ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী

জঙ্গীবাদ দমনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

জঙ্গীবাদ দমনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ দমনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, জঙ্গীবাদ নির্মূল ও শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদের ছোবল থেকে দূরে রাখতেই হবে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে রুখে দিতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে আয়োজিত জঙ্গীবাদ বিরোধী আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রী। বৃহত্তর ঢাকা জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে ‘শিক্ষার উন্নত পরিবেশ, জঙ্গীবাদমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মাহাবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ। সভায় অংশ নেয়া ঢাকা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন ও শিক্ষাঙ্গনে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত তুলে ধরেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা যাতে বিপদগামী না হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখেতে হবে। শিক্ষকরা যদি ক্লাসে নতুনত্ব আনেন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে আগ্রহী হবে। নানামুখী উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হবে। যাতে তারা অন্যের ‘কানমন্ত্র’ শোনায় সময় দিতে না পারে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের জঙ্গী কার্যক্রম থেকে রক্ষা করতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইসলাম হত্যা সমর্থন করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে এসব বিপথগামী লোকদের বোঝাতে হবে যে, ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। বরং জঙ্গীবাদ ইসলামকে দেশে ও বিদেশে ছোট করছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদ থেকে দূরে রাখতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি জড়িত রাখা, ক্লাসরুম আনন্দময় করে তোলা এবং খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়ানোর তাগিদ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকার প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে। এসবের প্রস্তুতি নিতেও তাদের সময় দিতে হবে। মন্ত্রী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর মেধা অন্বেষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ৭০০০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুরস্কৃত করে থাকে। এদের মধ্যে শীর্ষ ১২ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রী বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পায়। তিনি আরও বলেন, জঙ্গীবাদ ইস্যুতে কোন শিক্ষার্থী ধারবাহিকভাবে ১০ দিন অনুপস্থিত থাকার পরিপত্র জারির ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি বেড়েছে। ঝরেপড়া অনেক কমেছে। শিক্ষার মান একবারে বা রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এজন্য আমাদের শিক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের মান উন্নয়নে তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নতুন বছরে পাঠ্য পুস্তক বিতরণের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর আমরা ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার বই বিতরণ করেছি। এ বছর ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই বিতরণ করব। মাদ্রাসা শিক্ষকদের আট দফা ॥ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ, সকল মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা নিবেদন নিশ্চিত করা ও মাদ্রাসার সাধারণ বিষয়ের শিক্ষকদের সুপার ও অধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ না করে মাদ্রাসাসহ সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করুন। সংবাদ সম্মেলনে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব জহির উদ্দিন। আরও ছিলেন এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ হারুন অর রশিদ, সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রিয়াজুল করিম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল বারী, যুগ্ম মহাসচিব হোসনি মোবারক প্রমুখ। জাতীয়করণ ছাড়াও তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া প্রদানসহ প্রতিটি আলিম ও ফাজিল মাদ্রসায় বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১৩ সালে জারি করা সংশোধিত পরিপত্র বাতিল করে ২০১২ সালের পরিপত্র বহাল রাখা অর্থাৎ সাধারণ বিষয়ের শিক্ষকদের সুপার ও অধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ দেয়া, আলিম ও ফাজিল পর্যায়ে প্রতি বিষয়ে দ্বিতীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ও জনবল কাঠামোয় প্রদর্শক ও গ্রন্থাগারিক পদ অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি।
×