ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বিরজু মহারাজের নৃত্য গীতের অনবদ্য পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

বিরজু মহারাজের নৃত্য গীতের অনবদ্য পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু বিরজু মহারাজের নাচের সঙ্গে শিল্পানুরাগীর পরিচয়টা অনেক পুরনো। তবে সেই নাচের উপস্থাপনার পাশাপাশি এবার তার গাওয়া গানও শুনতে পেল ঢাকার সংস্কৃতিপ্রেমীরা। সোমবার রাতে সেই অনবদ্য পরিবেশনাটি অনুষ্ঠিত হলো ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। দর্শক-শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনটি মাতিয়ে রাখলেন বিরজু মহারাজ। কখনও নাটের মুদ্রায়, আবার কখনও গায়কীতে ভক্তদের আলোড়িত করলেন এই বিশ^খ্যাত শিল্পী। ক্ষণে ক্ষণে মুহুর্মুহু করতালিতে তার নৃত্যের ছন্দে, সঙ্গীতের মূর্ছনায় সাড়া দিয়েছেন দর্শকরা। বিরজু মহারাজের পাশাপাশি তার প্রিয় শিক্ষার্থী বিদুষী শাশ্বতী সেনও প্রায় একঘণ্টা টানা কত্থক নৃত্যের জাদুতে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা। কত্থক নৃত্য উৎসবের এ নান্দনিক আয়োজন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। তিন দিনের উৎসবের শেষ দিন ছিল সোমবার। প-িত বিরজু মহারাজ ছায়ানটে নৃত্য পরিবেশন করবেন এমন খবরে গতকাল সন্ধ্যা ছ’টার আগেই ভরে যায় মিলনায়তন স্থান। প্রথম পর্বে ছিল উৎসবের সমাপনী আলোচনা। তাতে প-িত বিরজু মহারাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা খান, বাফার সভাপতি হাসানুর রহমান বাচ্চু ও সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। কিংবদন্তি শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কামাল লোহানী বলেন, উপমহাদেশে কত্থক নৃত্যের প্রাণপুরুষ তিনি। কয়েক শ’ বছর ধরে তার পরিবার বংশ পরম্পরায় এ নৃত্যের প্রসারে, বিকাশে কাজ করছে। কত্থক নৃত্যকে তিনি ও তার পরিবার আলোকিত করেছেন। তার নৃত্য সরাসরি দেখা বিরল সৌভাগ্যের বিষয়। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশ ও এ দেশে তার ছড়িয়ে থাকা শিষ্যদের প্রতি প-িত বিরজু মহারাজের রয়েছে অপরিমেয় ভালবাসা। প্রায় ৮০ বছরের এ প্রবীণ শিল্পী ওই ভালবাসার টানেই ছুটে এসেছেন আমাদের মাঝে। তার সান্নিধ্য, তার উপস্থিতি এ দেশে কত্থক নৃত্যচর্চাকে উৎসাহিত করবে। অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন প-িত বিরজু মহারাজ ও তার শিষ্য শাশ্বতী সেন। বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসার কথা জানিয়ে তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলেন, বাংলা আমি বুঝতে পারি, কিন্তু ভালভাবে বলতে পারি না। তারপর হিন্দীতে তিনি প্রকাশ করেন তার অনুভূতি। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, দুই বছর বয়স থেকে নাচ করি। নাচ আমার রক্তে, আমার চেতনায়। সঙ্গীতও তাই। ছোটবেলায় কলকাতায় নৃত্য করে পুরস্কার পেয়েছিলাম, অনেক তারিফ পেয়েছিলাম। বলতে পারেন বাঙালীরাই আমাকে দিয়েছিল জীবনের প্রথম পুরস্কার। শিল্পসাধনাকে নিজের প্রথম ও শেষ আরাধনা উল্লেখ করে শিল্পী বলেন, সঙ্গীত ও নৃত্য পরস্পর সম্পর্কিত। ছন্দ, লয় ছাড়া সঙ্গীত হয় না, নৃত্যও হয় না। ছন্দের স্বর্গীয় সুধা নিয়েই আমাদের শিল্পজীবন। যারা নাচ করছেন, গান করছেন, তারা আমার আত্মীয়। মঞ্চ আমাদের কাছে মন্দির। মঞ্চে আমরা শিল্পের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় নানা আচারও পালন করি। আলোচনা শেষে শুরু হয় বিদুষী শাশ্বতী সেনের একক কত্থক নৃত্য। তার এ পরিবেশনার কোরিওগ্রাফার ছিলেন প-িত বিরজু মহারাজ। শুরুতে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানিয়ে শাশ্বতী সেন বলেন, ৪৮ বছর ধরে প-িত বিরজু মহারাজের কাছে নাচ শিখছি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখছি। তার কাছ থেকে শেখার তৃষ্ণা আমার কখনও মেটেনি, মিটবেও না। অনুভূতি প্রকাশ শেষে শুরু হয় শাশ্বতী সেনের নৃত্যের ঝঙ্কার। এ সময় মঞ্চে কণ্ঠ সঙ্গীত পরিবেশন করেন উৎপল ঘোষাল। