ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা বাড়বে ১৫০ মেও

সেচে শতভাগ বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

সেচে শতভাগ বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নির্দেশ

রশিদ মামুন ॥ সেচে শতভাগ বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সেচ মৌসুম শুরুর আগেই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে বেশিরভাগ সেচ এলাকা রয়েছে পল্লী বিদ্যুত সমিতির হাতে। ফিডার ওভারলোড না থাকলে সেচ সংযোগ দ্রুত দেয়ার জন্য সমিতিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বিদ্যুতে সেচ সাশ্রয়ী এবং সহজ পন্থা ॥ সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফরি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদেশে গত চার বছরে কৃষি সেচে অন্তত ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। এর আগে ২০১১-১২ সালে যেখানে কৃষি সেচে ৪০ ভাগ বিদ্যুতের ব্যবহার হতো, এখন তা বেড়ে ৬৪ শতাংশ হয়েছে। ইফরি তাদের গবেষণায় বলেছে, সৌরচালিত কৃষি পাম্প দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের বরিশাল এলাকায় কৃষি সেচে সৌরশক্তির ব্যবহার সব থেকে বেশি। তবে কৃষিতে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করা গেলে মূল গ্রিডের ওপর চাপ কমত, বিদ্যুতের স্থিতিশীল ব্যবহারের জন্য যাকে জরুরী বলে মনে করা হয়। আরইবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর সারাদেশে তাদের অধীনে সেচ পাম্প ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার। চলতি বছর তা সাড়ে তিন লাখ হতে পারে। এতে অন্তত ২০ হাজার নতুন সেচ সংযোগ দিতে হবে। সেচ গ্রাহকরা যাতে দ্রুত সংযোগ পায়, সে বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড দেখভাল করছে। আরইবির একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুত বিভাগ থেকে সকল সেচ গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি বছর এতে আরও ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুত চাহিদা তৈরি হবে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস সেচ মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিলে সব থেকে বেশি পানির প্রয়োজন হয়। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। সরকার কৃষিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ দিয়ে থাকে। বোরো মৌসুমে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লাভজনক বিবেচনায় কৃষক এখন ধানের পরিবর্তে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছে। এক্ষেত্রে কোন কোন এলাকায় বোরো মৌসুম ছাড়াও সেচে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তবে কিছুটা আশার কথা হচ্ছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালে এসে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমেছে। এর বিপরীতে ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বেড়েছে। যদিও এ সময়ে গভীর নলকূপের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি ইফরি যে গবেষণা প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, কৃষির বহুমুখীকরণ অর্থাৎ ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষক ধান ছাড়াও অন্য ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষক সব থেকে বেশি মুনাফা করছে বেগুন বিক্রি করে। এক একর জমির বেগুন বিক্রি করে কৃষক দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করে। ফলে কৃষকের ওই সময়েও সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সেচ মৌসুমের জন্য গত বছর এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। এজন্য বিদ্যুত কেন্দ্র মালিকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে বিদ্যুত বিভাগ। ওই প্রক্রিয়ায় কোন্ পন্থায় বিদ্যুতের সংস্থান করা হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সম্প্রতি কৃষি সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেলের সংস্থান নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বিপিসির তরফ থেকে জানানো হয়, সারাদেশে সেচ মৌসুমে ডিজেলের বিক্রি দশমিক ৯ ভাগের মতো কমেছে। দেশের ধান উৎপাদনের প্রধান এলাকা উত্তরাঞ্চলে ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৪-১৫ সালে ডিজেলের বিক্রি হ্রাস পেয়েছে ৩ দশমিক ৪৪ ভাগ। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সেচে বিদ্যুত দেয়ার জন্য সরকারের পৃথক পরিকল্পনা রয়েছে। আগের মতোই কৃষি সেচ মৌসুমে সেচ পাম্পগুলো যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পায় সে ব্যবস্থা এবারও করা হবে।
×