ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ড জয়ী ৭৭ রানে

পরাজয়ের মাঝে পরের ম্যাচের অনুপ্রেরণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

পরাজয়ের মাঝে পরের ম্যাচের অনুপ্রেরণা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানিয়েছিলেন ওয়ানডেতে ৩০০/৩৫০ রান করতে হবে। তবে বাংলাদেশ দলের এই বিশাল সংগ্রহ তাড়া করার মানসিক প্রস্তুতিটা ছিল না সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। ক্রাইস্টচার্চে সোমবার অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানের বড় হার দিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। মূলত টম লাথামের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস আর কলিন মুনরোর ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কাছেই হেরে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। লাথাম ১২১ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৭ এবং মুনরো ৬১ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস ৭ উইকেটে ৩৪১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাবে সাকিব আল হাসান ও তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জোড়া অর্ধশতকের পরও ৪৪.৫ ওভারে ২৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। সফরকারীদের পক্ষে সেরা নৈপুণ্য ছিল সাকিবের ব্যাটে-বলে জ্বলে ওঠা। তিনি ৩ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে করেন ৫৯ রান। এ ম্যাচ দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান পুরো সময়ই বোলিং করেছেন। তিনি ২ উইকেট শিকার করেন ১০ ওভারে ৬২ রান দিয়ে। আর আফসোস বাড়িয়েছে মোসাদ্দেকের ৪৪ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় করা ৫০ রানের লড়াকু ইনিংসটা। বাংলাদেশ শিবির তখন হা-হুতাশ করেছে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ব্যাটিংয়ের মাঝপথে মুশফিকুর রহীমের মাঠ ছেড়ে যাওয়া নিয়ে। ৪৮ বলে ৪২ রান করেছিলেন তিনি। এসবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। টস ভাগ্যটা বরাবরই তেমন ভাল নয় মাশরাফির। কিউই ভূমিতে দীর্ঘদিন পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ শুরুর ম্যাচেই টস হেরেছেন তিনি। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল যেন ব্যাটসম্যানদের স্বর্গভূমি হয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল ব্যাটসম্যানদের রানের বন্যা বইয়ে দেয়ার জন্য। তবে শুরুটা বেশ সাবধানেই করেছিলেন দুই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও লাথাম। প্রথমে মাশরাফি নিজেই এসেছিলেন আক্রমণে, সঙ্গী হিসেবে নিয়েছিলেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজকে। প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ বোলিং করে দীর্ঘ ৬ মাসের ইনজুরি সমস্যা ভালভাবে কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এ বোলিং ভরসা। প্রথম সাফল্যটাও তিনিই এনে দিলেন। মূল অস্ত্র সেøায়ারেই পরাস্ত করেছেন তাঁকে। মিডঅফে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন সবেমাত্র ছক্কা হাঁকিয়ে দুরন্তভাবে শুরু করা গাপটিল (১৫)। দলীয় ৩১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও লাথাম। পেসার তাসকিন আহমেদের বাড়তি বাউন্সে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন উইলিয়ামসন (৩১)। মাত্র ৯৬ ইনিংস খেলে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন উইলিয়ামসন যা নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দ্রুততম। অবশ্য বিশ্বের চতুর্থ দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এ মাইফলফলক পেরিয়েছেন। লাথাম দুর্দান্ত খেলছিলেন। তাকে থামাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের কোন বোলারই। তৃতীয় উইকেটে নিল ব্রুমের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে সাকিবের জোড়া ধাক্কায় ব্রুম ও জেমস নিশাম সাজঘরে ফিরলে স্বস্তিতেই ছিল মাশরাফির দল। ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে পঞ্চম উইকেটে। মুনরো ব্যাট হাতে নেমে তা-ব শুরু করেন। এ উইকেটে ১৫৮ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ড। এজন্য মাত্র ১০৭ বল খরচা করেছেন লাথাম ও মুনরো। লাথাম ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান আর মুনরো ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস উপহার দেন। তিনি ৮৭ রান করে সাকিবের তৃতীয় শিকারে পরিণত হলেও ততক্ষণে রানের পাহাড়ে উঠে গেছে কিউইরা। লাথাম থেমেছেন আরও পরে। মুস্তাফিজ ফিরতি স্পেলে এসে ১৩৭ রান করার পর তাকে তুলে নেন। ৭ উইকেটে ৩৪১ রান করে কিউইরা। এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস। এর আগে ১৯৯০ সালের ২৮ এপ্রিল শারজায় ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। মুস্তাফিজ ও তাসকিন দুটি করে এবং সাকিব তিনটি উইকেট নেন। জিততে হলে নতুন রেকর্ডই গড়তে হবে। সর্বশেষবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৫ বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে খেলেছিল বাংলাদেশ। ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৮৮ রান তুলে ৩ উইকেটে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩০৯ রান করে জেতার রেকর্ড আছে টাইগারদের। সেটি নিজেদের মাটিতে ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর ফতুল্লায়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে পরে ব্যাটিং করার রেকর্ডটা বেশ বাজে বাংলাদেশ দলের। ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নেপিয়ারে করা ১৯০ রানই সেরা! তবে সর্বাধিক রান তাড়া করার রেকর্ড বাংলাদেশ দলের এই কিউই ভূমিতেই গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ৫ মার্চ নেলসনে হওয়া সে ম্যাচে স্কটিশদের ৩১৮ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ৩২২ রান তুলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেটাকেই অনুপ্রেরণা করে নতুন রেকর্ড গড়তে হবে জয় পেতে হলে। কিন্তু ৩৪ রানের বেশি টিকতে পারেননি তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস জুটি। নিশাম ও সাউদির গতির তোড়ে ৮১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে উল্টো লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ দল। দারুণ খেলতে থাকা তামিম ৫৯ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান। ব্যর্থ হয়েছেন ইমরুল (১৬), সৌম্য (১) ও বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করা দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (০)। পঞ্চম উইকেটে ৬৩ রানের দ্রুতগতির জুটি গড়েন সাকিব ও মুশফিক। কিন্তু সাকিব লোকি ফার্গুসনের বলে সাজঘরে ফেরেন ৫৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রান করার পর। মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানও (১৬) ব্যর্থ হলেন। এরপর যা লড়াই সেটা শুধু মোসাদ্দেকই করেছেন। ৩৮তম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়া মুশফিক ৩ চারে ৪২ রান করার পর মাঠ ছেড়েছেন ওই কারণেই পরের ওভারে। ফলে মোসাদ্দেক ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৪ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকলেও বিশাল সংগ্রহ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ বাকিদের ব্যর্থতায়। তখনও ৩১ বল বাকি, ২৬৪ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পরে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের সেরা আর সার্বিকভাবে দ্বিতীয় সেরা ইনিংস এটি। তবে এসব ৭৭ রানের পরাজয়ে প্রভাব ফেলেনি।
×