ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭ দিনের রিমান্ডের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে নারী জঙ্গীরা

আশকোনার সূর্য ভিলাকে সদর দফতর করে জঙ্গী মাঈনুল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

আশকোনার সূর্য ভিলাকে সদর দফতর করে জঙ্গী মাঈনুল

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির নেটওয়ার্ক ও আত্মঘাতী দলের (সুইসাইড স্কোয়াড) নারী জঙ্গী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে রাজধানীর আশকোনার জঙ্গী আস্তানায় আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে আনা দুই নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষা মণি। পলাতক শীর্ষ জঙ্গী মাঈনুল ওরফে মুসাই নব্য জেএমবির দায়িত্ব নিয়ে আশকোনার সূর্য ভিলা বাড়িটিকে জঙ্গী সংগঠনের সদর দফতর তৈরি করে জঙ্গী তৎপরতা শুরু করে। রাজধানীর আশপাশেই আরও জঙ্গী আস্তানা রয়েছে, যেখানে মুসাসহ তার সহযোগী জঙ্গীরা আত্মগোপন করে আছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ ধরনের তথ্যের কথা জানিয়ে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানীর আশকোনার জঙ্গী আস্তানায় আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষা মণিকে সোমবার ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আশকোনার জঙ্গী আস্তানার বিষয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কিশোর জঙ্গী আফিফ কাদেরীর মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকা আত্মঘাতী নারী জঙ্গী শাকিরার লাশ নিতে আসেনি স্বজনরা। আহত শিশু সাবিনা এখনও ঘুমের ঘোরে মাকে খুঁজছে। সাত দিনের রিমান্ডে দুই নারী জঙ্গী ॥ রাজধানী দক্ষিণ খানের পূর্ব আশকোনার সূর্য ভিলা নামের তিনতলা ওই বাড়ি থেকে আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষা মণিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এই দুই নারী জঙ্গীর পরিচয় হচ্ছেÑ মিরপুরের রূপনগরে অভিযানে নিহত জঙ্গীনেতা সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা (৩৪) এবং পলাতক জঙ্গীনেতা মাঈনুল ইসলাম মুসার স্ত্রী তৃষা মণি ওরফে উম্মে আয়শা (২২)। শনিবার পুলিশী অভিযানের একপর্যায়ে দুই সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এই দুই নারী। তারা একটি পিস্তল ও গুলি পুলিশকে দেন। সোমবার দুই নারী জঙ্গীকে ঢাকার আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চান কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোঃ সায়েদুর রহমান। শুনানি শেষে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মেহের নিগার। নব্য জেএমবির দুই নেতার স্ত্রীর পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। বোরকা পরা ওই নারীরা নিজেরাও কোন কথা বলেননি। জেবুন্নাহার শীলার স্বামী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদ গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন। এরপর আজিমপুরে যে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে তানভীর কাদেরী নিহত হন, সেখানেই অন্য জঙ্গী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দুই সন্তান নিয়ে ছিলেন জেবুন্নাহার শীলা। তবে অভিযানের চার দিন আগে তিনি এক বছর বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে সেখান থেকে সরে যান বলে পুলিশের ভাষ্য। তার সাত বছর বয়সী মেয়েটি সেখানে অন্যদের সঙ্গে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। আজিমপুর আস্তানায় জঙ্গীবিরোধী অভিযানের পর থেকেই জেবুন্নাহারকে খুঁজছিল পুলিশ, যাকে তিন মাস পর আশকোনার বাড়িটিতে পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জাহিদ নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন। তিনি এই জঙ্গীগোষ্ঠীর সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন বলে পুলিশ জানায়। শনিবার পুলিশের রিপল-২৪ অভিযানের সময় ওই বাড়িতে অভিযানে দুজন নিহত হন। তাদের একজন আজিমপুরে নিহত জঙ্গীনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলে আফিফ কাদেরী, অন্যজন পলাতক জঙ্গী রাশেদুর রহমান সুমনের স্ত্রী শাকিরা ওরফে তাহিরা। আত্মঘাতী নারী জঙ্গী শাকিরার শিশুকন্যা সাবিনাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর সে এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, আশকোনায় অভিযানের ঘটনায় মোট আটজনকে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেছে পুলিশ। সেই মামলায় জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষাকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আশকোনার সূর্য ভিলা নামের সেই বাড়িটিকে জঙ্গীরা তাদের ‘সদর দফতর সেইফ হাউস’ ও কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করত বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত দিন ধার্য করেছে আগামী ১৭ জানুয়ারি। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম মেহের নিগার সূচনা এ দিন ধার্য করেন। এ দিন একই আদালত আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষা মণির সাত দিনের রিমান্ড প্রদান করেন। