ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মৌসুম পর লীগ শিরোপা ঢাকা আবাহনীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

তিন মৌসুম পর লীগ শিরোপা ঢাকা আবাহনীর

ঢাকা আবাহনী ৪-০ উত্তর বারিধারা, এক ম্যাচ হাতে রেখেই লীগ চ্যাম্পিয়ন জর্জ কোটানের শিষ্যরা, চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা, নবম পেশাদার লীগের পঞ্চম এবং সার্বিকভাবে দ্বাদশ লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহামেডানকে স্পর্শ করল আবাহনী রুমেল খান ॥ খেলা শেষের বাঁশি বাজালেন রেফারি আজাদ রহমান। ওয়ালী ফয়সালের কাঁধে আনন্দের আতিশয্যে চড়ে বসলেন প্রাণতোষ কুমার দাশ। একজনকে দেখা গেল বোতলের ছিপি খুলে জল ছিটিয়ে সবাইকে সিক্ত করতে। অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটান ডাগ আউট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। তবে তার মধ্যে কোন উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেল না। না, একটু পরেই তার শিষ্যরা যখন তাকে শূন্যে ছুড়ে বিজয়-উদযাপন করছেন, তখন কিঞ্চিৎ হলেও তাকে ছুঁয়ে গেল আবেগ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সোমবার রাতে ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’-এর শিরোপা জিতে নিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, তাও সেটা এক ম্যাচ হাতে রেখেই। ৪-০ গোলের সুষ্পষ্ট ব্যবধানে বিধস্ত করে উত্তর বারিধারা ক্লাবকে। লীগের প্রথম লেগেও বারিধারাকে হারের স্বাদ দিয়েছিল ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’রা (৩-১)। নিজেদের ২১তম ম্যাচে এটা আবাহনীর চতুর্দশ জয় (চলতি লীগে একমাত্র দল হিসেবে এখনও অপরাজিত আছে তারা)। ৪৯ পয়েন্ট তাদের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম আবাহনীর সংগ্রহ সমান ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট। দু’দলের এখনও বাকি আছে একটি করে ম্যাচ। সেই ম্যাচে ঢাকা আবাহনী হারলে ও চট্টগ্রাম আবাহনী জিতলেও দু’দলের অবস্থানের কোন হেরফের হবে না। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা বারিধারার চতুর্দশ হার। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে আগের একাদশ স্থানেই আছে তারা (১২ দলের মধ্যে)। ‘অনেক পরিশ্রমের ফল এটি। সানডে-টাক ছাড়াই শিরোপা জিতেছি। চ্যাম্পিয়ন হয়েও তেমন আনন্দ পাইনি, কেননা মাঠে তেমন দর্শক ছিল না।’ শিরোপাজয়ের পর এমনই ছিল আবাহনীর কোচ কোটানের প্রতিক্রিয়া। সোমবার লীগের শিরোপা জিতে একসঙ্গে অনেকগুলো মাইলফলকে পৌঁছুল আকাশী-নীল শিবির। ২০০৬-০৭ মৌসুমে পেশাদার লীগ চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত নয়টি লীগের পাঁচটিরই শিরোপা জিতল তারা, যা সর্বাধিক। তবে এই সর্বশেষ লীগ শিরোপা জিততে তাদের অপেক্ষা করতে হলো পাক্কা তিনটি মৌসুম! চলতি মৌসুমে এ নিয়ে এটি তাদের দ্বিতীয় ট্রফি। গত ২৭ জুন ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আরামবাগকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল তারা। অবশ্য ১৯৮২ সালের মোহামেডান এবং ২০১২-১৩ মৌসুমে শেখ রাসেলের মতো এবার আবাহনীও ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ শিরোপা লাভ করতে পারত। কিন্তু গত ৭ মে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ০-২ গোলে হেরে যাওয়াতে সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেনি তারা। স্বাধীনতার পর সার্বিকভাবে অনুষ্ঠিত লীগে এ নিয়ে দ্বাদশ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো আবাহনী। সমকক্ষতা অর্জন করল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। তবে পূর্ব পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত ঢাকা লীগের পরিসংখ্যান ধরলে মোহামেডানই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার লীগ জিতেছে। তবে বারিধারাকে পচা শামুকে পরিণত হতে দেয়নি আরিফুল, ফয়সাল, হেমন্তরা। হেসে খেলেই জয় ও লীগ শিরোপা কুড়িয়ে নেয় তারা। ১৭ মিনিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। প্রায় মাঝমাঠ থেকে ওয়ালী ফয়সালের লম্বা থ্রু পাস থেকে তীব্র শটে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড জোনাথন ডেভিড (১-০)। ৫৮ মিনিটে বারিধারার বক্সের বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে বাঁ পায়ে ক্রস করেন মিডফিল্ডার জুয়েল রানা। চমৎকার হেডে বারিধারার জালে বল পাঠান ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন (২-০)। ৮৩ মিনিটে এই জীবনকেই বক্সে ফাউল করেন প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ (৩-০)। ৮৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ওয়ালী ফয়সালের বাঁ পায়ের ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে হেডে গোল করে বারিধারার কফিনে হারের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন ফয়সাল মাহমুদ (৪-০)।
×