ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াছির আরাফাত সুজন

স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ শীতের ফল

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ শীতের ফল

এখন প্রকৃতিতে পৌষ মাস। পত্রবিহীন গাছপালা মনকে নিঃসঙ্গতার আড়ালে বেঁধে ফেলে। পৌষ মানেই কুয়াশা ভেজা সকাল। সবুজ পাতার গায়ে শিশিরের ফোঁটা। তার ওপর সোনালি রোদ। মাঠের সবুজ ঘাসে শিশিরে পা ভিজিয়ে হাঁটা। পৌষ মানে প্রকৃতির উপহার যা শুরু হয় ফল মূল দিয়ে। গ্রীষ্মকাল তার রসালো ফলের জন্য বেশি সমাদৃত। কিন্তু শীতকালই বা কম যায় কীসে? শীতকালেও পাওয়া যায় মজার মজার ফল। এসব ফলের যে শুধু স্বাদ চমৎকার তা নয়, রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য গুণাগুণও। ফলমূলের বাহারে শীতকাল খাবার-দাবার থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক কিংবা সেবা! সবকিছুতেই আমাদের কিছু না-কিছু বেছে নিতে হয় যার যার সাধ আর সাধ্যের মধ্যেই এই বেছে নেয়া। কিন্তু হাল দুনিয়ায় এই বেছে নেয়া নিয়েও কিছু কথা চালু হয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘তুমি যা কেন তুমি তাই’ কিংবা ‘তুমি যা খাও তুমি তাই’। আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি বাজারি ফলের রস খাব, নাকি সরাসরি ফলটাই কিনে খাব। চাইলেই সব সময় মেওয়া না পাওয়া গেলেও শীতের শুরুতেই হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে মৌসুমী ফল। শীতকালে ফলমূল, তরি-তরকারি স্বাদে-গুণে হয়ে ওঠে মনকাড়া। সবই যেন লাগে সুস্বাদু। খাবারের স্বাদে ও অনন্য করে তোলে। এ সময়ের ফলও তৃপ্তিদায়ক। আতাফল গাছে ফুল আসে গ্রীষ্মকালে, আর ফল শীতের আগমনে। মিষ্টি স্বাদের ফলটির আরেকটি জাত ভাই শরীফা বা সীতাফল। দারুণ খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ আতাফল। শীতের জনপ্রিয় ফল জলপাই। সবুজ রঙের ফলটি আচারের জন্য উপাদেয়। শীতকালে তাই জলপাই আচার বানানোর আধিক্য দেখা যায় ঘরে ঘরে। পানিফল শীতের গোড়াতেই বাজারে আসে। উলট কম্বল নামক ফলটির ফুলগুলো নিচের দিকে ঝুলে থাকে। ফলগুলো দেখার মতো। ফেটে গেলে আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এর বাকলের আঁশ দিয়ে পরচুলা তৈরি হয়। লটকনে ফুলের রঙ লালচে বেগুনী। ডালের শেষ মাথায় অনেকগুলো ফল একসঙ্গে ধরে। শীতকালীন ফলের উপকারিতা জলপাই জলপাই শীতকালীন একটি জনপ্রিয় ফল। এটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। জলপাইয়ের পাতা ও ফল দুটোই ভীষণ উপকারী। এটির রস থেকে যে তেল তৈরি হয়, সেটিরও রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। টক জাতীয় এ ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন-ই। এ ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে হৃৎপি-ের রক্তপ্রবাহ ভাল রাখে। এতে হৃৎপি- থেকে বেশি পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। এ ফলের আয়রন রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বাড়ায়। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশ জাতীয় উপাদান। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, কোলনের পাকস্থলির ক্যানসার দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এ পাতা ছেঁচে কাটা বা ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে কাটা দ্রুত শুকোয়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, মোটা হয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া পথ্য হিসেবে কাজ করে। কমলা : এই মৌসুমে প্রতিদিন একটা কমলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কমলার সমৃদ্ধ এ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ কমলালেবু সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ রোধে দারুণ কার্যকর। এ ছাড়াও ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও সহায়ক। কমলালেবু সম্বন্ধে এক নিঃশ্বাসেই এমন আরও অনেক কথা বলে ফেলা যায়। যে কোন সাধারণ চিকিৎসকই হয়ত আপনাকে এগুলো বলবেন। আপেল : প্রবাদ আছে, যদি প্রতিদিন একটি আপেল খাও, ডাক্তার দূরে থাকবে। অর্থাৎ দিনে একটি আপেল খেলে সুস্থ থাকা যায়। যারা অল্পে রেগে যায়, অনিদ্রায় ভোগে তারা প্রতিদিন একটি লাল আপেল খোসাসহ খেলে সমস্যা চলে যাবে। শিশুর হজমশক্তি কমে গেলে লাল আপেল বেটে রস খাওয়ালে বদহজম ও হজমশক্তিহীনতা দূর হবে। আপেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দূর হয়। নিয়মিত আপেল খেলে কোলন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। কুল : শীতের জনপ্রিয় ফল কুল। কুল নানা জাতের হয়। যেমন নারকেল কুল, আপেল কুল, বাউ কুল ইত্যাদি। সব কুলই উপকারী। ফোঁড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ, প্রদহ, রক্ত আমাশায়, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা কুল, কুলের পাতা, ছাল সমাধান করতে পারে। সফেদা : সফেদা দেখতে খুব একটা সুন্দর নয়, কিন্তু এর মতো মিষ্টি স্বাদ এবং সুগন্ধযুক্ত ফল বোধ হয় বাংলাদেশে আর নেই। সফেদা নানা গুণে সমৃদ্ধ। অপুষ্টি, পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি, হার্টের দুর্বলতা, প্রসবজনিত দুর্বলতা, মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা পাকা সফেদা খেলে সমাধান হয়। ডালিম : আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তিন ধরনের ডালিমের উল্লেখ পাওয়া যায়- মধুর ডালিম, কষায় ডালিম ও টক ডালিম। মধুর ডালিমের দানা বেশি লাল ও রসালো এবং অধিক উপকারী। আমাশয়, হৃদরোগ, লিভার বৃদ্ধি, অনিদ্রা, অজীর্ণ, রক্তপিত্ত, অরুচি, কৃমি, শ্বেতপ্রদহ, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ডালিম উপকারী। আমলকী : শীতের ফলগুলোর মধ্যে আমলকী আরেকটি সুস্বাদু ফল। আমলকীকে বলা হয় ভিটামিন ‘সি’-এর রাজা। আর এই ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের সুরক্ষা, মাঢ়ি মজবুত করতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
×