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও চন্দ্রচূর ভট্টাচার্য। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অপূর্ব সুরলহরীতে কত্থক নৃত্যের নানা মুদ্রায় এ সময় দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেন শাশ্বতী। তার নৃত্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য অভিনয়ধর্মিতা। নৃত্যের তালে তালে, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তোলেন তার পরিবেশনা। শুরু করেন কৃষ্ণ বন্দনা দিয়ে। তারপর নানা দেব-দেবীর অর্চনা করেন। ফুটিয়ে তোলেন শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে আধুনিক নৃত্যের নানা সংমিশ্রণ। তার নৃত্যধারা কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের। বাদ্যের তালের সঙ্গে পা ঠুকে তিনি তৈরি করেন অপূর্ব নান্দনিক মাত্রা। তাতে একটা স্বর্গীয় আবহ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মিলনায়তনে। রাত নয়টার দিকে পরিবেশনা নিয়ে আসেন প-িত বিরজু মহারাজ। তার আগে রাগসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তিনি গেয়ে শোনান বাংলা রাগপ্রধান গান ‘নাইবা পেলাম তোমার দর্শন/ গানে গানে যদি তোমায় পাই/ আমি সুরে সুরে তোমায় ছুঁয়ে যাই।’ এরপর মঞ্চে আসেন প-িত বিরজু মহারাজ। এ সময় তার চারদিকে গোল হয়ে বসেন শিষ্যরা। তাদের মধ্যে ছিলেন শাশ্বতী সেন, মুনমুন আহমেদ, শিবলী মুহাম্মদ প্রমুখ। এ সময় বসে বসেই তিনি দেখান কিছু নৃত্যের মুদ্রা। তারপর গেয়ে ওঠেন শাস্ত্রীয় রাগ সঙ্গীত। কখনও নৃত্যের তালে, কখনও সঙ্গীতের মূর্ছনায় তিনি মাতিয়ে রাখেন দর্শক-শ্রোতাদের। একতালে, তিনতালে তিনি পরিবেশন করেন নৃত্যের মুদ্রা। কখনও হাতের আঙ্গুল দিয়ে ফুটিয়ে তুলেন নৃত্যের চালগুলো। মালা গাঁথার দৃশ্য, রুটি ভাজার দৃশ্যসহ নানা অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলেন তিনি। ফাঁকে ফাঁকে গেয়ে শোনান বেশ কিছু রাগ সঙ্গীত। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১২ জানুয়ারি শুরু ॥ আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ সেøাগানে ৯ দিনের এ উৎসবের আয়োজক রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশের ১৮৮টি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পাবে সিনেমাপ্রেমীরা। জাতীয় জাদুঘর, সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, আমেরিকান সেন্টার মিলনায়তন ও স্টার সিনেপ্লেক্সের পাঁচটি ভেন্যুতে চলবে এ উৎসব। স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়া অন্যান্য ভেন্যুতে ৩০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে দেশ-বিদেশের বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ওপর নির্মিত বৈচিত্র্যময় ছবিগুলো উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুদান সহায়তায় উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করছে আইএফআইসি ব্যাংক। সোমবার রাজধানীর ঢাকা রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে আয়োজনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা কবি রবিউল হুসাইন, নাট্যজন ম. হামিদ, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ হায়দার