ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ ইসির

জেলা পরিষদ নির্বাচন কাল আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

জেলা পরিষদ নির্বাচন কাল আচরণবিধি লঙ্ঘনের  নানা অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক প্রার্থী এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দাখিল করেছেন স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে কমিশন থেকে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী এ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা প্রচার চালাতে পারবেন না। আবার তারা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না হওয়ায় ভোটও দিতে পারছেন না। এজন্য স্থানীয় এমপিদের এলাকা ত্যাগের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ও ক্যামেরা নিয়েও কোন প্রার্থীকে বুথে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে দেশের অন্যকোন রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে এমপিদের বিরুদ্ধে ভোট কেনাবেচা থেকে শুরু করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে ভোটাররা ভোট কেনাবেচায়ও বেশ দর কষাকষি করছেন। বিশেষ করে এলাকায় যেসব জনপ্রতিনিধি ভোটার ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত তারাই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে প্রকাশ্যে বিষয়টি কেউ স্বীকার না করলেও কিছু প্রার্থী কমিশনে এ বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানা গেছে, ভোটাররাও যেসব প্রার্থীর কাছ থেকে বেশি টাকা পাচ্ছেন তাকেই ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আবার প্রার্থীরা ভোট কিনে নিশ্চিত হচ্ছে না। যার কাছ থেকে ভোট কিনেছেন তিনি সত্যি ভোট দিয়েছেন কিনা তা যাচাই করতে ব্যালট পেপারে বিশেষ চিহ্ন দেয়ার অঙ্গীকার আদায় করে নিচ্ছেন। এমনকি প্রার্থীরা যারা ভোট কিনেছেন তারাও ভোটারদের ভোট দেয়ার পর চিহ্ন দেয়া ব্যালটের ছবি তুলে আনতে বলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারেন বলে এর আগে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে কমিশনকে সতর্কও করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর কমিশনের সঙ্গে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠককালে এ সতর্কতা দেয়া হয়। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলা হয় জেলা পরিষদের প্রার্থীরা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। কারণ জেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন তারা মূলত সিলেক্টটিভ ভোটার। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল এতে ভোট প্রদান করবেন। তাই প্রার্থীরা তাদের ভোট টানতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হুমকি প্রদানের ঘটনাও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই এ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ নির্ভয়ে ভোট প্রদান করতে পারেন সেজন্য তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে কিছু লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, কিছু প্রার্থী ও সরকারদলীয় সাংসদ নানানভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তারা কমিশনে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগও দিয়েছেন। নির্বাচনে এ ধরনের কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ওই সাংসদদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলে দেয়া হয়েছে মোবাইল ও ক্যামেরা নিয়ে বুথে যাওয়া যাবে না। ব্যালট পেপারে কোন চিহ্ন থাকলে তা বাতিল করা হবে। কিছু এমপির বিরুদ্ধে ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ, পাশাপাশি কিছু এমপি এ নির্বাচনে কমিশনকে সহায়তা করছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যারা এ নির্বাচনে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে তাদের বলতে চাই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করবেন না। যারা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় এমপিদের দুই দিনের জন্য এলাকা থেকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য অথবা প্রভাবশালী যেই হোন না কেন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু এমপিরা এ নির্বাচনে ভোটার নন তাই নির্বাচনের জন্য তাদের এলাকায় থাকার কোন অধিকার নেই। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাতে কোন অনিয়ম না হয়, সেজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষের সামনে একজন করে নির্বাহী হাকিম রাখা হবে। কোন ভোটার বা জনপ্রতিনিধি ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোটারকে তল্লাশি করে তা নিশ্চিত করবেন। ব্যালট পেপারের কোথাও পরিচিতিমূলক চিহ্ন ব্যবহার করলে তা বাতিল করা হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন একটি নতুন সংযোজন। কমিশন সুন্দরভাবে নির্বাচনটি করতে চায়। এজন্য অন্যান্য নির্বাচনের মতো পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা বাহিনী কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান করবে। কেন্দ্রকে ঘিরেই নিরাপত্তা বলয় থাকবে। শান্তিতে সবাই যেন ভোট দিতে পারে সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
×