ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

 জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলীয় লোকদের নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে নির্বাচন কমিশনের যে আচরণ তা ভঙ্গ করার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠিন। কেউ কেউ এর মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমি তাদের প্রত্যেককে সতর্ক করে দিয়েছি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা ছড়ানোর যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, এখানে টাকার যে একটা ভূমিকা আছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন যেখানে টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে দিয়েছে সে অঙ্কটা কোন ইলেকশনেই (নির্ধারিত) থাকছে না, সীমাটা অনেক জায়গাতেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। অন্য কোন দলের প্রার্থী না থাকায় ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে চাপ দেয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। মঙ্গলবার সচিবালয়ের নিজ দফতরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের আগের দিন মন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেন। বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচনে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১টি জেলায় এই নির্বাচন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ২১ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুষ্টিয়ায় একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আদালত সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। বাকি ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন ১২৪ জন। এসব জেলার মধ্যে অন্তত ৩৭টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল। এ নির্বাচনে ‘কিছু’ স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সোমবার সংসদ সদস্যদের তাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, টাকা কালো কি সাদা, আমি জানি না। আমাদের দেশে নির্বাচনে মানি ফ্যাক্টর এখনও। মানি হ্যাজ এ রোল টু প্লে। এই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রতি কোন বার্তা আছে কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, এই ইলেকশনে অপজিশন অংশ নেয়নি। অপজিশন বলতে বিএনপি-জাতীয় পার্টি, তাদের কোন অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নেই। এখানে আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি, সমর্থন করেছি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাকি যারা আছেন, আমরা একটা পর্যায়ে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়। সেজন্য আমাদের পলিসি যেটা সেটা হচ্ছে যে, আমাদের পার্টি সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্দেশনা আছে। কিন্তু যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি। এক কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই তারা নির্বাচিত হোক সেটা আমরা চেয়েছি। এখানে অপজিশন থাকলে তো বিষয়টা ভিন্ন কিছু হতো। জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোন মন্ত্রী-এমপি যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সে বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠিন। কেউ কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে তাদের আবারও সতর্কবার্তা পাঠাতে চাই- আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তারা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না, কোন প্রকার নির্বাচনী কর্মকা-েও অংশ নিতে পারবেন না। যারা এলাকায় আছেন স্ব-স্ব এলাকা ত্যাগ করুন। জেলা ভোটে টাকার খেলার কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিলেই ওবায়দুল কাদের বলছেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে আদর্শ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জে যে নির্বাচন হলো, ওখানে কিন্তু টাকা ছড়াছড়ির বিষয়টা আসেনি। এই ইলেকশনকে মডেল ইলেকশন হিসেবে গণ্য করতে পারি। ইলেকশন হয়েছে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল, পার্টিসিপেটরি- যেখানে কালো টাকার ছড়াছড়ি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেননি। নারায়ণগঞ্জ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা চাইলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, ইউ ক্যান নট গো বিয়ন্ড কন্সটিটিউশন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এতগুলো সিটি কর্পোরেশনে জেতার পরেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন দেখিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন হওয়া দরকার মন্তব্য করে কাদের বলেন, দেরি হয়ে গেছে, বেটার লেইট দেন নেভার। রাষ্ট্রপতি নিজেও বলেছেন বিষয়টা তিনি ভাবছেন এবং সক্রিয়ভাবে ভাবছেন। ইউ হ্যাভ টু ওয়েট সাম টাইম। নতুন নির্বাচন কমিশন যখন গঠন হবে তারা নিশ্চয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। আমাদের সঙ্গে যখন সংলাপ হবে তখন আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেব। ব্যর্থতার হতাশায় বিএনপির বেপরোয়া আচরণ ॥ এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ব্যর্থতার হতাশা থেকে বেপরোয়া আচরণ করছে। তাই তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়ে দেশের পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, যে দেশের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতা রয়েছেন, সে দেশ কখনও ব্যর্থ হবে না। বিএনপি ব্যর্থ রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বই হচ্ছে দেশের অস্তিত্বের একমাত্র ঠিকানা। তাঁর নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে আরও বেগবান করতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে যেমন বাঁচাতে হবে তেমনি আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ, জহুরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ।
×