ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশুলিয়ার পোশাক কারখানা খুলে দেয়ায় মন্ত্রিসভায় সন্তোষ

নারায়ণগঞ্জের মতোই হবে ভবিষ্যতের নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের মতোই হবে ভবিষ্যতের নির্বাচন

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আশুলিয়ায় সব পোশাক কারখানা পাঁচ দিন পর খুলে দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির (আফটা) দ্বিতীয় সংশোধনীর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক একটি বাণিজ্য চুক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ভাল হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করছি। চেষ্টা করছি দেশের মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়ার বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আশি শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। একটি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ রয়েছে। সেটা খোলার ব্যাপারে কাজ চলছে। তার কথা শেষ হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানিÑ সব খবর আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়ার উদ্যোগকে মন্ত্রিসভা স্বাগত জানিয়েছে। তবে নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সময় এখনও আসেনি। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে সপ্তাহখানেক বিক্ষোভের পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল, জামগড়া, নরসিংহপুর ও এর আশপাশের এলাকার ২৫টি কারখানার শ্রমিকরা গত সোমবার কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর কয়েকজন মন্ত্রী শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও পরদিন ৫৫টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে যোগ দেন। এ পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, কাজে না ফিরলে শ্রমিকরা বেতন পাবে না। এরই মধ্যে শ্রমিক বিক্ষোভে উসকানি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন কারখানার সহস্রাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১৯ শ্রমিক নেতা ও এক সাংবাদিককে। তিনটি কারখানার প্রায় সাড়ে তিনশ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে ফটকে নোটিস ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান রবিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ৩০ শ্রমিক সংগঠনের অনুরোধে বন্ধ কারখানাগুলো সোমবার থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার সকালে আশুলিয়ার বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়া হলে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাব কাজে যোগ দিতে দেখা যায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ভাল উদ্যোগ। ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকলে আমাদের দেশের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি এবং শ্রমিক-মালিকদের সমস্যা হতো। কারখানাগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, বেতন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বিধান আছে, তা হালনাগাদ করারও সুযোগ আছে। যে পদ্ধতিটা আইনে দেয়া আছে এখনও সে সময় আসেনি। মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালে সরকারের গঠিত মজুরি বোর্ড বাংলাদেশের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এরপর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় বাজার দর ও জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে জানিয়ে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে ওই দাবি নাকচ করে বিজিএমইএ বলেছে, বর্তমান মজুরি কাঠামোর অধীনে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। অভ্যন্তরীণ ও চলমান বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে ‘পোশাক শিল্পের অবস্থা ভাল নয়’ দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির (আফটা) দ্বিতীয় সংশোধনীর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্য চুক্তি (আফটা) আগে ব্যাংকক চুক্তি নামে পরিচিত ছিল। পরে ২০০৫ সালে এর নাম হয় আফটা। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও লাওস এ চুক্তির সদস্য। মঙ্গোলিয়ার সদস্যপদের বিষয় ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে। খসড়ায় এ চুক্তির আওতায় শুল্কায়নের চূড়ান্ত নতুন তালিকা রয়েছে। এতে বাংলাদেশ সাধারণত আফটা দেশগুলোকে ৫৯৮টি পণ্যে ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আরও ৪টি পণ্যে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়। চুক্তি অনুযায়ী চীন ৯১টি এবং ভারত ৩ হাজার ৩৩৪টি পণ্যে ৫ থেকে একশ’ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়।
×