রিজভী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১২ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হবে লেবাননের নির্মাতা মাই মাসরি নির্মিত চলচ্চিত্র ‘থ্রি হানড্রেড নাইটস’। ছবি দেখার এ বিশাল আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ রেট্রোস্পেক্টিভ বিভাগে প্রদর্শিত হবে ইরানি নির্মাতা আব্বাস কিওরোস্তামি এবং তুরস্কের নারী নির্মাতা ইয়াসিম ইয়াস্তাওগলু নির্মিত ৫টি করে ছবি। এছাড়া ৭টি বিভাগে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বিভাগগুলো হলো এশিয়ান কমপিটিশন, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড সেকশন, চিলড্রেনস ফিল্ম সেকশন, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, উইমেন ফিল্ম মেকার সেকশন, শর্ট এ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম সেকশন ও নরডিক ফিল্ম সেকশন। উৎসবের অংশ হিসেবে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ও জাতীয় জাদুঘর যৌথভাবে সপ্তম ঢাকা সিনেমা ওয়াকশপের আয়োজন করেছে। ৫ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলমান কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন ইরানের নির্মাতা অধ্যাপক মজিদ মোভাগাস্কি। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগিতায় চলচ্চিত্রে নারী বিষয়ক তৃতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। একই স্থানে মোনাকোভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এমারজিং ট্যালেন্ট ফিল্ম এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের উন্মুক্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এটি পরিচালনা করবেন চলচ্চিত্রকার ও সাংবাদিক সামিয়া জামান। উৎসবের অংশ হিসেবে প্রথমবারের একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। ধানম-ির শিল্পাঙ্গন আর্ট গ্যালারিতে ইরানি চিত্রশিল্পী সারাহ হোজ্জাতির আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীটি চলবে ৭ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, আফগানিস্তান, ইরান, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা, কাতার, ফ্রান্স, মঙ্গোলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চীন, নেদারল্যান্ডস পাকিস্তান, কিউবা, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ইরাক, আফগানিস্তান, নরওয়ে, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর, থাইল্যান্ড, পোল্যান্ডসহ ৬৭টি দেশের নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। দৃক গ্যালারিতে ‘দি বিউটি অব এইটিনথ’ ॥ আলোকচিত্র প্রতিষ্ঠান আকাশ ফটোগ্রাফির ১৮ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোমবার থেকে রাজধানীর ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো তিনদিনের আলোকচিত্রী প্রদর্শনী ‘দি বিউটি অব এইটিনথ’। পেশাদার আলোকচিত্রী আবু তাহের লিটন আকাশের সাম্প্রতিক তোলা অর্ধ শতাধিক আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। এ সময় আলোকচিত্রী রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব অভিজিৎ চৌধুরী। ফ্রিল্যান্স ও প্যাকেজ নাটকে আলোকচিত্রী হিসেবে লিটন আকাশের পথচলা শুরু। শুরু থেকেই সেলিব্রেটিদের ছবি তোলার দিকে মনোযোগ দেন। ২০০৩ সাল থেকে ধানম-িতে গ্ল্যামার স্টুডিও দেন। আর তখন থেকেই যেন পূর্ণতা পায় তার আলোকচিত্র। বিভিন্ন সময়ে সেলিব্রেটিদের ছবি তুলতে থাকেন। এই প্রদর্শনীতে সঙ্গীত তারকা জেমস, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা মৌসুমীসহ তারকা শিল্পীদের পাশাপাশি উঠতি নায়ক-নায়িকা ও মডেলদের স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
×