ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তনের পালায় শীতের আচরণে পালাবদল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

পরিবর্তনের পালায় শীতের আচরণে পালাবদল

সমুদ্র হক ॥ সকালের কুয়াশার পর রোদ। দুপুরে রোদের তেজ কিছুটা বাড়ল। মুহূর্তেই চারদিক হতে কালো মেঘ জড়ো হয়ে পুরো আকাশ দিল ঢেকে। শীতের কাঁপুনি কেবলই শুরু হয়েছে। সকলের মুখে একই কথা শীত এবার নামল। যারা গরম কাপড় বের করেনি তারাও বের করে গায়ে চেপে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হলো। কিছু পরেই সেই শীত আর থাকল না। রাত ৮ টার দিকে অনেকের বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে হলো। রাত ১১ টার দিকে ফের ঠক ঠক করে কাঁপানো শীত। লেপ গায়ে উঠল। গভীর রাতে গরমে সেই লেপ আর রাখা গেল না। আগের দিনের শীতের এমন আচরণের পরের দিন মঙ্গলবার সকালে ঘন কুয়াশা নেই। সকাল ন’টার দিকে কিছুক্ষণ ঘন কুয়াশার আস্তরণে ঢেকে দেয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর দশটার দিকের রোদ দেখে মনে হলো বৃষ্টির পর যেভাবে মেঘ ভেঙ্গে রোদ ওঠে তেমনই। এই চিত্র বগুড়ার। শীতে আবহাওয়ার এমন আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে প্রকৃতিতে পরিবর্তনের পালা শুরু হয়েছে ক’বছর ধরেই। দিনে দিনে এই পরিবর্তনের ধারা বেড়ে গেছে। এ বছর গ্রীষ্মকাল থেকেই তা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মেও কুয়াশাপাত হয়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবারের আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষাও ঠিকমতো আসেনি। বর্ষার ফুল কদম ফুটেছে এবার জৈষ্ঠ মাসে। বর্ষাকালে সাধারণত নদী তীরের নিচু এলাকা ও চরগ্রামে কিছুটা হলেও বন্যা আসে। এবার তা আসেনি। শ্রাবণ পেরিয়ে যাওয়ার পর নদীর পানি সামান্য ফুলেফেঁপে ওঠে, কয়েকদিনের মধ্যে তা নেমে যায়। শরতের আকাশ ছিল আধো কালো মেঘ, আধো সাদা মেঘে ঢাকা। শরতের শেষে হঠাৎ যমুনায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। শীতের প্রাক্কালের ঋতু হেমন্ত শান্ত হলেও তা থাকেনি। হেমন্তে ছিল গ্রীষ্মের মতো চড়া রোদ, বর্ষার মতো বৃষ্টি। বোঝাই যায়নি এটা কোন্ ঋতু। সাধারণত শীতের ছোঁয়া দেখা দেয় অগ্রহায়ণে। ধান মাড়াই-কাটাইয়ের এই মাসে কৃষককে দরদর করে ঘামতে হয়েছে। তাপমাত্রা ছিল জ্যৈষ্ঠের মতো। শেষেরদিকে একটু করে কুয়াশাপাত হয়েছে তবে তা ছিল এলোমেলা। পৌষের প্রথম দিনে বোঝাই যায়নি এটা পৌষ মাস। অনেকে বুঝতেই পারেনি পৌষের শুরুটা। আবহাওয়া অফিসের এক সূত্র, জানায় বঙ্গোপসাগরে সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়েছিল সেটি আরব সাগরের দিকে চলে যায়। ওই ঘূর্ণিঝড়টি সাইবেরিয়ার দিক থেকে আসা শীতল বাতাস বায়ুম-লের উপরের স্তরের দিকে নিয়ে গেছে। যে কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের দিল্লী ও কাশ্মীরে শীত খুবই দেরিতে আসছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি এলাকায় শীতে তাপমাত্রা যা থাকার কথা তা থাকছে না। থাকছে বেশি তাপমাত্রা। রাতে নদী তীরবর্তী এলাকায় কুয়াশার ঘন আস্তরণ থাকছে । তবে গ্রামাঞ্চলে এই সময়টায় যে শীত থাকার কথা তাও নেই। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে উপমহাদেশ জুড়েই এবার কম শীত অনুভূত হচ্ছে। লঘুচাপটি হিমালয় হয়ে দেশের ভেতর দিয়ে পূর্বদিকে চলে যাচ্ছে। উচ্চচাপ বলয়ের ফলে খুব কম শীত নামছে। পশ্চিমা লঘুচাপটি দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না । অর্থাৎ শীত বেশি অনুভূত হবে না। গত বছর ডিসেম্বরে যে গড় তাপমাত্রা ছিল এ বছর ডিসেম্বরের তাপমাত্রা গড়ে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি। এ বছর ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে গড় তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ২০ডিগ্রী ও ১৮ দশমিক ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ বছরে ডিসেম্বরে গড় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত বছর একই সময়ে গড় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রী ও তার আগের বছর ২০১৪ সালে ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শীতের প্রবেশ দুয়ার হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এলাকায় পৌষের মধ্যভাগে কিছুটা শীত অনুভূত হচ্ছে। হঠাৎ ঘনকালো মেঘে হাল্কা বৃষ্টিপাত হয়েছে। তারপর ফের রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। রংপুরে কেবল শীত অনুভূত হচ্ছে। বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা পৌষে নেই। গত বছর বগুড়া অঞ্চলে ডিসেম্বরের শেষ সময়টায় যে শীত ছিল এবার একই সময়ে তার ছিটেফোঁটাও নেই। দিনেরবেলায় ফুলশার্ট গায়ে চরেই থাকা যাচ্ছে। রাতে গরম কাপড়ের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। সোয়েটার হাল্কা-জ্যাকেট হলেই চলে। মাফলার, শীতের টুপিরও প্রয়োজন পড়ছে না। রাতে লেপ রাখতে হয় এই পর্যন্তই । কম্বলেই পাড়ি দেয়া যায়। শীতে ঋতুর যে উপসর্গগুলো থাকার কথা তাতেও ভাটা পড়েছে। শীত মৌসুমে গ্রামীণ জীবনের বিনোদন ও মেলাগুলো এবার তেমন নেই। শীতে নগরীর বড় আকর্ষণ যে পিঠা উৎসব তাও এবার জমজমাট নয়। বগুড়ায় প্রতিবছর বগুড়া থিয়েটার আড়ম্বরপূর্ণভাবে যে পিঠা মেলার আয়োজন করে এবার তারা ভাবনাচিন্তা করছে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে তা করবে।
×