ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও মুস্তাফিজ চাই

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

আরও মুস্তাফিজ চাই

মুস্তাফিজ আবারও আন্তর্জাতিক সংবাদ। দারুণ অর্জন হলো তার, পেলেন ২০১৫-১৬ মৌসুমে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার। বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির কোন বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের ঘটনা এই প্রথম। মুস্তাফিজকে আন্তরিক অভিনন্দন। ২০০৪ থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কার পেয়েছেন দুজন ভারতীয়, পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা এখনও এটি পাননি। গত বছর জুন মাসের কথা। বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতকে সীমিত ওভারের ম্যাচে দুর্দান্তভাবে হারিয়ে দিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। আমরা সম্পাদকীয়তে লিখেছিলামÑ নতুন প্রতিভার সংযুক্তি যে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে তার প্রমাণও এই ম্যাচ। অভিষেকেই ৫ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ক্রিকেটের ম্যাজিকবয় মুস্তাফিজের দারুণভাবে ঝলসে ওঠার শুরুর বছর ২০১৫। পাকিস্তানের পর ভারতও ধরাশয়ী বাংলার মাটিতে। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ, তথা গোটা ক্রিকেটবিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। সে ছিল এক অনন্য অর্জন। এক অভূতপূর্ব বিজয়। এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। ওই ইতিহাস সৃষ্টিতে বিশেষ নায়কের মর্যাদা আমরা মুস্তাফিজকেই দিয়েছিলাম। সফরকারী শক্তিশালী ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে ২০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দল বোলিংয়েও প্রমাণ করেছিল তাদের উচ্চতা ও শক্তিমত্তা। এখানে নবাগত বিস্ময় মুস্তাফিজের কৃতিত্বের কথা আমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে। মূলত বোলিংয়ে তার নতুন কৌশল ও বৈচিত্র্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের হতবিহ্বল করে দিয়েছিল। মুস্তাফিজকে ঠিকমতো খেলতে না পারাটাই অন্যতম বড় কারণ হয়ে উঠেছে জয়-পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে। দুই ম্যাচ মিলিয়ে মুস্তাফিজ উইকেট শিকার করেছিলেন এগারোটি। এর ফলে বিশ্ব রেকর্ডের মতো বিশাল কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছিল তার। মাত্র উনিশ বছর বয়সী এমন রতনটি দেশের কোটি মানুষকে আনন্দ আর তৃপ্তি দিয়েছে। এর তুলনা মেলা ভার। ভারতের মাটিতে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মুস্তাফিজ খেলেছিলেন। সেখানে প্রথম তার খেলতে যাওয়া। মাঠে নেমেই তাকে ভারতের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মন জয় করে নিতে দেখেছি আমরা। টিভির বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটভাষ্যকার প্রশংসার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন মুস্তাফিজের পারফর্মেন্সের কথা বলতে গিয়ে। আইপিএলে মুস্তাফিজের টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মুস্তাফিজের সুনাম আরও বৃদ্ধি পায়। এরপর বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার খেলতে গেছেন ক্রিকেটের বনেদি ভূমি ইংল্যান্ডে। কী অবাক কা-! এলেন দেখলেন জয় করলেনÑ এই আপ্তবাক্যটি আবারও সত্য হলো মুস্তাফিজের বেলায়। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্স শার্কের হয়ে অভিষেক ম্যাচটিতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন বাংলাদেশের এই মেধাবী ক্রিকেটার। চার ওভার বল করে মাত্র ২৩ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন চার চারটি উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠেছিল তার হাতেই। বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। মেধা ও প্রতিভা যদি ঈশ্বর প্রদত্ত বলে মেনেও নিই, তারপরও থাকে তার চর্চা, অনুশীলন ও সাধনার বিষয়টি। আমরা আগেও বলেছি বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়ে ছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রতিভা মুস্তাফিজের কল্যাণে বাংলাদেশের সুনাম নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে বহির্বিশ্বে। তিনি আগামীতে হয়ে উঠতে পারেন ইউরোপে বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক এক শুভেচ্ছা দূত। আমাদের আরও মুস্তাফিজ চাই। আমরা বিশ্বাস করি দেশে মুস্তাফিজের মতো প্রতিভা আরও রয়েছে। শুধু তাদের আবিষ্কার ও পরিচর্যার অপেক্ষা।
×