ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্মঘাতী নারী জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

আত্মঘাতী নারী জঙ্গী

রাজধানীর দক্ষিণখানের পূর্ব আশকোনায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নেতৃত্বে সোয়াত টিমের জঙ্গীবিরোধী অভিযানটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এই অভিযানে আত্মঘাতী গ্রেনেড বিস্ফোরণে নারীসহ নিহত হয় দুই জঙ্গী। আর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে দুই শিশুসহ দুই নারী। পুলিশের পক্ষেও আহত হওয়ার খবর আছে। উদ্ধার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। ১৬ ঘণ্টাব্যাপী শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযানটি তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, দেশে এবারই প্রথম আত্মঘাতী নারী জঙ্গী ও কিশোরের সন্ধান পাওয়া গেল। এ থেকে আরও যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর নানামুখী প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতা সত্ত্বেও দেশ থেকে জঙ্গী তৎপরতা ও কার্যক্রম একেবারে নির্মূল করা যায়নি। বরং জঙ্গীরা নানাভাবে, নানা উপায় ও পদ্ধতিতে সঙ্গোপনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে এবং সুযোগ-সুবিধামতো সংগঠিত হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মোবাইল ফোন-ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির আনুকূল্য তাদের এই কার্যক্রমকে আরও সহজসাধ্য ও কম ব্যয়সাপেক্ষ করে তুলেছে। আরও যা সমূহ আশঙ্কার তা হলো, ইংরেজী বছরের শেষ এবং নতুন বছরকে সামনে রেখে তারা আরও সক্রিয় হয়ে চালানোর চেষ্টা করতে পারে নাশকতার। সর্বদা গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি এবং সামাজিক তৎপরতা সত্ত্বেও আত্মঘাতী জঙ্গী হামলা ও নাশকতা প্রতিরোধ করা দুরূহ। এ বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে বৈকি। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল আত্মঘাতী এক নারী জঙ্গীর কাছ থেকে ফুলের তোড়া গ্রহণ করতে গিয়ে। নিকট অতীতে দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানসহ বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী কার্যক্রম চললেও বিষয়টি বিশ্বব্যাপী প্রচার পায় ২০১৬-এর ১ জুলাই গুলশানের একটি রেস্তরাঁ হলি আর্টিজানে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গী হামলার পর থেকে। এসব জঙ্গী ছিল তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষিত, তদুপরি অত্যাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ। এদের হামলায় সেখানে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন জাপানী, ইতালিয়ান, ভারতীয় ও বাংলাদেশী নিহত হন। এতে স্বভাবতই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এবং ভাবিয়ে তোলে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সবিশেষ তৎপর হয়ে ওঠে। গত কয়েক মাসে র‌্যাব, পুলিশ, সোয়াত ও টেররিজম ইউনিট কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, আশুলিয়া এবং সর্বশেষ আশকোনায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গীকে আটক করতে সক্ষম হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে নারী, কিশোর ও শিশু। নিহতের সংখ্যা ২৮। পুলিশ এদের বলেছে নব্য জেএমবি। পুরনো হোক কিংবা নব্য, জঙ্গী জঙ্গীই। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চয়ই সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এবং তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সত্যি বলতে কি, বর্তমানে সারা বিশ্ব সন্ত্রাসকবলিত। তুরস্কের আন্দারা থেকে শুরু করে বার্লিন, জুরিখ-প্যারিস পর্যন্ত এর পরিব্যাপ্তি। কখন কোথায় কিভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ঘটবে, তাও আবার আত্মঘাতী, তা নিশ্চিত করে বলা প্রায় অসম্ভব। বড়দিন ও খ্রিস্টীয় নববর্ষ উৎসবকে ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সর্বত্র জারি করা হয়েছে বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারি। বাংলাদেশও এর আওতার বাইরে থাকবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। সে অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতাই পারে জঙ্গী কার্যক্রম ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে। মনে রাখতে হবে যে, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই, জাত-পাত-বর্ণ নেই, তাদের পরিচয় তারা শুধুই জঙ্গী ও সন্ত্রাসী। নিতান্ত নিরীহ, নির্বিরোধী, শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ হত্যা করে কখনোই কোন আদর্শ বা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জঙ্গীবাদ সর্বত্র সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য ও বর্জনীয়।
×