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক এসআই শাহিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেনÑ জেবুন্নাহার শীলা, তৃষা মণি, শাকিরা, সামিনা, আফিফ কাদেরী, মাঈনুল ইসলাম, রাশেদুর রহমান, সেলিম ও ফিরোজ। মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়। গত শনিবার ওই এলাকার সূর্য ভিলা নামক একটি বাড়িতে ‘অপারেশন রিপল-২৪’ চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এতে দুই জঙ্গী নিহত হয়। গুলির আঘাতেই নিহত কিশোর জঙ্গী ॥ গুলির আঘাতে নিহত হয়েছে রাজধানীর আশকোনায় পরিচালিত রিপল-২৪ জঙ্গীবিরোধী অভিযানে আফিফ কাদেরী ওরফে আদর। সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে এ কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, আফিফের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটি গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য চুল, দাঁত ও থাই মাসল এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য ভিসেরা, রক্ত ও মূত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা ঢামেকের ডিএনএ ল্যাবে ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য নমুনা মহাখালীতে অবস্থিত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার জানান, সোমবার বেলা দেড়টার দিকে শুরু হওয়ার পর ২টার দিকে এই ময়নাতদন্ত শেষ হয়। গত রবিবার সূর্য ভিলা থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আফিফের হাতে একটি নাইন এমএম পিস্তল ছিল এবং পাশে একই ধরনের আরও একটি অস্ত্র পড়ে ছিল। রাজধানীর আজিমপুরে আত্মঘাতী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর কাদেরী ও তার যমজ ছেলে আফিফ কাদেরীর মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তার বাবা তানভীর কাদেরী রাজধানীর আজিমপুরে পুলিশের অভিযানের সময় আত্মঘাতী হন। তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা এখন কারাগারে। আফিফ কাদেরী আজিমপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর যমজ দুই ছেলের একজন। অপরজনের নাম তাহরীম কাদেরী বর্তমানে গ্রেফতারের পর সংশোধনাগারে আটক রাখা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামের তিনতলা বাড়ির জঙ্গী আস্তানায় ১৬ ঘণ্টার অপারেশন রিপল-২৪ চলাকালে এক নারী জঙ্গী আত্মঘাতী হয় ও পুলিশের গুলিতে আফিফ কাদেরী নিহত হয়। আত্মসমর্পণ করে দুই শিশুসহ দুই নারী। আহত এক শিশু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আত্মঘাতী নারী জঙ্গীর লাশ নিতে কেউ আসেনি ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্বপাড়ায় সূর্যা ভিলায় আত্মঘাতী বোমায় নিহত নারীর লাশ ‘মরচুয়ারি কুলারে’ রাখা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত অজ্ঞাত ওই নারীর লাশের খোঁজে কোন স্বজন আসেনি বলে জানা গেছে। সাধারণত অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেলে তিন-চার দিন পরিচয় শনাক্তের জন্য রেখে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে রাখা হয়। তারপর দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে জঙ্গীদের ক্ষেত্রে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দুই-তিন মাস পর্যন্ত লাশ সংরক্ষণ করা হয়ে আসছে। ঢামেক মর্গে অজ্ঞাত হিসেবে পড়ে থাকা ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীর নাম শাকিরা। তিনি জঙ্গী সুমনের স্ত্রী। আগে ইকবাল নামে একজনের স্ত্রী ছিলেন শাকিরা। ইকবাল ৭ বছর আগে ক্যান্সারে মারা যান। এরপর সুমনের সঙ্গে সম্পর্ক করে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েন শাকিরা। ঘুমের ঘোরে শিশুটি মাকে খুঁজছে ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার জঙ্গী আস্তানায় আত্মঘাতী বোমার আঘাতে নিহত নারী জঙ্গী শাকিরার সঙ্গে গুরুতর আহত হওয়া শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘুমের ঘোরে তার মা’কে খুঁজছে। শিশুটির পেটে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হওয়ায় অনেকটা সময় তাকে ঘুমের ট্যাবলেট ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখছেন চিকিৎসকরা। শিশুটির দেহে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হওয়ায় শরীরে প্রচ- ব্যথা। তাকে ব্যথামুক্ত রাখতে ইনজেকশনের পাশাপাশি ঘুমজাতীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দু’চারটা কথা বলেছে। শিশুটির খাদ্যনালীতে একাধিক ছিদ্র থাকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেলাই করে ফুটো বন্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের আগে শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় মুসা ॥ রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়া নিতে পুলিশের ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেছিল মাঈনুল ওরফে মুসা। তবে মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিল যেটা প্রমাণিত হয়েছে ভুয়া। এমনকি ইমতিয়াজ নামের জাতীয় পরিচয়পত্রটাও ছিল ভুয়া। রাজধানী বা রাজধানীর আশপাশের কোন এলাকাতেই মুসা অন্য কোন নামে আরও একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে আত্মগোপন করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তদন্তকারী পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, মুসার প্রকৃত নাম মাঈনুল। তার সাংগঠনিক নাম হলো মুসা। তারও গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। রাজশাহী নিউ গভঃডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ পাস করে মুসা। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সে। এরপর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের লাইফ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়। আশকোনার বাসায় প্রতি শুক্রবার আসত মুসা। দুই-একদিন থেকে চলে যেত। তার সঙ্গে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মুসা ওই বাসায় আসে। শুক্রবার তার আসার কথা থাকলেও আসেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, মুসার সঙ্গে ওই বাসায় সেলিম ও ফিরোজ নামে দুই ব্যক্তি যাতায়াত করত। কাউন্টার টেররিজম কর্মকর্তারা এই দুই ব্যক্তিকেও খুঁজছে। মুসার আত্মঘাতী হওয়ার নির্দেশ অমান্য করে স্ত্রী তৃষ্ণা ॥ রাজধানীর আশকোনায় সূর্য ভিলায় যখন পুলিশের অভিযান চলছিল তখন টের পেয়ে স্বামী মাঈনুল ওরফে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ত্রী তৃষামণি। তাদের মধ্যে বিশেষ এ্যাপসে ‘সিক্রেট কনভারসেশন’ হয়। বাড়ি ঘেরাও করে ফেলেছে বলে মুসাকে জানায় তৃষামণি। মুসা এ সময় ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ পরে নেয়ার জন্য বলে তৃষামণিকে। নির্দেশ দেয় চার মাসের শিশুসহ আত্মঘাতী হওয়ার জন্য। কিন্তু শিশু সন্তানের কথা মাথায় রেখে স্বামীর সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্তানসহ আত্মসমর্পণ করে তৃষ্ণা। রিমান্ডে আনার পর ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দেয় তৃষামণি। এসব তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। স্বামীরাই স্ত্রীকে জঙ্গী বানাচ্ছে ॥ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘বেশিরভাগ নারী জঙ্গী তাদের স্বামীর মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িত হয়ে পড়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় স্বামী মাঈনুল ওরফে মুসার মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছিল স্ত্রী তৃষামণি। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা তৃষামণির গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা এলাকার বুজরুখোলা গ্রামে। দক্ষিণখানের ওই বাসায় ওঠার আগে স্বামীর সঙ্গে তারা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকত।’ ২০১৪ সালে তৃষামণির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তৃষামণির বাবার নাম আবদুস সামাদ। আর মুসার বাবা আবুল কালাম আজাদ, মাস ছয়েক আগে মারা যান, তার মা সুফিয়া বেগম। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, আত্মসমর্পণকারী তৃষামণি জঙ্গী স্বামীর সঙ্গে থাকলেও জঙ্গীবাদ ততটা পছন্দ করত না। ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তার স্বামী তাকে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত করেছিল বলে দাবি করে। স্বামী মুসার ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাকে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত করেছিল বলে দাবি করে। অপরদিকে আত্মসমর্পণকারী অপর নারী জেবুন্নাহার ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের ধোনাইতরিতে। তার বাবার নাম মমিনুল হক মজুমদার। মায়ের নাম জোহরা আক্তার চৌধুরী। মা জোহরাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে শীলাকে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শীলা জানিয়েছে, সে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী। বছর দু’য়েক আগে তার স্বামী কানাডায় গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরে স্বামীর চাপে তিনি নিজেও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গেই জঙ্গীদের ভাষায় কথিত ‘হিজরত’ করে। গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের তিন দিন আগে আশকোনায় জঙ্গী মুসার আস্তানায় যায় শীলা। উদ্দেশ্য ছিল মুসার শিশু বাচ্চাকে দেখতে যাওয়া। উত্তরায় অবস্থানের কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ১০ সেপ্টেম্বর ওই বাসাতে বসেই সে আজিমপুরে অভিযানের খবর পায়। আজিমপুরের বাসা থেকে তার এক মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার খবরও পায়। পরবর্তী সময়ে ওই শিশুকে নানি জোহরার হেফাজতে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেখানেই থেকে যায় শিলা। সাংগঠনিকভাবে তাদের থাকা-খাওয়ার সব খরচ বহন করতো মঈনুল ওরফে মুসা। গুলশান হামলার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা: পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির নেটওয়ার্ক এবং গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা থাকতে পারে আশকোনায় আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষামণির। তাদের রিমান্ডে নিয়েও এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিআইডির ২টি ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে ॥ সোমবারও রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার সূর্য ভিলা নামের জঙ্গী আস্তানার আলামত সংগ্রহে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফের ঘটনাস্থলে গেছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিআইডির ২টি ক্রাইম সিন ইউনিট সেখানে পৌঁছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এএসপি আব্দুস সালাম। রবিবার সেখানে থাকা ক্রাইম সিন সংগ্রহ করে। সেখানকার বিস্ফোরক দ্রব্য ও গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করে বোম ডিসপোজাল ইউনিট। সোমবারও তারা আলামত সংগ্রহ করেছেন।
×