ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির কাছে জাসদের প্রস্তাব

সংবিধানের মূলনীতিতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

সংবিধানের মূলনীতিতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি অর্থাৎ সংবিধানের চার মূলনীতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইনু অংশ। সোমবার বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ প্রস্তাব দেয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সাতদফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে তার প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সার্চ কমিটি ও ইসি গঠনে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের মূলনীতিতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার আনুষ্ঠানিকভাবে জাসদের সাতদফা মতামত তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে স্থায়ী পদ্ধতি প্রচলনের পাশাপাশি সার্চ কমিটি ও ইসিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতেরও প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান তিনি। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি জাসদ প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তাদের সুচিন্তিত মতামত নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়তা করবে। সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। এদিকে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া প্রস্তাবসমূহের মধ্যে রয়েছেÑ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি অর্থাৎ সংবিধানের চার মূলনীতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা। সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের পূর্বে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠন করা। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরু করা। বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দলসমূহ, সামাজিক ও নাগরিক সংস্থা এবং দেশের যে কোন নিবন্ধিত ভোটারের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নামের প্রস্তাব আহ্বান করা। বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে তিনজন করে নামের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা। বাছাই কমিটি কর্তৃক ১/৩ ভিত্তিতে বাছাইকৃত ১৫ জনের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের পূর্বে উক্ত তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা ও রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ন্যূনতম একজন নারী নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। জাসদের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সমীপে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) পক্ষ থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতিতে ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা মোতাবেক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অনুযায়ী বাছাই কমিটি গঠন অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাছাই কমিটি গঠন ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সুদৃঢ় করবে। বৈঠকে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি এ্যাডভোকেট রবিউল আলম, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ডাঃ এমএ করিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন খান, এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, এ্যাডভোকেট জিকরুল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আখতার, নাদের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দফায় গত ১২ ডিসেম্বর পাঁচটি দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায় বঙ্গভবন। তার মধ্যে ছিলÑ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দ্বিতীয় দফায় ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবং একই দিন সাড়ে ৪টায় ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় জাতীয় পার্টি (জেপি), ৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাষ্ট্রপতি। আজ ওয়ার্কার্স পার্টির সংলাপ ॥ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আজ বিকেলে বঙ্গভবনে যাবে। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেবে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠনে পার্টির প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করবেন। সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ হলেনÑ রাশেদ খান মেনন এমপি, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বিমল বিশ্বাস, আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, হাজেরা সুলতানা এমপি, ইকবাল কবির জাহিদ, কামরুল আহসান, এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি।
×