ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিএমইএ সভাপতির প্রেসব্রিফিং

টানা ১৪ দিন পর আজ থেকে আশুলিয়ার ৫৯ কারখানা খুলছে

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

টানা ১৪ দিন পর আজ থেকে আশুলিয়ার ৫৯ কারখানা খুলছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর আশুলিয়ার ৫৯ কারখানা আজ সোমবার সকাল থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে। রবিবার রাতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জরুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে, শ্রমিক-ভাইবোনদের অনুরোধক্রমে তথা সার্বিক অর্থনীতির দিক বিবেচনা করে আশুলিয়ার যে ৫৯ কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে, সেই কারখানাগুলোর মালিক ভাইদের অনুরোধ করছি ওই ধারা প্রত্যাহার করে কারখানা খুলে দিন। তিনি বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের অনুরোধ করছি আপনারা আজ (সোমবার) সকাল থেকে স্ব স্ব কারখানায় কাজে যোগ দিন এবং কারখানার উৎপাদন সচল রাখুন। আমরা মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে শ্রমিকদের মূল মজুরির ৫ শতাংশ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দিয়ে যাচ্ছি। শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আপনাদের অবদানেই এ শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। অনুগ্রহ করে এ শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এ রকম কোন উস্কানিতে প্ররোচিত হবেন না। এ ধরনের কর্মকা- শুধুমাত্র এ শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না বরং এতে বিদেশেও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। তাই আপনারা দায়িত্বের সঙ্গে নিজ নিজ কাজ করুন। দেশের স্বার্থে উৎপাদনে আমাদের সাহায্য করুন- শিল্পটা আমাদের সবার। প্রসঙ্গত ১১ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়া এলাকায় সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষ কেন্দ্র করে ২০ ডিসেম্বর ৫৯ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন মালিকপক্ষ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে তাদের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুসরণ করা হবে। এমনকি কারখানা বন্ধ থাকায় ওই সময়ের বেতন-ভাতা তারা পাবেন কিনা তাও নির্ধারণে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুসরণ করবে মালিকপক্ষ। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ত্রিশটির বেশি শ্রমিক সংগঠন বিজিএমইএকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে, ১৩(১) ধারায় বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়ার জন্য। সংগঠনগুলো বলেছে যে, কারখানাগুলো খুলে দিলে শ্রমিক-ভাইবোনেরা কাজ করবে। এদিকে, টানা ১৪ দিনের শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ইতোমধ্যে দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজার শ্রমিককে। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে শতাধিক। শ্রমিক নেতাসহ আটক হয়েছেন অন্তত ১৯ জন। হা-মীম ও স্টারলিংকসহ স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এদের আবার চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে কি না জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে প্রচলিত আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর মামলা হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে। দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তিনি বলেন, আশুলিয়ার স্থানীয় এমপিসহ ওই এলাকার বাড়ি মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী তিন বছর তারা কোন ভাড়া বাড়াবেন না। তাই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শ্রম অসন্তোষ হওয়ার কোন কারণ নেই। বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর ব্যাপক মুদ্রা অবমূল্যায়ন এবং এর বিপরীতে মুদ্রার অতিমূল্যায়ন, রিমেডিয়েশনের অতিরিক্ত চাপ, গ্যাস সঙ্কট, পোশাকের মূল্যহ্রাস এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পের অবস্থা বর্তমান ভাল না। এই পরিস্থিতিতে একান্ত প্রত্যাশা, এ শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কিছু আর করবেন না। এদিকে, পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা নস্যাৎ করার জন্য কতিপয় অসাধু শ্রমিক নেতা ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করছেন গোয়েন্দারা। আশুলিয়ায় কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দশটি নিয়ন্ত্রণ অফিস খোলা হয়েছে। ওসব অফিস থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দারা ৭/৮ শ্রমিক নেতার নাম পেয়েছেন। তারা নিশ্চিত হয়েছেন, আন্দোলনের নামে ওসব নেতা শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পোশাক খাতে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। প্রয়োজনে ওই নেতাদের গ্রেফতার করা হবে। শ্রমিক নেতাদের বড় একটি অংশ সম্প্রতি সরকার ও পোশাক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, এই আন্দোলনের প্রতি তাদের কোন সমর্থন নেই। কিন্তু নেপথ্যে তাদের অনেকেই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×