ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ভারতীয় শিল্পীদের নৃত্য ও অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বগুড়ায় ভারতীয় শিল্পীদের নৃত্য ও অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক

সমুদ্র হক ॥ প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে প্রাচীন সভ্যতা থেকে বিবর্তনের পালায় ধরণীর রূপাতীত ধারায় ক্লাসিক্যাল উড়িশি নাচ এবং স্বামী বিবেকানন্দের জীবনীর ওপর ভিত্তি করে ‘পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ’ নাটক মঞ্চস্থ হয় বগুড়া শহীদ টিটু মিলনায়তনে। শনিবার সন্ধ্যায় মিলনায়তন পূর্ণ হাজারও দর্শকের সামনে নাটক পরিবেশন করে ভারতের বাংলা রাজ্যের শিউড়ীর শ্রীঅরবিন্দ অনুশীলন কেন্দ্র ও মিউজিক কলেজ। উড়িশি নৃত্য পরিবেশন করে ভারতের পন্ডিচেরির উড়িশি নৃত্যশিল্পী সঙ্গীতা দাশ। এই নাটক ও উড়িশি নাচের আয়োজন করে বগুড়ার শ্রীঅরবিন্দ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। নাটকের ভাষায় বলা হয়- ১৮৮৬ সাল থেকে ১৮৯৩ সালের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী, অসম থেকে গুজরাট চারবার পরিভ্রমণ করেন। তিনি রাজদরবার থেকে দীনতম কুটিরে অবস্থান করে জেনেছেন, একদিকে বৈভব আর প্রাচুর্য আরেকদিকে দারিদ্র্যের জীর্ণতা। কারণ খুঁজে চিহ্নিত করেন ভারতবর্ষে রাজাদের উদাসীনতা গরিব মানুষকে দলিত ও নারীদের পদদলিত করেছে। তিনি পথ নির্দেশ দেন জাতির উন্নতি না হলে কোন প্রচেষ্টাই সার্থক হবে না। নাটকের একটি দৃশ্যে- রাজার নির্দেশে স্বামী বিবেকানন্দকে অভ্যর্থনা দেয়ার সময় ময়না ভাই যখন হিন্দী শেরের গান ‘প্রভু মেরে আবাওনা চিৎ না ধারো’ গেয়ে ওঠেন স্বামীজী তখন অসহনীয় বোধ করে উঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় ময়না ভাই বলে ওঠে- তুমি তো জ্ঞানী। তাহলে অজ্ঞানীর মতো কেন ভেদাভেদ নিজের মধ্যে পুষে রাখছ। পৃথিবী অনন্ত দুঃখে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, তুমি কী ঘুমিয়ে থাকতে পার! স্বামী বিবেকানন্দ বাইজীর কথা বুঝে অনুভবে এনে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে ‘মা’ ডাকে সম্বোধন করেন। নাটকে জগন্ময় ব্যানার্জীর গান তুমি অচিন্ত্য মহিম শান্ত ও তুমি শত সূর্যের অনল বন্ধু গান দুটির সঙ্গে অভিনয় নন্দন শিল্পের মতোই। নাটকে সকলের অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো। এর মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের চরিত্রে বিদ্যাপতি চক্রবর্তী, মাড়োয়ারি ও মুন্সি জগমোহনের চরিত্রে ডাঃ জগন্ময় ব্যানার্জী, রাজস্থানের রাজা মঙ্গল সিংয়ের চরিত্রে ড. মনোজ রায়, ময়না বাইয়ের চরিত্রে মধুমিতা চট্টরাজের অভিনয় দর্শক নন্দিত হয়েছে। নাটকের অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেন, সুরজিত দাস, শুভেন্দু সরকার, মহতাব হোসেন, চম্পক মুখার্জী, স্মৃতি কমল বিশ্বাস, পার্থ রায়, বিশ্বব্রত মুখার্জী, চন্দ্রিকা বিশ্বাস প্রমুখ। রনজয় ব্যানার্জীর আলোক সম্পাতে নাটকের গ্রন্থনা নাট্যরূপ সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন ডাঃ জগন্ময় ব্যানার্জী। স্বামী বিবেকানন্দ ও জগন্ময় ব্যানার্জীর লেখা গান নাটকে সংযোজিত হয়েছে। নাটকের আগে পন্ডিচেরির মীরা ড্যান্স একাডেমির পরিচালক উড়িশি নৃত্যের শিল্পী সঙ্গীতা দাশের ৫টি ক্লাসিক্যাল নৃত্য এতটাই মুগ্ধ করে যে দর্শক মুহুর্মুহু করতালিতে মিলনায়তন কাঁপিয়ে তোলে। পৌষের শীতের সন্ধ্যায় ভারতের শিউড়ির পরিবেশনায় এমন নাটক দর্শক শ্রোতাদের বিনোদনের উষ্ণতা এনে দেয়। অনুষ্ঠানের আগে শ্রীঅরবিন্দ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বগুড়ার সভাপতি বিপুল চন্দ্র রায় দর্শকদের ও ভারতীয় অভিনেতা নৃত্যশিল্পীদের অভিনন্দন জানান।
×