোগান্তি কাটছে না। দীর্ঘ সময় বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন। ভেঙ্গে পড়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসক নির্ভর রামেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, আগেও ইন্টার্ন চিকিসকদের ওপর হামলা হয়েছে। আন্দোলনে যাবার পর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে তারা কাজে ফিরে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এবার দাবি বাস্তবায়ন না হলে কাজে যোগ দেবেন না ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তারা। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। দ্রুতই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চিকিৎসায় ফিরে আসবেন।
×