ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিউইদের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

কিউইদের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষা হবে বিদেশের মাটিতে খেলা এমনটা অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই বলেছিলেন। সেই পরীক্ষার শুরুটা সোমবার নিউজিল্যান্ড সফরে হার দিয়েই হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৭ রানে পরাজিত হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। প্রথম ব্যাট করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ওয়ানডের সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ৩৪১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৪.৫ ওভারে ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। এ পরাজয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে কিউইরা। বাজে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংকেই দুষেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তবে ইতিবাচক বেশকিছু দিক ছিল প্রথম ওয়ানডেতে সেটা পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার হবে এবং দলকে বাড়তি বিশ্বাস জোগাবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উদ্ভাসিত নৈপুণ্য অনেক প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল। তাই নিউজিল্যান্ড সফরেও দারুণ কিছু করবে টাইগাররা এমনটাই ছিল আশা। শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে সফরকারী মাশরাফিরা টস হেরে। আগে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডকে অবশ্য শুরুর দিকে বেশ চাপেই রেখেছিলেন মাশরাফি, ৫ মাসের ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা পেস বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানরা। ২৮.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান দেখে মনেই হয়নি বিশাল কোন রান করতে পারবে নিউজিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিলকে এক ভয়ানক সেøায়ারে বিভ্রান্ত করে সাজঘরে ফিরিয়ে শুরুটা করেছিলেন মুস্তাফিজই। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে টম লাথাম ও কলিন মুনরোর ১০৭ বলে গড়া ১৫৮ রানের ঝড়ো জুটিই সব বিফল করে দিয়েছে। মুনরো মাত্র ৬১ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭ রান করে যখন ফিরে গেছেন ততক্ষণে ৩০০ পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। সাকিব তাকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন। ফিল্ডাররা বেশ কয়েকটি ক্যাচ ছেড়েছেন এবং দুর্দশাগ্রস্ত ফিল্ডিংয়ের নিদর্শন দেখিয়েছেন। লাথাম ক্যারিয়ারসেরা ১৩৭ রান করেন (ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সেঞ্চুরি) ১২১ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৭ উইকেটে ৩৪১ রানের বড় সংগ্রহ পায় তারা। এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালে শারজায় ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানই ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিউইদের সর্বাধিক সংগ্রহ। সাকিব ৬৯ রানে তিনটি এবং মুস্তাফিজ ও তাসকিন দু’টি করে উইকেট নেন। হ্যামিল্টনে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩১৮ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ৩২২ রান তুলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে সর্বাধিক ১৯০ রান করার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের ২০১৩ সালে। এর অর্থ একটি রেকর্ড গড়তে হবে জেতার জন্য। শুরুতেই আশাহত হতে হয়েছে বাংলাদেশকে জেমস নিশাম ও টিম সাউদির গতি ও বাউন্সের তোপে। ৮১ রানেই ৪ উইকেট হারায় দল। তামিম ইকবাল ৫৯ বলে ৫ চারে ৩৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ততক্ষণে ইমরুল কায়েস (১৬), সৌম্য সরকার (১) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (০) সাজঘরে। এরপরও সাকিব-মুশফিক আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সাকিব ৫৪ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ে ৫৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিক ৩৯তম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ৪৮ বলে ৩ চারে ৪২ রান করেছিলেন তিনি। এরপরই আসলে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। তবে তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন দারুণ লড়াই করেন। তিনি ৪৪ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে অপরাজিত থাকেন ৫০ রানে। তবে তাকে সঙ্গ দেয়ার কেউ ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস, তখনও ৩১ বল হাতে ছিল দলের। পরাজয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘এই রান তাড়া করতে হলে শুরুতে দ্রুত রান করতে হবে। উল্টো শুরুতে উইকেট পড়েছে। তবে সাকিব শেষ পর্যন্ত থাকলে... উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য যতটা সহজ ছিল, অন্যরকম কিছু হতে পারত। ওই সময় সাব্বিরও আউট হয়ে গেছে। দুই বিগ হিটার আউট হয়ে যাওয়ায় কাজটা কঠিন হয়ে যায়। তবে মুশফিক ও সৈকত (মোসাদ্দেক) যখন ছিল, একপর্যায়ে ৮৪ বলে ১৪০ লাগত। টি২০ ম্যাচের মতো। তখন মুশফিকের চোট সমস্যা করল। না হলে হয়ত আমরা ৩০০-৩১০ পর্যন্ত গিয়ে তার পর কিছু করার চেষ্টা করতাম।’ দলের তিন বিভাগেই ব্যর্থতা নিয়ে হতাশ হলেও ইতিবাচক অনেক কিছু থাকায় পরবর্তী ম্যাচের জন্য অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালেও পরে মোটামুটি একটা রান করেছি। সামনে যদি আমরা ওদের ২৮০-৩০০ রানে আটকে রাখতে পারি, এই ম্যাচ তাহলে বিশ্বাস জোগাবে যে আমরা সেই রান তাড়া করতে পারি।’
×